Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
GYM

জিম ও সাপ্লিমেন্ট ছাড়াই বানান শরীর

সুঠাম শরীরের জন্য কম কার্বোহাইড্রেট ও বেশি প্রোটিন দরকার ঠিকই৷ কিন্তু বুঝে করতে না পারলে ঘোর বিপদ৷

জিম ছাড়াই সুস্থ থাকুন। —ফাইল চিত্র।

জিম ছাড়াই সুস্থ থাকুন। —ফাইল চিত্র।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ১৩:৫৩
Share: Save:

সিক্স প্যাক না হলেও যাঁদের রুটি–রুজিতে টান পড়ে না, তাঁদের দামি জিম বা সাপ্লিমেন্টের পিছনে পয়সা খরচ না করে মাঠে–ঘাটে হেঁটে–দৌড়ে, পুকুর এপার–ওপার করে, সাইকেল চালিয়ে, আখড়ায় ওজন তুলে আর ঘরের খাবার খেয়েই শরীর বানানো উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ তাতে শরীর দেখনসই হয়, পয়সা বাঁচে, উপরি পাওনা হয় দুরন্ত ফিটনেস ও সুস্বাস্থ্য৷

তার মানে কি এই যে জিমে গিয়ে নিক্তির মাপে শরীর বানালে ও সাপ্লিমেন্ট খেলে ফিটনেস ও সুস্বাস্থ্যে টান পড়ে? আসুন দেখা যাক বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন৷

সুঠাম শরীর, স্বাস্থ্যে টান

শরীরকে নিক্তির মাপে আনতে গেলে যে ধরনের হাই ইনটেনসিটি ব্যায়াম করতে হয় তা উন্নত মানের জিম ছাড়া সম্ভব নয়৷ এবং সেই ব্যায়ামে পুরো শরীর, বিশেষ করে হাড়–পেশি–সন্ধি–টেন্ডনের উপর এমনিতেই এত চাপ পড়ে যে কী ভাবে কোন ব্যায়াম করতে হয় সে হিসেবে সামান্য ভুলচুক হলেই বিপদ৷ আবার যাঁদের ফিটনেস ওই মাপে নেই, অন্যের দেখাদেখি শুরু করেছেন, তাঁদের অবস্থা আরও করুণ৷ বাড়াবাড়ি ব্যায়ামের ফলে ব্যথা–বেদনা তো মামুলি ব্যাপার, হাড়গোড় পর্যন্ত ভেঙে যেতে পারে৷ ছিঁড়তে পারে লিগামেন্ট–টেন্ডন৷ শিরদাঁড়ায় চোট লেগে সারা জীবনের জন্য ব্যায়াম বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ অনেক সময় সঙ্গে সঙ্গে কিছু বোঝা যায় না, কিন্তু তলে তলে হাড় ক্ষয়ে গিয়ে কম বয়সে জটিল আর্থ্রাইটিসের সূত্রপাত হয়৷

জিম করতে গিয়ে ভুলচুক হলেই বিপদ৷

আরও পড়ুন: পরশ্রীকাতরতা অহেতুক স্ট্রেস বাড়ায়, বর্জন করুন, পরামর্শ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকারের​

‘ভাল জিম, ফিজিও ও রিহ্যাব প্রোগ্রামে নাম লেখালে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম করলে ও হাড়–পেশির ক্ষয় ঠেকানোর বিশেষ ব্যবস্থা নিলে এ সব বিপদ কম হয়। তবে বয়স বাড়লে যে হবে না, এমন গ্যারান্টি কিন্তু নেই৷ বহু বডি বিল্ডার, খেলোয়াড় বা মডেল আছেন যাঁরা কম বয়সে প্রায় অথর্ব হয়ে গেছেন৷ কাজেই লিমিটের মধ্যে থাকুন৷ সতর্ক থাকুন খাবারের ব্যাপারেও৷ কারণ অনেক সময় এক বগ্গা খাবার–দাবারের জন্যও বিপদ বাড়ে৷ জানালেন অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সেনগুপ্ত৷

খাবারের বিপদ

সুঠাম শরীরের জন্য কম কার্বোহাইড্রেট ও বেশি প্রোটিন দরকার ঠিকই৷ কিন্তু বুঝে করতে না পারলে ঘোর বিপদ৷ পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল জানিয়েছেন, ‘মোটামুটি শুয়ে–বসে থাকা মানুষেরও দিনে ১৫০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট লাগে৷ ব্যায়াম করলে আরও বেশি দরকার হয়৷ না হলে এনার্জিতে টান পড়ে৷ তা ছাড়া কার্বোহাইড্রেট কম খেলে সে ভাবে তৃপ্তি হয় না বলে ভুলভাল খাবারের ইচ্ছে বাড়ে, ডায়েটে টিকে থাকা মুশকিল হয়৷ বা টিকে গেলেও দীর্ঘমেয়াদে তা ক্ষতি করে৷ সঙ্গে যদি আবার প্রচুর প্রোটিন খেতে শুরু করেন, হাই কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, কিডনির সমস্যা ও হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে৷ সাপলিমেন্টের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে তো কথাই নেই৷ কাজেই সুন্দর শরীরের পাশাপাশি সুন্দর স্বাস্থ্য যদি চান, পুষ্টিবিদের পরামর্শমতো লো–ক্যালোরির প্রোটিনসমৃদ্ধ ঘরোয়া সুষম খাবার খান, যে কোনও ধরনের প্রসেস্ড খাবার খাওয়া কমান৷ মাটির কাছাকাছি থাকুন৷

থাকুন মাটির কাছাকাছি

‘অবাস্তব আকাঙ্খা নিয়ে ব্যায়াম করবেন না৷ মডেল বা চিত্রতারকাদের ছিপছিপে সুঠাম শরীরের মূলে এমন অনেক কিছুর হাত থাকে যা দীর্ঘমেয়াদে যথেষ্ট ক্ষতিকর৷ জলের মতো পয়সাও খরচ হয় ও রকম শরীর বানাতে৷’ জানিয়েছেন কুণাল সেনগুপ্ত৷ ‘কাজেই শরীরের ধাত ও আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী লক্ষ্য ঠিক করুন৷ তার আগে চেকআপ করিয়ে নিন৷ ছোটখাটো জিমে অনেক সময় গাইড করার মতো কেউ থাকেন না৷ আবার বড় জিমে যাওয়ার বা পার্সোনাল ট্রেনার রাখার সামর্থও থাকে না সবার৷ সে ক্ষেত্রে আখড়ায় যান৷ কারণ সেখানে এখনও গুরু–কালচার আছে৷ তাঁর দেখানো পথে চললে শরীর যেমন তৈরি হবে, সুস্বাস্থ্য ও ফিটনেসের সঙ্গেও কম্প্রোমাইজ করতে হবে না৷’

পুকুর এপার–ওপার করে দেখতে পারেন।

আরও পড়ুন: ঠান্ডা বা গরম খেলেই দাঁতে শিরশিরানি? ঘরোয়া উপায়ে সমাধান হাতের মুঠোয়​

তার জন্য কী কী করতে হবে? দেখে নিন৷

বিনা খরচে সুঠাম শরীর

• সকালে উঠে পার্কে বা মাঠে হাঁটুন বা দৌড়োন৷ হাঁটুর অবস্থা বুঝে ২০–৪০ মিনিট৷ সপ্তাহে ৫–৬ দিন বা অন্তত ৩ দিন৷ বদ্ধ ঘরে ট্রেডমিলে হাঁটার চেয়ে ঘাস–মাটির উপর হাঁটা শতগুণে ভাল৷ হাঁটুর ক্ষতি কম হয়৷ সকালে দূষণ কম থাকে বলে ফুসফুসের আরাম হয়৷ ভোরের রোদ গায়ে লাগলে ভিটামিন ডি পায় শরীর৷ হাড়–পেশি–মন–মেজাজ, সব ভাল থাকে৷ ব্যথা–বেদনা কম হয়৷ হাঁটতে ভাল না লাগলে সাইকেল চালান বা সাঁতার কাটুন৷

• কাছাকাছি দূরত্বে যেতে হলে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে যান৷

• একটানা বসে থাকবেন না৷ মাঝেমধ্যে উঠে দাঁড়ান৷ একটু হাঁটুন৷ দিনভর সচল থাকার চেষ্টা করুন৷

• হাঁটু–কোমর–হার্ট–ল্ ঠিক থাকলে স্কিপিং করতে পারেন৷ করতে পারেন বার্পিস, রক ক্লাইম্বিং, জাম্পিং জ্যাক জাতীয় কার্ডিও ব্যায়াম৷ এতে সারা শরীরের ব্যায়াম হয়৷ চর্বি ও ওজন যেমন কমে, পেশিও মজবুত হয়৷

• সপ্তাহে ৩–৪ দিন বা শরীরে কুলোলে ৫–৬ দিন ২০–৪০ মিনিট ওজন নিয়ে ব্যায়াম করুন৷ যেমন, স্কোয়াট, লেগ এক্সটেনশন বা আয়রন শ্যু এক্সারসাইজ, লেগ কার্ল, বারবেল বা ডাম্বেল ওয়েট লিফটিং, বেঞ্চপ্রেস ইত্যাদি৷ বুকডন, লেগ রাইজ, ক্রাঞ্চেস মারুন৷

• কী ভাবে কোন ব্যায়াম করবেন বা আদৌ করবেন কি না, কতবার করে করবেন, ওজন তুলবেন নাকি বডি ওয়েট ট্রেনিং করবেন, কতটা ওজন তুলবেন, শরীরের প্রতিটি অংশের ব্যায়াম আলাদা করে করবেন না একদিন শরীরের উপরের অংশ ও একদিন নীচের অংশের ট্রেনিং করবেন, সে সব ভাল করে জেনে–বুঝে নিন৷ নাহলে কিন্তু চোট লাগবে৷

• মূল ব্যায়ামের পর ১০–১৫ মিনিট যোগা ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন৷ ইচ্ছে হলে বিকেলেও করতে পারেন৷ শরীরের নমনীয়তা বাড়বে৷ মন–মেজাজ ভাল থাকবে৷

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Gym Body Muscle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE