Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আশঙ্কা

আটটি দেশে বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ যক্ষ্মা রোগীর বাস। দেশগুলোর মধ্যে ভারতও আছে। ২০১৭ সালে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ২৩ লক্ষ বাচ্চা মারা গিয়েছে। নতুন যক্ষ্মা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। নতুন সমস্যা যক্ষ্মার জীবাণুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা। বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের আগে রোগ নিয়ে আলোচনায় আনন্দবাজারআটটি দেশে বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ যক্ষ্মা রোগীর বাস। দেশগুলোর মধ্যে ভারতও আছে। ২০১৭ সালে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ২৩ লক্ষ বাচ্চা মারা গিয়েছে। নতুন যক্ষ্মা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। নতুন সমস্যা যক্ষ্মার জীবাণুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা। বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের আগে রোগ নিয়ে আলোচনায় আনন্দবাজার

চিকিৎসা: চন্দ্রকোনা রোডে যক্ষ্মা হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসা: চন্দ্রকোনা রোডে যক্ষ্মা হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৫
Share: Save:

মার্চ মাসের ২৪ তারিখকে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটিতে বিশ্ব জুড়ে যক্ষ্মা বিষয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা প্রচার করা হয়। কেন এই দিনটিকেই বাছা হল? এর একটি ইতিহাস রয়েছে। ১৮৮২ সালের এই দিনটিতেই বিজ্ঞানী রবার্ট কখ্‌ জানিয়েছিলেন, তিনি যক্ষ্মার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেছেন। তাঁর এই আবিষ্কার যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

জীবাণু আবিষ্কার প্রায় ২০০ বছর হলেও বিশ্ব জুড়ে যক্ষ্মা এখনও মানুষের প্রাণ কাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, মারাত্মক সংক্রামক যক্ষ্মা এখনও প্রতিদিন প্রায় ৪৫০০ জনের প্রাণ কাড়ছে। এ ছাড়াও বিশ্বে ৩০ হাজার জন প্রতিদিন রোগাক্রান্ত হচ্ছেন। তবে আশার কথা, এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এবং সারানোও সম্ভব। যক্ষ্মার বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে লড়াই শুরু হয়েছে। সেই লড়াইয়ের ফলও মিলেছে। সেই লড়াইয়ে ২০০০ সাল থেকে প্রায় পাঁচ কোটি ৪০ লক্ষ রোগীর প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে। কমানো গিয়েছে ৪২ শতাংশ মৃত্যুর হার।

যক্ষ্মার বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে লড়াইয়ে সামিল হয়েছে বিভিন্ন দেশ। এই রোগ এবং রোগী সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখা দরকার। যক্ষ্মা রোগের জন্য দায়ী মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস। এই জীবাণু সাধারণত ফুসফুসে আক্রমণ করে। রোগের জীবাণু ছড়ায় বাতাসের মাধ্যমে। এক আক্রান্ত থেকে আরেক আক্রান্তের শরীরে। আক্রান্ত কাশলে, হাঁচলে বা থুতু ফেললে জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে যায়। এই রোগের জীবাণুর সংক্রমণের ক্ষমতা খুবই বেশি। বাতাসে ছড়িয়ে পড়া জীবাণুর কিছু যদি কোনও সুস্থ মানুষের শরীরে শ্বাসের মাধ্যমে ঢোকে তাহলে তিনি আক্রান্ত হবেন। একটি আশঙ্কাজনক তথ্য হল, বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ মানুষের শরীরে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু সুপ্ত থাকে। এর মানে হল, ওই মানুষগুলো জীবাণুতে আক্রান্ত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁরা অসুস্থ হননি। এবং এই রোগ তাঁদের মাধ্যমে ছড়ায়নি। এই আক্রান্তদের ৫-১৫ শতাংশের সারা জীবন ধরেই রোগের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যাঁরা এইচআইভি আক্রান্ত, অপুষ্টির শিকার বা ডায়াবিটিস রয়েছে তাঁদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তামাক সেবনকারীদেরও অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

যক্ষ্মার একটি মুশকিল রয়েছে। রোগের লক্ষণগুলো বেশ কয়েক মাস খুবই কম থাকে। এই কারণেই চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়ে যায়। আর অন্যের মধ্যেও ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। একজন যক্ষ্মা রোগী অন্তত ১০-১৫ জনকে সংক্রামিত করতে পারেন। ঠিক মতো চিকিৎসা না হলে এইচআইভি আক্রান্ত নন এমন ৪৫ শতাংশ রোগীর যক্ষ্মায় মৃত্যু হতে পারে। এইচআইভি আক্রান্তদের প্রায় সকলেই ঠিক মতো চিকিৎসা না পেলে মারা যেতে পারেন।

যক্ষ্মায় বিপদ বেশি কাদের? যক্ষ্মা সাধারণত প্রাপ্ত বয়স্কদেরই হয়। তাঁরা যখন সবথেকে বেশি ক্রিয়াশীল থাকেন তখনই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তবে সব বয়সিদেরই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। ২০১৭ সালে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ১০ লক্ষ বাচ্চা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে। মারা গিয়েছে২৩ লক্ষ বাচ্চা। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ নতুন যক্ষ্মা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এই রোগীরা ৩০টি দেশের। যে দেশগুলোয় এই রোগীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে আটটি দেশে বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ যক্ষ্মা রোগীর বাস। দেশগুলোর মধ্যে ভারত এবং তার দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশ রয়েছে।

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ কী? কী ভাবে রোগ নির্ধারণ করা হয়? সাধারণ লক্ষণ হল, কাশির সঙ্গে শ্লেষা এবং রক্ত ওঠা। সেই সঙ্গে বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া, রাতে ঘাম হওয়া ইত্যাদি। বেশির ভাগ দেশ এখনও পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে চলে পদ্ধতি মেনে থুতু পরীক্ষা করে দেখে। থুতুর নমুনা অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করে দেখা হয় তাতে যক্ষ্মার জীবাণু রয়েছে কিনা। এর একটাই অসুবিধে। এই পদ্ধতিতে রোগের অর্ধেক জীবাণু ধরা পড়ে। ২০১০ সাল থেকে নতুন পরীক্ষা চালু হয়েছে। এক্সপার্ট এমটিবি/আরআইএফ নামে নতুন পরীভা কার্যকরী। বাচ্চাদের যক্ষ্মা নির্ণয় বেশ কঠিন কাজ। এই পদ্ধতিতে বাচ্চাদের যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে সুবিধে হয়। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, যক্ষ্মার রোগের চিকিৎসা রয়েছে। ছ’মাসের কোর্স রয়েছে। কিন্তু এই রোগের চিকিৎসায় স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়মিত নজরদারি ও সহায়তা প্রয়োজন। এই সহায়তা ছাড়া চিকিৎসা বেশ কঠিন। তাতে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সঠিক চিকিৎসা এবং ওষুধে বেশির ভাগ যক্ষ্মা রোগীই সেরে উঠেছেন।

বিশ্বে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় বর্তমানে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটি হল, যক্ষ্মার জীবাণুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা। এমডিআর-টিবি (মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি) আইসোনিয়াজিদ এবং রিফামপিসিন ওষুধেও কাবু হয় না। অথচ এই রোগের সবথেকে শক্তিশালী দু’টি ওষুধ এই দু’টো। ঠিক মতো ওষুধ না খাওয়া এবং নিম্নমানের ওষুধ খাওয়ার কারণে এই রোগ ছড়ায়। তাই যক্ষ্মা রোগে নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়া খুবই দরকার।

চলতি বছরের যক্ষ্মা দিবসের থিম হল ‘এটাই সময়’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও তার সহযোগী সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের লক্ষ্যই হল, ‘খোঁজা, সকলের চিকিৎসা, যক্ষ্মা নির্মূল করা’। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা মেলে। দু’সপ্তাহের বেশি কাশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সরকারি হাসপাতালগুলোয় যক্ষ্মার চিকিৎসা মেলে। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ মেনে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন। ওষুধ খাওয়ার অনিয়মেই শক্তিশালী হয় নতুন ধরনের যক্ষ্মার জীবাণু। রোগ লুকনো অনুচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

World TB Day Tuberculosis Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE