Advertisement
E-Paper

অন্তঃপুরের এলোমেলো তান

বিচিত্র ধরনের আসবাব আর সাজ-সরঞ্জামগুলি সূক্ষ্ম সমন্বয়ে একত্রে গুছিয়ে রাখতে পারলে জমকালো ও শিল্পিত অন্দরসজ্জা তৈরি হয়। একেই বলে ‘একলেক্টিক’ গৃহকোণ বিচিত্র ধরনের আসবাব আর সাজ-সরঞ্জামগুলি সূক্ষ্ম সমন্বয়ে একত্রে গুছিয়ে রাখতে পারলে জমকালো ও শিল্পিত অন্দরসজ্জা তৈরি হয়।

চিরশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১

ইরফান খান যেমন আলাদা ঘরানার অভিনেতা ছিলেন, তেমনই মুম্বইয়ে তাঁর বসতবাড়িটিও ভিন্ন গোত্রের। বসার ঘরে ঘন নীল জলপাত্র, ঠিক যেন ছোট্ট একটি পুকুর। পাশেই উত্তর ভারতীয় কাঠের খাটিয়া, সঙ্গে রাজস্থানি কাজের বেতের দোলনা। কাছেই আধুনিক ডিজ়াইনের আরামদায়ক সোফা। সেন্টার টেবল ও দেওয়ালে ইরফান-সুতপার সংগৃহীত নানা দেশের জনজাতির হাতের কাজের শিল্পবস্তু। ডাইনিং টেবল ও চেয়ারগুলি অত্যাধুনিক। শুধু গৃহকর্তা ও কর্ত্রীর বসার চেয়ার দু’টি ভিক্টোরিয়ান আমলের সিংহাসনের মতো দেখতে। পুরো বাড়ির লে-আউট, জানালা-দরজাগুলি ভীষণই হাল আমলের। তার মধ্যেই ভারতীয় নকশার আসবাব ও নানা দেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পবস্তুগুলি সুন্দর সমন্বয়ে সাজানো।

এ ভাবে, বিপরীতধর্মী অথবা ভিন্ন শৈলী ও রঙের আসবাব ও উপকরণগুলিকে পাশাপাশি রেখে অন্দরসজ্জায় বর্ণময় স্টেটমেন্ট তৈরি করাকেই ‘একলেক্টিক হোম ডেকর’ বলে। এই রীতিতে নানা প্রদেশ বা দেশের অন্দরসাজ একসঙ্গে থাকতে পারে। আবার বিভিন্ন আমলের শৈলীও পাশাপাশি ঠাঁই পেতে পারে। ইরফানের বাড়িতে যেমন ফিউচারিস্টিক ডিজ়াইনের কাচের জানালার পাশেই মোগল আমলের ময়ূরনাচের ছবি সাজানো রয়েছে। এমন গৃহসজ্জা দেখতে জমকালো হয়। নিজের বাড়িতে এমন সাজ চাইলে, একটু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, পরিকল্পনা ছাড়া বিভিন্ন থিমের সমাহারের চেষ্টা করলে, সেটা জবড়জং দেখাতে পারে। তা ছাড়া, একলেক্টিক হোম ডেকর মানে কিন্তু ফিউশন বা ‘মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ’ নয়। এই স্টাইলে বিচিত্র ধরনের শৈলীকে হারমনি বা এক সুরে বেঁধে রাখা হয়। তাই কাজটা একটু শক্ত। সেটা যাতে আপনার পক্ষে সহজ হয়, তাই কয়েকটা কৌশল সাজিয়ে দেওয়া হল।

দেওয়ালের রং ও ঢং

নিউট্রাল প্যাস্টেল শেডের রঙে দেওয়াল রাঙিয়ে নিন। ঘরের তিন দেওয়ালে ওই রংটি ব্যবহার করে, একটি দেওয়াল বা সিলিং ওই শেডেরই কোনও গাঢ় রঙে রাঙিয়ে নিন। সেখানে অল্পবিস্তর আর্ট-পেন্ট বা টেক্সচার ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ওয়ালপেপার ব্যবহার করবেন না। অর্থাৎ ঘরের রং আকাশি বাছলে, একটি দেওয়ালে ময়ূরকণ্ঠী রং করুন। সেই দেওয়ালে কোনও হালকা ডিজ়াইন বা ভিন্ন টেক্সচার (দেওয়ালের উপরিতল অসমান হবে, কিন্তু চোখ টানবে) রাখতে পারেন। বাড়ির অন্য ঘরেও হালকা-গাঢ় রঙের খেলা রাখুন। আরামদায়ক হালকা রঙের ঘরের মধ্যে বিভিন্ন গোত্রের আসবাব সাজালে, একলেক্টিক স্টাইল বেশি ফুটবে। যে কোনও একটি রঙের ওয়ালকালার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করবেন সব ঘরে। এতেই ঘরের সাজে সামঞ্জস্য রাখার কাজটা হয়ে যাবে।

