Advertisement
E-Paper

সতর্ক থাকলেই মিলবে দ্রুত উপশম

সামান্য ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি ভেবে কার্বাঙ্কলকে অবহেলা করবেন না। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন প্রয়োজন মতো। তার আগে জেনে নিন, কার্বাঙ্কল কেন হয় পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা দরকার এবং প্রয়োজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।

আরুণি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৩৯

কয়েক দিনের যন্ত্রণার পর যেমন সেরে যেতে পারে কার্বাঙ্কল, তেমনই তা আবার গুরুতর আকারও নিতে পারে। তাই কার্বাঙ্কল হলে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা দরকার এবং প্রয়োজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।

কার্বাঙ্কল কী

এটি আসলে আকারে বড় এক ধরনের ফোঁড়া। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়ে একাধিক ফোঁড়া একসঙ্গে মিশে গিয়েও কার্বাঙ্কল তৈরি হয়। আর সেই কারণেই ত্বকের বাইরের অংশে কার্বাঙ্কলের একাধিক ‘মুখ’ নজরে আসে। ত্বকের বাইরে থেকে কার্বাঙ্কলকে একটি মাত্র ফোঁড়া মনে হলেও, ত্বকের ভিতরের অংশে ফোঁড়াগুলির মধ্যে সংযোগ থাকে।

কেন হয়?

মূলত, যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, কার্বাঙ্কল তাঁদেরই হয়ে থাকে। আবার কোনও সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের দীর্ঘ বা জটিল রোগভোগের পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেও কার্বাঙ্কল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। লক্ষ করলে দেখা যায়, কার্বাঙ্কল ত্বকের এক কিংবা একাধিক রোমকূপকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে। অনেক সময়ে, মানুষের ত্বকে এক ধরনের ব্যাকটিরিয়া (স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিউস) জন্ম নেয়। সেই ব্যাকটিরিয়াগুলি ত্বকের রোমকূপের ছিদ্র দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে ইনফেকশন তৈরি করে। এর পর ব্যাকটিরিয়া, শরীরের মৃত কোষ ও ত্বক-কোষ মিশে পুঁজ তৈরি হয়ে ‘সোয়েলিং’ শুরু হয়। যা ত্বকের বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপন ধরের কথায়, ‘‘কার্বাঙ্কল হওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে, তবে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাকটিরিয়া-জনিত ইনফেকশনের কারণেই কার্বাঙ্কল হতে দেখা যায়।’’

পরিচ্ছন্নতার অভাব কিংবা কার্বাঙ্কল হয়েছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে ব্যাকটিরিয়া ত্বকে বাসা বাঁধতে পারে। লক্ষ করলে দেখা যায়, কার্বাঙ্কল শরীরের সেই সকল অংশেই বেশি হয়ে থাকে, যে সকল অংশে ঘাম বেশি হয়। যেমন— ঘাড়, পিঠ, কোমর, হাঁটুর পিছন দিকের অংশ, আর্মপিট ইত্যাদি। সহজ করে বললে, সারা দিনের কর্মজীবনের ব্যস্ততায় শরীরের যে যে অংশ দীর্ঘক্ষণ জামাকাপড়ে ঢাকা থাকার ফলে ঘাম জমে, কিন্তু সেই অংশগুলি সব সময়ে ঠিক ভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় না— সেখানেই জন্ম নেয় ব্যাকটিরিয়া।

যাঁরা হস্টেল কিংবা মেস-জীবন কাটান, তাঁরা অনেক সময়ে রুমমেটদের টি-শার্ট, জামা ব্যবহার করে থাকেন। এখান থেকেও আপনার শরীরে ব্যাকটিরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। চেষ্টা করুন, অন্যের ব্যবহৃত পোশাক ব্যবহার না করার। আর যদি একান্তই করতে হয়, সেটি ভাল ভাবে সাবান দিয়ে কেচে তার পরই ব্যবহার করুন। যাঁরা মেস বা হস্টেল জীবনে অভ্যস্ত, তাঁরা নিজের পোশাক, গামছা কিংবা তোয়ালে, সাবান আলাদা রাখুন। নিজে যেমন অন্যের সামগ্রী ব্যবহার করবেন না, আবার কাউকে নিজের সামগ্রী ব্যবহার করতে না দেওয়াটাই শ্রেয়।

উপসর্গ

ব্যাকটিরিয়া ত্বকের কোনও অংশে ইনফেকশন তৈরি করেছে বা করছে, তা আপনি ত্বকের উপর থেকে প্রথমে বুঝতে পারবেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শরীরে কোনও নির্দিষ্ট অংশের ত্বকের উপরিভাগ কিছুটা শক্ত হয়ে যায় এবং জায়গাটি টিপলে ব্যথা লাগে। পরে দেখা যায়, সেই জায়গাতেই হয়েছে কার্বাঙ্কল। প্রসঙ্গত, কার্বাঙ্কল বেশ কষ্টকর এবং সেটি টানা কয়েক দিন আপনাকে ভোগাবে। এমনকি, কার্বাঙ্কলের আকার বড় হলে জ্বরও আসতে পারে। তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাধারণ ফোঁড়া এবং কার্বাঙ্কলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ডা. সন্দীপন ধর বলছিলেন, ‘‘কার্বাঙ্কল নিয়ে অযথা যেমন ভয় পাওয়ার দরকার নেই। ঠিক তেমনই বিষয়টিকে অবহেলা করা উচিত নয়। কার্বাঙ্কল কোনও ভাবে জটিল আকার নিলে, মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এমন উদাহরণ কিন্তু রয়েছে। কার্বাঙ্কল ত্বকের অনেক গভীর পর্যন্ত চলে যায়, ফলে এর ভিতরে থাকা ব্যাকটিরিয়া মিশ্রিত পুঁজ রক্তের সঙ্গে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আর তা হলে পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করে। তাই কার্বাঙ্কল হওয়ার প্রথম দিন থেকে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।’’

কার্বাঙ্কল হলে

যদি সম্ভব হয় যে অংশে কার্বাঙ্কল হয়েছে, সেই জায়গাটি খোলা রাখার চেষ্টা করুন। এতে রোগী স্বস্তি বোধ করবেন। তবে আপনাকে যদি পড়াশোনা কিংবা কাজের প্রয়োজনে বাইরে বেরোতেই হয়— চেষ্টা করুন পাতলা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরার। এতে কার্বাঙ্কলের অংশটিতে মোটা এবং ভারী কাপড়ের ঘষা লাগবে না। মনে রাখা দরকার, কার্বাঙ্কল কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ছোঁয়াচে। ফলে ত্বকের এক অংশ থেকে অন্য অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই একবার ব্যবহার করা পোশাক সাবান দিয়ে না কেচে ফের ব্যবহারের কথা ভাববেন না। আবার কার্বাঙ্কল উপশমের যে যে উপায় রয়েছে, সেগুলি নিজেই প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন। পরিবারের কারও বা প্রিয়জনের সাহায্য না নেওয়াই ভাল। এতে তাঁর শরীরেও কার্বাঙ্কল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।

করণীয়

যে ব্যাকটিরিয়া থেকে সাধারণত কার্বাঙ্কল হয়ে থাকে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সেটি রক্তের সঙ্গে মিশে গেলে তা হৃদ্যন্ত্র, ফুসফুস এবং শরীরের ‘সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম’-এ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই কয়েক দিনের মধ্যে যদি কার্বাঙ্কল না কমে, তা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অনেকের ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি খোঁটাখুটির অভ্যেস রয়েছে। কার্বাঙ্কলের ক্ষেত্রে তা একেবারেই করবেন না। জোর করে পুঁজ বার করার চেষ্টা করলে ত্বকে গভীর ক্ষত তৈরি হতে পারে। ডা. সন্দীপন ধরের কথায়, ‘‘কার্বাঙ্কল কোনও অবস্থাতেই খোঁটা যাবে না। জায়গাটা যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে। গরম জলে বোরিক পাউডার মিশিয়ে কিংবা বেটাডিন লাগাতে হবে। যদি ফোঁড়া জটিল আকার নেয়, তা হলে অনেক সময়ে ওষুধ দিয়ে কার্বাঙ্কলটি ফাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে কিংবা অস্ত্রোপচার করেও ভিতরের পুঁজ বার করে দেওয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।’’

Carbuncle Skin Care
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy