শরীরের অন্য জায়গায় এন্ডোমেট্রিয়াম চলে গেলে আশপাশের কোষগুলোকে চাপ দেয় বা নষ্ট করে দেয়। ফলে, সিস্ট তৈরি হয়। এই কারণেই ওভারিতেও সিস্ট হতে পারে। তখন সন্তানধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ডিম্বাণু তৈরি হতে পারে না। তা ছাড়া পুরনো রক্ত হয় চ্যাটচেটে। তা গঁদের আঠার মতো আশপাশের প্রত্যঙ্গকে জড়িয়ে ধরলে সেগুলি কাজ করতে পারে না। যেমন, তলপেটের মধ্যে ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলি জড়িয়ে যায়। এতে ডিম্বাণু ফ্যালোপিয়ান টিউবে ঢুকতে পারে না। ফলে গর্ভাধান হতে চায় না। আবার এই ঢিবিগুলো থেকে টক্সিন বেরিয়ে এগ ও স্পার্মকে মেরে ফেলে। সেই জন্য এই রোগে বন্ধ্যাত্ব দেখা যায়।
অসুখের নানা কারণ
এন্ডোমেট্রিয়োসিসের বেশ কিছু কারণ আছে। তবে, ঠিক কোন কারণে রোগটি হয়, তা এখনও অজানা। ডা. খাস্তগীর জানাচ্ছেন, বহু বছর আগে মনে করা হত, ঋতুস্রাবের রক্ত কিছুটা প্রসবের পথ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়, কিছুটা ফ্যালোপিয়ান টিউব দিয়ে পেটে গিয়ে ডিম্বাশয়, মূত্রথলি, বর্জ্য নির্গমন পথ, যোনিতে পড়তে পারে। ফলে এন্ডোমেট্রিয়োসিস দেখা দেয়। পরে বলা হল, শরীরের যে কোনও জায়গার কোষও এন্ডোমেট্রিয়োসিসে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে! কোনও সংক্রমণ বা বিশেষ ‘স্টিমুলেশন’, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সমস্যার কারণে এমনটা হয়। এই কারণে, নাভিতে, নাকেও এই রোগের দেখা মিলেছে। আবার অনেক সময়ে কোনও অপারেশনের পর সেলাইয়ের সময়ে জরায়ুর দেওয়াল কিছুটা সেলাইয়ের জায়গায় চলে আসে ও শেষে চামড়াতেও চলে আসতে পারে। একে স্কার এন্ডোমেট্রিয়োসিস বলে। বলা হয়, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়াও এন্ডোমেট্রিয়োসিসের অন্যতম কারণ। প্রধানত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে অন্ত্রের ভাল ব্যাকটিরিয়া নষ্ট হয়ে যায় ও খারাপ ব্যাকটিরিয়া তৈরি হয়। খারাপ ব্যাকটিরিয়ার কারণে কোষের ‘ইনফ্ল্যামেশন’ হয়ে সেগুলি এন্ডোমেট্রিয়োসিস কোষে পরিবর্তিত হয়ে যায়। অনেকের মতে, স্ট্রেস ও তার ফলে খাওয়াদাওয়ার অনিয়মেও এই রোগের বাড়বাড়ন্ত হয়।
এন্ডোমেট্রিয়োসিস কি ইদানীং বেড়ে গিয়েছে?
এটি নতুন অসুখ নয়। একশো বছর ধরেই এই রোগের বিষয় শোনা যাচ্ছে। তবে, এখন এই রোগ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে বেশি। চিকিৎসাও খুবই উন্নত হয়েছে। ডা. খাস্তগীর বললেন, বোঝাই যাচ্ছে, এন্ডোমেট্রিয়োসিস ঋতুস্রাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সময়ে মেয়েদের টানা কয়েক মাস ধরে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে। আগে মেয়েদের বিয়ে হত কম বয়সে, সন্তান জন্মাত একাধিক। ফলে, তাঁদের জীবনের বেশ খানিকটা সময় ঋতুস্রাব বন্ধ থাকত। এক রকম ‘বিশ্রাম’ বলা যেতে পারে। এখনকার ব্যস্ত জীবনে মহিলাদের বিয়ে হতে ও সন্তান নিতে দেরি হচ্ছে। ফলে বহু বছর ধরে প্রতি মাসেই ঋতুস্রাবের ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। এন্ডোমেট্রিয়োসিসও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্য দিকে, এখন মানুষ অনেক সচেতন। আগে রজঃস্রাবে খুব বেশি যন্ত্রণা হলেও মেয়েরা লজ্জায় চুপ করে থাকতেন। এখন বেশি কষ্ট হলেই ডাক্তার দেখাচ্ছেন। ফলে, আধুনিক পরীক্ষার সহায়তায় রোগ ধরা পড়ছে বেশি।
রোগলক্ষণ ও নির্ণয়
গর্ভাধানে সমস্যা তো রয়েইছে। রজঃস্রাবের পাঁচ থেকে সাত দিন আগে ব্যথা, ঋতু শুরু হলেই কমে যাচ্ছে— এমন হলেও পরীক্ষা করার আগেই এন্ডোমেট্রিয়োসিস বলে নিশ্চিত হয়ে যান চিকিৎসক। এ ছাড়া রোগের লক্ষণ সারা মাস তলপেটে ব্যথা, ব্যক্তিগত মুহূর্তে ব্যথার অনুভূতি, ঋতুর সময়ে শৌচালয়ের কাজের সময়ে ব্যথা। শিরদাঁড়া থেকে কিছু স্নায়ু তলপেট দিয়ে পায়ে পৌঁছয়। এন্ডোমেট্রিয়োসিস সেই স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে হাঁটুতে ব্যথা হতে দেখা যায়।
এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা করলে দেখা যায় প্রসবদ্বারে বা তলপেটে ব্যথা হচ্ছে, গুটলি মতো কিছু অনুভূত হচ্ছে। আলট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে বোঝা যায়, ওই ঢিবিগুলো কোথায় জমা হচ্ছে, এমআরআইতেও রোগ ধরা পড়ে। ল্যাপেরোস্কোপির সাহায্যে নাভিতে ছোট্ট ফুটো করে যন্ত্রের মাধ্যমে পেটের ভিতরে দেখা হয় যে কোথায় সমস্যা রয়েছে।