Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
remdesivir

কলকাতায় থাকলেও ট্রাম্পকে রেমডেসিভিরই দিতেন, বলছেন চিকিৎসকরা

হাসপাতাল সূত্র বলছে, সামান্য জ্বর-সর্দি রয়েছে তাঁর। নাক বন্ধ। কিন্তু তাঁর বয়স ৭৪ বছর। সঙ্গে মেদবাহুল্যের (ওবেসিটি) সমস্যাও রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের চিকিৎসায় দেওয়া হচ্ছে রেমডেসিভির। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

মার্কিন প্রেসিডেন্টের চিকিৎসায় দেওয়া হচ্ছে রেমডেসিভির। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৩৪
Share: Save:

করোনা-আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি কলকাতা শহরে থাকতেন?

আমেরিকার ওয়াল্টার রিড সেনা হাসপাতালে আপাতত চিকিৎসা চলছে ট্রাম্পের। হাসপাতাল সূত্র বলছে, সামান্য জ্বর-সর্দি রয়েছে তাঁর। নাক বন্ধ। কিন্তু তাঁর বয়স ৭৪ বছর। সঙ্গে মেদবাহুল্যের (ওবেসিটি) সমস্যাও রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের একাংশ কিছুটা চিন্তিত। আক্রান্ত হওয়ার পর হোয়াইট হাউসে কিছুক্ষণ তাঁকে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত তাঁকে অক্সিজেন দিতে হয়নি বলেই জানাচ্ছে একাধিক সূত্র। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসেভির চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ভিটামিন ডি, জিঙ্ক, ফ্যামোটিডিন এবং অ্যাসপিরিন।

ঘটনাচক্রে, অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রেমডেসেভিরের একটি ‘ভায়াল’ মুম্বইয়ে ১০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ট্রাম্পকে রোগী হিসেবে পেলে কলকাতা শহরের চিকিৎসকরাও কি রেমডেসিভির দিতেন তাঁকে?

এর আগে ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে রেমডেসিভির ওষুধের সফল প্রয়োগ শুরু হয়। পরে এর অ্যান্টি ভাইরাল ক্ষমতার উপর আস্থা রেখে মার্স এবং সার্স মহামারী হানার সময়ও রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন এই করোনা-কালেও রেমডেসিভির নিয়ে আশাবাদী কলকাতার চিকিৎসকরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানান, রেমডেসিভির অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ। রেমডেসিভির নিয়ে এখনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ফলাফল ভাল। যে সব ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কিছুটা ভাল ফল মিলছে, সেগুলি দিয়েই চিকিৎসা করতে হচ্ছে। রেমডেসিভির সেই সব ওষুধগুলির মধ্যে সবচেয়ে ভাল কাজ দিচ্ছে। সুবর্ণ নিজেও প্রয়োগ করছেন এই ওষুধ। কিন্তু ট্রাম্প তাঁর চিকিৎসাধীন থাকলে তাঁকে কি সুবর্ণ রেমডেসিভির দিতেন?

আরও পড়ুন:প্রতি ৪ মিনিটে ১ জন মহিলার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে এ দেশেই!​

দিতেন। জানাচ্ছেন এই চিকিৎসক। সুবর্ণর কথায়, ‘‘শারীরিক অবস্থা দেখে অবশ্যই এই ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারত ট্রাম্পের উপর। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই খুব ভাল কাজ দিয়েছে এই ওষুধ। অঙ্কের নিয়মে নির্দেশিকা মেনে চিকিৎসা করলেই যে রোগী দ্রুত সেরে উঠবেন তা নয়। রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কিছু ওষুধের হেরফের করতেও হতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ শহরে থাকলে প্রয়োজনে হলে তাঁকে রেমডেসিভির দিতাম।’’

আরও পড়ুন:কোভিড পরিস্থিতিতে বেড়েছে ঘাটতি, রক্তদান নিয়ে এই গুলি খেয়াল রাখতেই হবে​

মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, ‘‘দেশে করোনার চিকিৎসায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রেমডেসিভির ও টসিলিজুম্যাব। রেমডেসিভির বেশ ভাল কাজ করেছে অনেক আক্রান্তের ক্ষেত্রেই। অ্যান্টিভাইরাল এই ওষুধ তাই বহুক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে কোনও রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল তৈরি করা হয়। শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা কমে গেলে অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট (রক্ত যাতে জমাট না-বেঁধে যায় ভাইরাস হানার ফলে) দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন দেওয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিভাইরাল রেমডেসিভির প্রয়োগ করা হয় ক্ষেত্রবিশেষে।’’

রেমডেসিভির বেশ ভাল কাজ করেছে অনেক আক্রান্তের ক্ষেত্রেই। ফাইল ছবি।

হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, রেমডেসিভিরের সঙ্গে রেগেনেরন অ্যান্টিবডি ‘ককটেল’-এর ৮ গ্রামের সিঙ্গল ডোজও দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। কিন্তু ওই ওষুধ এখনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে। সেটি বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেয়নি আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ কন্ট্রোল সংস্থা। মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম জানাচ্ছেন, অনুমতি সাপেক্ষে এ ধরনের ড্রাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্তের অ্যান্টিবডি এবং ইঁদুরের শরীরে পরীক্ষার মাধ্যমে তৈরি অ্যান্টিবডির মিশ্রণ ব্যবহার হয়ে থাকে। সে কারণেই একে ‘ককটেল’ বলা হচ্ছে। এই ওষুধ করোনা ভাইরাসের ‘প্রোটিন স্পাইক’ বা কাঁটার মতো অংশগুলিকে সবদিক থেকে বিকল করে দিতে পারে। তবে এটি এখনও পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে।

আরও পড়ুন:করোনা আবহে নখ নিয়ে এই বিষয়গুলি মানতেই হবে

রেমডেসিভির প্রয়োগ করা ঠিক কি না, সে বিষয়ে সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলছেন, ‘‘কোনও রোগীকে না দেখে কী ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারত, তা বলা ঠিক না। কারণ, করোনার চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরাল যে সব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলি নির্দিষ্ট কিছু মানুষের ক্ষেত্রেই কাজ দিচ্ছে। এগুলি করোনার ওষুধ নয়। তাই রোগীকে পরীক্ষা করে দেখে তবেই ওষুধ প্রয়োগের বিষয়টি বলা যেতে পারে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পদ্ধতি মেনে চিকিৎসা করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’’

আরও পড়ুন:কোভিডের উপসর্গে জ্বরের দোসর হাত-পা ব্যথা? কী খেয়াল রাখতেই হবে?​

করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রথম পর্যায় থেকেই কোভিড-১৯ রোগী দেখছেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের চিকিৎসক যোগীরাজ রায়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপর রেমডেসিভির প্রয়োগের বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হলে যোগীরাজ বলেন, ‘‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষদের এক জন। সে দেশের চিকিৎসকরা তাঁকে দেখে যে ওষুধের কথা মনে করেছেন সেটি দিয়েছেন।’’ ব্যক্তিগতভাবে যোগীরাজও সঙ্কটাপন্ন রোগী বা বিশেষ ক্ষেত্রে ওই ওষুধ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু পাশাপাশিই তাঁর সতর্কীকরণ, অপ্রয়োজনে এ ধরনের ওষুধ যাতে ব্যবহার না করা হয়।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump Corona COVID-19 Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE