Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হৃদয়ের ছন্দ ফিরবে নয়া যন্ত্রে

বছর দুই আগে হৃদ্‌যন্ত্রে পেসমেকার বসাতে হয়েছিল বেহালার বাসিন্দা সুশোভন সেনের। বেশ কিছুদিন দিব্যি ছিলেনও। কিন্তু তার পর থেকেই ফিরে আসে আগের শারীরিক সমস্যাগুলি।

সৌভিক চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৪৩
Share: Save:

বছর দুই আগে হৃদ্‌যন্ত্রে পেসমেকার বসাতে হয়েছিল বেহালার বাসিন্দা সুশোভন সেনের। বেশ কিছুদিন দিব্যি ছিলেনও। কিন্তু তার পর থেকেই ফিরে আসে আগের শারীরিক সমস্যাগুলি।

একই সমস্যা বরাহনগরের আভা দেরও। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পরেও হাঁফ ধরত, মাথা ঘুরত। চিকিৎসক জানান, হৃদ্‌যন্ত্র খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে।

শুধু সুশোভনবাবু বা আভাদেবী নন। এমন সমস্যায় পড়েন অনেকেই। পেসমেকার বসিয়ে বা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পরেও মুক্তি মেলে না হৃদ্‌রোগ থেকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পেসমেকারের সাহায্যে হৃদ্‌স্পন্দনের হার (হার্ট রেট) বাড়ানো সম্ভব হলেও শরীরে যে পরিমাণ রক্ত দরকার ততটা পাঠাতে ব্যর্থ হচ্ছে হৃদ্‌যন্ত্র। তা থেকেই সমস্যা।

‘কার্ডিয়াক রিসিংক্রোনাইজিং থেরাপি’ বা সিআরটি পদ্ধতিতেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে জানালেন হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকার। এমনকী কলকাতা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালেও এখন এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা সম্ভব বলে জানালেন তিনি।

কুণালবাবু জানালেন, সুস্থ হৃদ্‌যন্ত্র এক একটি পাম্পে রক্তের ৬৫ শতাংশ দেহে ছড়িয়ে দেয়। ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম ‘ইজেকশন ফ্র্যাকশন’। এর পরিমাণ ৪০ শতাংশের নীচে নেমে গেলে বুঝতে হবে মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়েছে হৃদ্‌যন্ত্র। তার ডান ও বাম দিকের পেশির পাশাপাশি দু’দিকের সামগ্রিক বোঝাপড়াও নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় বা পেস মেকার বসিয়েও হৃদ্‌যন্ত্রকে পুরো কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব হয় না।’’ হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপ কুমারও বলেন, ‘‘হৃদ্‌যন্ত্র অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়লে অস্ত্রোপচার বা পেস মেকার বসিয়ে ইজেকশন ফ্র্যাকশন বাড়ানো যায় না। তাই পুরনো সমস্যাগুলি ফিরে আসে।’’

কুণালবাবু জানালেন, সাধারণ পেসমেকার হৃদ্‌যন্ত্রের এক দিকে বসানো হয় এবং তা একটি দিককেই উদ্দীপিত করে। সিআরটি যন্ত্রটি বসানো হয় দু’দিকেই। যা দু’টি দিককে উদ্দীপিত করার পাশাপাশি হৃদ্‌যন্ত্রের নির্দিষ্ট ছন্দ রক্ষা করে ইজেকশন ফ্র্যাকশন বাড়িয়ে দেয়। তাতে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করেন। তবে তাঁর কথায়, ‘‘সিআরটি-র পরে হৃদ্‌যন্ত্রের ইজেকশন ফ্র্যাকশন চার থেকে পাঁচ শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে। রোগী তাতেই অনেক সুস্থ বোধ করবেন। পুরনো সমস্যাগুলি হয়তো ফিরে আসবে না, কিন্তু হৃদ্‌যন্ত্রকে পুরো সুস্থ করা সম্ভব নয়।’’ দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আগে ইসিজি করে দেখতে হবে রোগীর দেহে আদৌ সিআরটি যন্ত্র বসানো যাবে কি না।’’

হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, পেসমেকার ও সিআরটি-কে গুলিয়ে ফেলা ঠিক না। পেসমেকারের কাজ হার্ট রেট ঠিক রাখা। সিআরটি-র কাজ হৃদযন্ত্রের পাম্পিং নিয়ন্ত্রণ। যাঁদের শুধু হার্ট রেটের সমস্যা তাঁদের জন্য সাধারণ পেসমেকার যথেষ্ট। ইজেকশন ফ্র্যাকশন কমে গেলে দরকার সিআরটি। তিনি বলেন, ‘‘সিআরটি সবার জন্য নয়। তা বসানোর আগে যথেষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

heart heart disease pacemaker kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE