Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Stroke

স্ট্রোক মানেই মৃত্যু নয়, কী করলে বাঁচবে রোগী?

হাই প্রেশার, সুগার-সহ নানা রিস্ক ফ্যাক্টর মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথ আটকে দেয়। এদিকে রক্তের মধ্যে ভেসে বেড়ানো চর্বির ডেলা আচমকা ধমনীতে আটকে গিয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হতে হতে অকেজো হয়ে যায়। এই ব্যাপারটাই স্ট্রোক।

স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলেই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। ছবি:শাটারস্টক।

স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলেই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। ছবি:শাটারস্টক।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:০৬
Share: Save:

‘টাইম ইজ ব্রেন’।হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন, টাকার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্ককে ঠিক রাখতে স্ট্রোকের পর যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সঠিক চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া দরকার। বললেন ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজিস্ট সুকল্যাণ পুরকায়স্থ।

কথা বলতে বলতে আচমকা জিভ অবশ হয়ে গেল, হাত তুলে বোঝানোর চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলেন হাত তোলাও অসম্ভব। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার সব আগের মতোই। স্বাভাবিক। তাই সে যাত্রায় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা মাথাতেই এল না। রোজের ব্যস্ততায় ধীরে ধীরে থিতিয়ে যেতে শুরু করল এই ঘটনা। কয়েকমাস পরে এক বড়সড় স্ট্রোকের ধাক্কায় একেবারে যমে-মানুষে টানাটানি।

কয়েক মিনিট এরকম কথা বলতে না পারা, হাত বা পা অসাড় হয়ে যাওয়া অথবা চোখে অন্ধকার দেখার মতো ঘটনাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ‘ট্র্যানসিয়েন্ট ইসকিমিক অ্যাটাক’ বা ‘টিআইএ’। সাধারণ ভাবে একে মিনি স্ট্রোক বলা যায়। এই সময়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে কিছু দিনের মধ্যেই বড়সড় ব্রেন স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৮ লক্ষ মানুষ ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। পৃথিবীর প্রেক্ষিতে এই সংখ্যাটা ১ কোটির কিছু বেশি। এদের মধ্যে ৬৫ লক্ষ মানুষ সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যান।

আরও পড়ুন: এক ঘুমেই দুষ্টু শিশু হবে শান্তশিষ্ট! কেমন করে?

স্ট্রোক আটকাতে অবশ্যই প্রেশার, সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

‘সোসাইটি ফর থেরাপিউটিক নিউরো-ইন্টারভেনশন’-এর (STNI-2020) এক সম্মেলনে এমন নানা তথ্য জানালেন দেশ-বিদেশের বহু খ্যাতনামা নিউরোরেডিওলজিস্ট, নিউরোইন্টারভেনশনিস্ট এবং নিউরোসার্জনদের টিম। স্ট্রোক-সহ মস্তিষ্কের নানা জটিল অসুখের চিকিৎসায় ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি ইদানীং গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিচ্ছে। ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশনের এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, ভারতের গ্রামাঞ্চলে ইদানীং ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যুর হার হু হু করে বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলের ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে ২১০ জন স্ট্রোক আক্রান্ত চিকিৎসার অভাবে মারা যান।

স্ট্রোকের চিকিৎসা ও গোল্ডেন আওয়ার

মাথা ব্যথা বা অ্যাসিডিটির মতো সেলফ মেডিকেশন আমাদের মজ্জাগত। কিন্তু টিআইএ বা স্ট্রোকের ক্ষেত্রে এটা-ওটা করতে গিয়ে সময় নষ্ট করলেই মহা বিপদ। প্রাণে বাঁচার ঝুঁকি ক্রমশ কমে যায় তো বটেই, সঙ্গে আর দুই প্রাণে বাঁচলেও জবুথবু হয়ে পড়ে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলেই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। স্ট্রোক হওয়ার পর সাড়ে চার ঘণ্টা হল গোল্ডেন আওয়ার। এর মধ্যে ইন্টারভেনশন পদ্ধতির সাহায্যে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক করে দিতে পারলে রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সময় লাগে না। কিন্তু দেরি হলেই বিপদ। আর এই কারণেই চিকিৎসকরা বলেন,‘টাইম ইজ ব্রেন’। চিকিৎসায় দেরি হলে প্যারালিসিস হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। সুতরাং স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলেই হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া উচিত। অস্ত্রোপচারের পরিবর্তে ইদানীং হার্টের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির মতোই মস্তিষ্কের ধমনীর জমাট বাঁধআ রক্তের ডেলাও খুলে দেন নিউরো-ইন্টারভেনশনিস্ট।

আরও পড়ুন:বিকেলের ফাস্ট ফুড নষ্ট করছে ডায়েটের সব হিসেব? মেদ ঝরাতে সন্ধেয় খান এ সব

কেন স্ট্রোক

হাই প্রেশার, সুগার-সহ নানা রিস্ক ফ্যাক্টর মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথ আটকে দেয়। এদিকে রক্তের মধ্যে ভেসে বেড়ানো চর্বির ডেলা আচমকা ধমনীতে আটকে গিয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হতে হতে অকেজো হয়ে যায়। এই ব্যাপারটাই স্ট্রোক। সাধারণত, দু’ধরনের স্ট্রোক হয়। ইসকিমিক আর হেমারেজিক। ইসকিমিক স্ট্রোকে রক্ত চলাচল থেমে যায়। আর হেমারেজিক স্ট্রোকে দুর্বল রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হয়। এ ছাড়া আছে ট্র্যান্সিয়েন্ট ইসকিমিক অ্যাটাক বা টিআইএ। কোনও ছোট রক্তের ডেলা মস্তিষ্কের রক্তবাহি ধমনীতে সাময়িক ভাবে আটকে গেলে কিছুক্ষণের জন্য রোগীর ব্ল্যাক আউট হবার ঝুঁকি থাকে। আপাত দৃষ্টিতে মারাত্মক না হলেও টিআইএ-র পরে বড় অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে।

স্ট্রোক বুঝবেন কীভাবে

যদি কথা বলতে বলতে আচমকা জিভ অসাড় হয়ে যায় অথবা অল্প সময়ের জন্যে চোখে অন্ধকার দেখেন অর্থাৎ ব্ল্যাক আউট হয়। কাজ করতে করতে হাত-পা বা শরীরের কোনও একদিক হঠাৎপক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়, অথবা চোখে দেখতে সমস্যা হয়।ঝাপছা দৃষ্টি বা ডাবল ভিশন হয়। কথা বলতে অসুবিধে হয় অথবা ঢোক গেলা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।মুখ থেকে লালা বেরতে থাকে অথবা সম্পূর্ণ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায় রোগী।

রুখব কী ভাবে

• স্ট্রোক আটকাতে অবশ্যই প্রেশার, সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

• ওজন স্বাভাবিক রাখা আবশ্যক, নিয়ম করে অন্তত আধ ঘণ্টা একটানা হাঁটা মাস্ট।

• বাড়িতে রান্না টাটকা সব্জি ও মাছ-মাংস খেতে হবে। বাইরে খাওয়ায় রাশ টানতে হবে।

• ধুমপান, মদ্যপানের মতো বদভ্যাস ছাড়তেই হবে।

• মাইনর অ্যাটাক বা টিআইএ হওয়ার পর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE