Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Home Decor

স্বপ্নের ঘরবাড়ি

হালকা কাজের আসবাব, হ্যান্ডমেড ফ্যাব্রিক আর মেক্সিকান টাইলসে রূপ খুলেছে এ অন্দরের। তার মাঝে একটু একটু করে নিজেদের স্বপ্ন বুনে দিয়েছেন বাড়ির সদস্যরাহালকা কাজের আসবাব, হ্যান্ডমেড ফ্যাব্রিক আর মেক্সিকান টাইলসে রূপ খুলেছে এ অন্দরের। তার মাঝে একটু একটু করে নিজেদের স্বপ্ন বুনে দিয়েছেন বাড়ির সদস্যরা

বৈঠকি মেজাজে

বৈঠকি মেজাজে

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ০২:১৫
Share: Save:

প্রত্যেকটা বাড়ির রূপ-রস-গন্ধ আলাদা। ইট-পাথরের বাড়ি প্রাণ পায় সেই বাড়ির সদস্যদের যত্নে ও স্পর্শে। তৈরি হয় নতুন গল্প। এ বাড়ির কাহিনিও অনেকটা তেমনই। শহরের এক বহুতলের কুড়িতলার এই ফ্ল্যাটের গৃহকর্ত্রী ঋজুলা দত্ত রায় পেশায় ফ্যাশন ডিজ়াইনার। তাই নিজের ডিজ়াইনে ভরসা করেই সাজিয়ে ফেলেছেন ২৪০০ বর্গফুটের আনাচকানাচ। আর স্বামী পদ্মনাভ দাশগুপ্তর গৃহসজ্জার পড়াশোনাও বেশ কাজে লেগেছে স্পেসের যথোপযুক্ত ব্যবহারে।

প্রথম থেকেই কর্তা-গিন্নি দু’জনে ঠিক করে নেন যে, বাড়ি তাঁরা নিজেরাই সাজাবেন। ফ্ল্যাট বুক করেই শুরু হয় পরিকল্পনা, আলোচনা, মনের মতো জিনিসের খোঁজ। তবে দু’জনের মতের মিলও এ বাড়ি সাজানোর অন্যতম শর্ত ছিল। ঋজুলার কথায়, ‘‘আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম যে, ভারী ভারী আসবাবে ফ্ল্যাট ভারাক্রান্ত করব না। স্পেস আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল! আর এই ফ্ল্যাটে খুব আলো-হাওয়া। কিন্তু রোদের তাপ নেই। তাই আসবাব বাছার সময়েও অনেক ভেবেছি। বারান্দার দিকটা কোনও ভাবে ব্লক করতে চাইনি। ডাইনিং টেবলের চেয়ারগুলোও কম হাইটের রেখেছি, যাতে চোখে বাধা সৃষ্টি না করে।’’ সিলিং হাইট যাতে কম না দেখায়, তাই বাড়িতে ফল্স সিলিংও করানো নেই পুরোটা। সব ঘরেই দেওয়াল প্রায় সাদা। তাতেও স্পেস বেশি মনে হয়।

কোনও সুন্দর জিনিস দেখলেই, তা দিয়ে ঘর সাজানোর কথা ভাবেননি ঋজুলা। বরং নিজের বাড়ির জন্য কী প্রয়োজন সেটা ভেবেছেন। তার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জোগাড় করেছেন আসবাব, টাইলস, দেওয়ালসজ্জার সামগ্রী। ‘‘মেক্সিকান টালাভেরা টাইলস আমার খুব পছন্দের। কিন্তু সারা কলকাতা ঘুরেও তার দেখা পেলাম না। বরের কাজের সূত্রে খোঁজ পেলাম গুরুগ্রামের এক ডিলারের। তাঁকে ডিজ়াইন দিলেই সে রকম টাইলস বানিয়ে দেন। ব্যস! ইন্টারনেট ঘেঁটে পড়াশোনা করে প্রায় আট রকম ডিজ়াইন বানিয়ে পাঠালাম। মাসখানেকের মধ্যেই পেয়ে গেলাম টাইলস। সেটা দিয়ে করিডোরটা করেছি। আরও কিছু অতিরিক্ত টাইলস ছিল। আয়নার পাশে, খাটের কিছু অংশে, ডাইনিং টেবলের মাঝেও রানারের মতো ব্যবহার করেছি। একটা প্লান্টারও বানিয়েছি ওই টাইলস দিয়ে,’’ ঋজুলার মুখে প্রশান্তির হাসি।