আসবাবের বাছবিচার

নতুন, পুরনো, ধ্রুপদী— সব রকম আসবাব মিলিয়েমিশিয়ে ঘর সাজান। ধরুন, ড্রেসিং রুমে একটি জমিদারি কেতার বড় আলমারি রয়েছে। পাশে ইউরোপিয়ান স্টাইলের দেওয়াল আয়না রাখুন। কাছাকাছি সময়ের অথচ দুই দেশের এই গৃহ-উপকরণ সাজঘরটিকে আভিজাত্যে ভরিয়ে দেবে। আয়নার একপাশে প্যানেলড ড্রেসিং টেবল রাখুন। আলমারির রং অথবা মেঝের টাইলসের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ড্রেসিং চেয়ার বাছুন।

বৈঠকখানায় আধুনিক জিয়োমেট্রিক প্যাটার্নের কফি টেবলের পাশে বসান সম্ভ্রান্ত ইজ়িচেয়ার। পাশে রাখুন জ়িগজ়্যাগ নকশার বুকশেলফ। রিক্লাইনার সোফা রাখলে, পাশে বেতের কেদারা রাখুন। মিল রাখুন কফি টেবলের পায়া ও ইজ়িচেয়ারের কাঠের ফ্রেমে। রিক্লাইনার সোফার ফ্যাব্রিকেরই গদি কিনে বেতের চেয়ারে রেখে দিন। ওই ফ্যাব্রিকের রঙের সাইড টেবল রাখুন। বৈচিত্রের মধ্যেও মিলমিশ হয়ে যাবে।

ডাইনিং স্পেস একলেক্টিক এক্সপেরিমেন্টের সেরা জায়গা। স্টোন ফিনিশড টেবল হলে চেয়ার বাছুন কাঠের। দু’-তিনটি চেয়ারের মাঝে বা উলটো দিকে একটি ভিন্ন চরিত্রের চেয়ার রেখে দিন। চার-পাঁচটা একই উচ্চতার চেয়ার থাকুক, তার পর একটা বড়সড় গদি আঁটা ফ্রেঞ্চ চেয়ার রাখুন। কাঠের টেবলের জুড়ি করুন মেটালিক লুকের চেয়ার। টেবলের মাঝখানে ও চেয়ারের পিঠের অংশে মোটা কাচ বসাতে পারেন। বক্স-টুল, বিন ব্যাগ, কার্ড টেবল ইত্যাদি ইউটিলিটি ফার্নিচার ছড়িয়ে রাখা যায়। এতে বাড়ির মুড ‘রিল্যাক্সড’ থাকবে।

আলো আর আপহোলস্ট্রি

আপহোলস্ট্রিতে ‘বোহেমিয়ান’ ভাব ধরে রাখতে ‘কেয়ারফুলি শ্যাবি’ চেহারার ফ্লোর-কভার অর্থাৎ দড়ি দিয়ে বোনা কার্পেট, মোটা রাগস বা রঙিন গালিচা বিছিয়ে রাখুন। এথনিক ডিজ়াইন ও পপস্টারের ছবি দেওয়া ‘শিক’ কভার পরানো কুশন পাশাপাশি ছড়িয়ে রাখুন। ডাবল বা ট্রিপল লেয়ারড কার্টেনস বা ব্লাইন্ডস বেছে নিন। পেনডেন্ট লাইট অসমান উচ্চতার হয় বলে এগুলি ব্যবহার করলে বাড়ির রকমারি মেজাজটি বজায় থাকবে।

ডিসপ্লে গ্যালারি

একাধিক বিষমাকৃতি ফ্রেমের মধ্যে অলংকরণ বা আলোকচিত্র সাজান। ছবি ও ফোটোগ্রাফ পাশাপাশি রাখলে খেয়াল রাখবেন ‘টোন’ যেন এক ধাঁচের হয়। যে ঘরের দেওয়াল ছবিতে ভরাবেন, সেখানে ট্রাইবাল হ্যাং-আর্ট রাখতে পারেন। কিন্তু সে ঘরেই আর্ট শোকেসটি রাখবেন না। বরং যে ঘরে গ্যালারিটি রাখছেন, সেখানে টেবলের উপরে বা মাটিতে মুরাল ও শোপিস রাখতে পারেন। আর্ট রুম বা পিকচার গ্যালারিতে ফোকাস পয়েন্ট রাখুন। যেমন, অনেক ছবির মাঝে একটি ডার্ট বোর্ড বা শো-কেসের পাশেই রয়েছে ফায়ারপ্লেস।

এলোমেলো সৌন্দর্য আনতে ঘর আসবাব বা শোপিসে ভরিয়ে ফেলবেন না যেন! ঘরের কোনও অংশ ফাঁকা রেখে দিন। জমজমাট আয়োজন ও নিঃসঙ্গতার মাপসই বৈপরীত্যে নাটকীয়তা তৈরি হবে অন্দরসজ্জায়। এই চাপা ও মাপা সাম্যই একলেক্টিক হোম ডেকরের প্রধান শর্ত!

Home Decor Eclectic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy