ব্যস্ত সকালে ঘুমের রেশ কিংবা দিন শেষে ক্লান্তি কাটাতে একপ্রস্ত স্নান যথেষ্ট। আর তা-ও যদি হয় শাওয়ারে! স্নানঘরে শাওয়ার কার না পছন্দ! মাথার উপর থেকে বারিধারা বৃষ্টির মতো নেমে আসবে, সে শখ অনেকেরই থাকে। তবে চিরপরিচিত ওয়াল মাউন্টেড বা হ্যান্ডহেল্ড টেলিফোন শাওয়ার এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে। বদলে এসেছে মেজ়, মিস্ট, এয়ার, রেন... অত্যাধুনিক শাওয়ার। নাম অনুযায়ী বদলে যায় তার নজ়লের ডিজ়াইন, সুযোগসুবিধা। আধুনিকতার সেই মোড়কে স্নানঘরকে মুড়ে নেওয়ার আগে বুঝে নিন, কোন ধরনের শাওয়ার আপনার জন্য উপযুক্ত।
স্নানঘরে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা
শাওয়ার নজ়লের ডিজ়াইন বদলে স্নানঘরেই নামাতে পারেন ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। আবার কখনও কুয়াশায় ঢেকে ফেলতে পারেন চারপাশ—
- বডি সারাউন্ড জেট: কিউবিকলে এই শাওয়ার লাগাতে হয়। বিভিন্ন দিকে ও উচ্চতায় একাধিক জেট শাওয়ার হেড থাকে। ফুল বডি মাসাজ, পেশির আরাম হয়। ইনটেন্স ওয়র্কআউটের শেষে হাইড্রোথেরাপির সুবিধা মেলে। তবে এতে জলের খরচ বেশি, ইনস্টল করাও খরচসাপেক্ষ।
- ওয়াটারফল শাওয়ার: ব্যক্তির পরিধির চেয়ে বেশ খানিকটা বড় হয় এই শাওয়ার স্লট, যেখান থেকে ঝর্নার মতো জল পড়ে।
- ওভারহেড রেন: বড় স্নানঘর হলে তার ছাদ জুড়ে এটি লাগানো যায়। মিনিমালিস্ট ডিজ়াইনের এই শাওয়ারের সঙ্গে থাকে এলইডি লাইট। এতে জলের ধারার গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই ইলশেগুঁড়ি হোক কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি, স্নানঘরেই তার আমেজ পাওয়া যাবে।
- মিস্ট বা ফগ: ছোট্ট নজ়ল থেকে জল কুয়াশার মতো মিহি কণায় ছিটকে আসে। এ শাওয়ারে হালকা গরম জলে স্নান করলে স্পা-এর অনুভূতি পাওয়া যায়। এতে জল কম নষ্ট হয়। তবে পুরোদমে স্নান করতে চাইলে তেমন আরাম হবে না।
- হাইব্রিড শাওয়ার: একই সঙ্গে রেনফল, হ্যান্ডহেল্ড, স্টিম, বডি জেট সব সুবিধা রয়েছে। লাগাতে বড় বাথরুম প্রয়োজন।
জল সরবরাহ, প্রযুক্তি অনুযায়ীও বিভিন্ন ধরনের শাওয়ার হয়—
ইলেকট্রিক
ছোট বা মাঝারি আকারের স্নানঘর, যেখানে গিজ়ার নেই, সেখানে লাগাতে পারেন। বিদ্যুতের সাহায্যে চটজলদি জল গরম করে নিতে পারে এই শাওয়ার। আবার শুধু ঠান্ডা জলে স্নান করতে চাইলে, তা-ও সম্ভব।
স্টিম
এর জন্য কিউবিকল প্রয়োজন। জল থেকে বাষ্প তৈরি করে এই শাওয়ার বাড়িতেই সনা বাথ-এর অনুভূতি দেয়। উচ্চ তাপে শরীর ও পেশিসমূহ শিথিল হয়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। ত্বকের জন্যও এই শাওয়ার ভাল। এই শাওয়ার ইনস্টলেশনের এককালীন খরচ অনেকটাই। তবে সালঁ, পার্লার বা জিমে স্টিম শাওয়ার নেওয়ার খরচের তুলনায় লাভজনক।
থার্মোস্ট্যাটিক
ডিজিটাল ডিসপ্লে বা সেন্সরের মাধ্যমে জলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আগে থেকে তাপমাত্রা নির্দিষ্ট করে দিলে স্নানের সময়ে ঠান্ডা-গরম মিশিয়েই জল বেরোয়।
এলইডি লাইট ও ক্রোমোথেরাপি
শাওয়ার হেডে বিশেষ এলইডি আলোর ব্যবস্থা থাকে, যার রং জলের তাপমাত্রা ও গতির সঙ্গে বদলে যায়। জল থেকেই তৈরি হওয়া বিদ্যুতে এই আলো জ্বলে। বাচ্চাদের কাছে আকর্ষক এই শাওয়ার। প্রতিটি রঙের আলো আলাদা ধরনের হিলিং এফেক্টও দেয়। স্ট্রেস কমিয়ে মনমেজাজ ভাল করে। তা ছাড়া, আলোর রং দেখে জলের তাপমাত্রা বোঝা যাওয়ায় বিপদের সম্ভাবনা কমে। তবে মিউজ়িক্যাল শাওয়ারের মতোই আলো একবার খারাপ হলে তা সারানো বা প্রতিস্থাপনের খরচ অনেক।
আকর্ষক কিছু শাওয়ার
- স্মার্ট ডিজিটাল শাওয়ার: ঘড়ি, আংটি, আলো, পাখা সবই যখন স্মার্ট, তখন শাওয়ারই বা পিছিয়ে থাকে কেন! বাথরুমে লাগিয়ে নিতে পারেন রিমোট, টাচ প্যানেল, মোবাইল অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত শাওয়ার। ব্লুটুথ ও মোবাইলের মাধ্যমে সেখানে জলের তাপমাত্রা, গতি, আলো— সমস্ত সুবিধা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। কতক্ষণ স্নান করতে চান, সে সময়ও আগেভাগে ঠিক করে দিলে নির্দিষ্ট সময় পরে শাওয়ার নিজেই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এ ধরনের শাওয়ারের ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ দরকার। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও সমস্যা হতে পারে।
- অ্যারোমাথেরাপি শাওয়ার: কিছু শাওয়ার নজ়লে জলের সঙ্গে ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপ্টাস, স্যান্ডেলউডের মতো এসেনশিয়াল অয়েল মেশানোর সুবিধা থাকে, যা বাড়িতেই স্পা-এর অনুভূতি দেয়। ক্লান্তি বা মাথা ব্যথা, নাক বন্ধের সমস্যায় সুবিধা দেয় এই শাওয়ার।
ইকো-ফ্রেন্ডলি শাওয়ার
এই শাওয়ারে বিশেষ ধরনের নজ়ল ও ফ্লো কন্ট্রোলার থাকে, যাতে জলের খরচ ৩০–৫০ শতাংশ কমানো যায়। পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি এটি টেকসই। জলের চাপ যেখানে কম, সেখানেও এই শাওয়ার ভাল কাজ করে। তবে প্রাথমিক ভাবে এর দাম বেশি মনে হতে পারে।
অত্যাধুনিক কী কী ফিচার্সথাকছে শুধু তা দেখে নয়, বাথরুমের আয়তন, জলের চাপ, দৈনন্দিন কতটা জল খরচ সম্ভব, পরিবারের কতজন সদস্য তা ব্যবহার করবেন, বাড়ির সদস্যরা টেক-স্যাভি কি না,আদৌ অত্যাধুনিক সমস্ত সুযোগসুবিধের প্রয়োজন আছে কি না, এ সব বিচার-বিবেচনা করে তবেই শাওয়ার লাগান।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)