ছিমছাম ডাইনিং টেবল

সার জায়গাও বেশ ছড়ানো। একটানা লম্বা সোফা বেছে নিয়েছেন তাঁরা বৈঠকখানার সাজে। বন্ধুবৎসল পরিবারে যাতায়াত লেগেই থাকে লোকজনের। অতিথি সমাগমে এই সোফায় বেশ ছড়িয়ে বসে আড্ডা জমে ওঠে বৈঠকি মেজাজে। ফ্যাব্রিকও হালকা রঙের। বরং কুশন কভারে জমকালো বিদেশি মোটিফ রেখেছেন। আর সোফার পাশে হাতল না রেখে সাজানো হয়েছে লো সাইড টেবল দিয়ে, যাতে গল্পগাছার মাঝে চায়ের কাপ, ‘টা’য়ের বাটি রাখা যায়। সেই সাজেও ব্রেক আনতে হাই-ব্যাক আকাশি চেয়ার রেখেছেন ঘরের এক দিকে।

সোফার পিছনের দেওয়াল কাঠের কাজ করা ব্লকে সাজানো। আর অন্য দিকে রয়েছে ভার্টিকাল প্লান্টার। গাছও যে ভীষণ প্রিয় এ বাড়ির সদস্যদের। তবে দেওয়াল সজ্জার কিছু কাজ নিজে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ঋজুলা। যেমন ডাইনিংয়ের এক পাশের দেওয়াল সাজানো নিজেদের ছবির কমিক স্ট্রিপ দিয়ে। ‘‘রঙিন ফ্রেম কিনতে গিয়ে দেখলাম অনেক দাম। তাই কাঠের ফ্রেম কিনে নিজেই রং করে নিলাম। আর কমিক এফেক্ট দিলাম নিজেদের বেড়ানোর ছবিতে। সেটা দিয়েই সাজিয়ে ফেললাম এই দেওয়াল। খুব বেশি খরচও হল না। ফলে ছবি বা দেওয়াল সজ্জা পাল্টাতেও পারব যখন-তখন। মনে হবে না অনেক খরচ হয়ে গিয়েছে,’’ বললেন গৃহকর্ত্রী।

তাঁদের ছেলে ধৃশিতের ঘরের দেওয়াল সাজাতে আবার কৃত্রিম জানালা কিনেছেন বেঙ্গালুরুর এক শিল্পীর কাছ থেকে। সাধারণত তার মধ্যে আয়না বসানো থাকে। কিন্তু কালীঘাটের পুরনো পাড়া ছেড়ে নতুন ফ্ল্যাটে আসায় ধৃশিতের মন খুব খারাপ ছিল। ছোট থেকে বড় হওয়া যে পাড়ায়, সেখানে বন্ধুরাই ছিল ভাইবোনের মতো। ‘‘ছেলে বলেছিল, ওর বন্ধুদের জায়গাও যেন থাকে এই ফ্ল্যাটে। তাই এই জানালার মধ্যে ফ্রেম বসিয়ে ওর বন্ধুদের ছবি লাগিয়ে দিয়েছি। এ বার শয়নে, স্বপনে জাগরণে ওর বন্ধুরা সঙ্গে থাকবে,’’ সহাস্য উত্তর গৃহকর্ত্রীর।

বড়সড় ভারী কাজের জিনিসের চেয়ে ছোট শো-পিস বা আর্টিফ্যাক্টস সংগ্রহে রাখতেই বেশি ভালবাসেন তাঁরা। ফ্ল্যাটে ঢোকার মুখেই রয়েছে ছোট একটা লাইটহাউস। তার মধ্যে চাবি রাখার ব্যবস্থা। মানবীর মুখের অবয়বে প্লান্টার, ছোট পেঁচা, পাখি, গামবুটস দিয়ে সেজে উঠেছে অন্দর। তার মধ্যে ঋজুলার নিজের সূচিশিল্পও জায়গা করে নিয়েছে। ফ্ল্যাটে ঢোকার মুখেই নেমপ্লেটের আদলে ফ্রেমের মধ্যে সুতোর টানে ফুটে উঠেছে তাঁদের স্বপ্নের বাড়ি আর নিজেদের পরিচয়। বেরোনোর সময়েও চোখে পড়ে সেই বাড়ির নকশা। ঠিক যেন গল্পের বই, যার একপাশে ঝুলছে তাঁদের এই স্বপ্নের ফ্ল্যাটের চাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home Decor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE