Advertisement
E-Paper

শিল্প যদি ধাক্কা না দিল, তবে কি তা শিল্প হল? আলোচনা বসল সিমা গ্যালারিতে

যে কাজ মনকে নাড়া দেয় না, ভাবায় না, তা কি প্রকৃত অর্থে শিল্প? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আলোচনা সভার আয়োজন হয়েছিল বালিগঞ্জের সিমা আর্ট গ্যালারিতে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০৫
সিমায় শিল্প নিয়ে আলোচনাসভায় উপস্থিত  অধ্যাপক নীলাদ্রিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় এবং অধ্যাপক রীতেন্দ্র রায়।

সিমায় শিল্প নিয়ে আলোচনাসভায় উপস্থিত অধ্যাপক নীলাদ্রিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় এবং অধ্যাপক রীতেন্দ্র রায়। নিজস্ব চিত্র।

প্রর্দশনীতে গেলেন। ছবি দেখলেন। দৃশ্যগোচর হল নানা শিল্পকর্ম। কোনওটি ভাল লাগল। কোনওটি দৃশ্যত ভাল লাগলেও, বোধগম্য হল না। কেউ তা নিয়ে বিশদে ভাবলেন। কেউ আবার উদাসীন হয়ে এড়িয়ে গেলেন। কিন্তু যে শিল্প মনকে ঝাঁকুনি দেয় না বা চিন্তায় ফেলে না, তা কি প্রকৃত অর্থে শিল্প? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল বালিগঞ্জের সিমা গ্যালারিতে। বিষয়— ‘ইজ় ইট আর্ট? ইফ ইট ডাজ় নট ডিস্টার্ব?’ আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-অধ্যাপক রীতেন্দ্র রায়, সিনেমার পরিচালক তথা নাট্যকার সুমন মুখোপাধ্যায় এবং আরও বিশিষ্টরা। সঞ্চালনায় ছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরও এক অধ্যাপক নীলাদ্রিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। আলোচনায় শিল্পের নেপথ্যে থাকা ভাবনার খোঁজ করতে গিয়ে উঠে এল দর্শকের শিল্প এবং শিল্পীকে জানার ও বোঝার প্রসঙ্গও।

শিল্প আসলে কী, তার ধরনধারণ নিয়ে কথা এগোয়। শিল্পের সংজ্ঞা খুঁজলে দেখা যাচ্ছে, পার্থিব কোনও বস্তুর মাধ্যমে আবেগ আর ভাবনার বহিঃপ্রকাশকেই সাধারণ অর্থে শিল্প বলা হয়। শিল্প বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশিত হতে পারে। আঁকা, ভাস্কর্য, নাটক, গান, কবিতা, সিনেমা— যে কোনও মাধ্যমে। যদিও রীতেন্দ্র এবং সুমনের বক্তব্য, শিল্পকে কোনও স‌ংজ্ঞায় বাঁধা যায় না। তাঁদের মতে, শিল্প শব্দটি ছোট হতে পারে, কিন্তু তার ব্যাপ্তি ‘বিশাল’। সৃষ্টি নানা জনের কাছে নানা ভাবে অর্থবহ হয়ে ওঠে। নিজের অতীত অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনেই সুমন বলছিলেন, বিদেশে পড়াশোনার সুবাদে সেখানকার শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমটায় সেই শিল্পের অর্থ বোধগম্য হয়নি তাঁর। কিন্তু তা বলে কি শিল্পের কোনও খামতি ছিল? সুমনের বক্তব্য, ‘‘প্রথমে নাচের অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে বুঝতে না পারলেও পরে আবার যাই। বোঝার চেষ্টা করি। ওদের সংস্কৃতিকে জানার চেষ্টা করি। ধীরে ধীরে বিদেশে ‘ডান্স থিয়েটার’-এর সঙ্গে পরিচিত হই।’’ অর্থাৎ, শিল্পকে বোঝার জন্য যিনি দর্শক তাঁর বোঝার ইচ্ছে থাকাটা জরুরি।

কিন্তু শিল্প যদি না ভাবায় তবে কি তা গুরুত্ব হারাবে? সিমা গ্যালারির প্রদর্শনীর যেখানে ওই আলোচনা চলছিল, তার সামনেই রাখা ছিল কয়েকটি ছবির ফ্রেমের সিরিজ়। সাদা ক্যানভাসে কালো রঙের ছিটে ছাড়া সাদা চোখে তাতে আর কিছু চোখে পড়ে না। সঞ্চালক অধ্যাপক নীলাদ্রিরঞ্জন ওই ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘‘সামনের ছবিটা দেখে কি কোনও ভাবনার উদ্রেক হবে? আপনি কী ভাবে ওই ছবিকে ব্যাখ্যা করবেন?’’ রীতেন্দ্র বললেন, ‘‘সাধারণ দর্শকের মনে হতেই পারে শুধু রং ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, শিল্পের নেপথ্যে কোনও ভাবনা নেই। আমি ওই শিল্পীকে চিনি। ওঁর কাজ সম্পর্কে জানি। তাই এটাও জানি ওই ছবির নেপথ্যে কী ভাবনা কাজ করেছে বা কোন ব্রাশ বা কোন স্প্যাচুলা স্ট্রোকের কাজ রয়েছে ওই ক্যানভাসে।’’ অর্থাৎ, সুমনের মতোই রীতেন্দ্রও মনে করেন, শিল্প কাউকে ভাবাচ্ছে না মানেই এমন নয় যে, তার নেপথ্যে ভাবনা নেই।

তা বলে সহজ-সরল, ‘বোধগম্য’ শিল্প কি হয় না? অধ্যাপক রীতেন্দ্রের বক্তব্য, ‘‘হবে না কেন! মনে যে ভাবনাটা আছে সেটা আমরা কত সফল ভাবে শিল্পে তুলে ধরতে পারছি সেটাই আসল। শিশুকে যেমন খুশি আঁকতে দিলে সে তার ভাবনাটাই তার মতো করে তুলে ধরবে। বয়স বাড়লে চিন্তাভাবনা জটিল হয় ঠিকই, তবে আসল কথা ভাবনাকে সফল ভাবে শিল্পকর্মে তুলে ধরা।’’ অধ্যাপক জানাচ্ছেন, অনেক বড় বড় শিল্পীর হাতে তৈরি এমন অনেক শিল্পকর্ম রয়েছে, যা দেখে চিন্তামগ্ন হতে হয় না। তাঁর কথায়, ‘‘মডার্ন আর্টে বহু ছবি আছে, যেখানে খুব কঠিন ভাবনা নেই বা থাকে না। কিন্তু তাতে শিল্পের তাৎপর্য কিছুমাত্র কমে না। পাবলো পিকাসোর একটি কাজের কথাই ধরুন। ‘বুল’স হেড’। এক দিন শিল্পী পথে যেতে যেতে একটি বাইসাইকেলের সিট আর হাতল আলাদা ভাবে পড়ে থাকতে দেখলেন। সেগুলি বাড়িতে এনে একসঙ্গে জুড়ে কাল্পনিক ষাঁড়ের মাথা তৈরি করে ফেললেন। বিষয়টি কাজে করা খুব কঠিন নয়। কিন্তু সবাই ও ভাবে ভাবতে পারে না। পিকাসো পেরেছিলেন। সহজ-সরল ভাবনার সেই শিল্প নিয়ে কিন্তু আজও আলোচনা হয়।’’

 ‘শেপ উইদআউট ফর্ম, শেড উইদআউট কালার’ নামে প্রদর্শনী চলছে সিমায়।

‘শেপ উইদআউট ফর্ম, শেড উইদআউট কালার’ নামে প্রদর্শনী চলছে সিমায়।

কলকাতার বুকে ‘মডার্ন আর্ট’-এর প্রসারে, আন্তর্জাতিক মানের শিল্প তুলে ধরতে ১৯৯৩ সালে পথ চলা শুরু হয়েছিল সিমা গ্যালারির। এই গ্যালারির কর্মকতারাও শিল্পের গতিময়তায় বিশ্বাসী। নতুন ও পুরনোকে আগলে ‘শেপ উইদআউট ফর্ম, শেড উইদআউট কালার’ নামে প্রদর্শনী চলছে সিমায়। সেই প্রদর্শনীর পাশাপাশিই শনিবার শিল্প এবং তার ভাবনা নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন হয়েছিল সিমা গ্যালারিতে। আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে সিমায়।

CIMA Gallery Art painting exhibition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy