Advertisement
E-Paper

পাঁউরুটির গন্ধে ইতিহাসের ছোঁয়া

এক শতক আগেও রক্ষণশীল তথাকথিত কুলীন বাঙালি ঘরের অন্দরে পাঁউরুটিকে এক ধরনের বিজাতীয় ‘ম্লেচ্ছ’ খানা বলে দেখা হত। কিন্তু তত দিনে বাঙালি মহাপুরুষদের শংসাপত্র অবধি আদায় করে ফেলেছে পাঁউরুটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২৫
খানা-খাজানা: শহরে ‘পম্পেই ব্রেড’। নিজস্ব চিত্র

খানা-খাজানা: শহরে ‘পম্পেই ব্রেড’। নিজস্ব চিত্র

লুচি ছেড়ে রুটি খাওয়া নিয়ে এই সে-দিনও এক ধরনের অহেতুক নাক সিঁটকনো ছিল বহু বাঙালির মধ্যে। কিন্তু পাঁউরুটির কথা আলাদা!

এক শতক আগেও রক্ষণশীল তথাকথিত কুলীন বাঙালি ঘরের অন্দরে পাঁউরুটিকে এক ধরনের বিজাতীয় ‘ম্লেচ্ছ’ খানা বলে দেখা হত। কিন্তু তত দিনে বাঙালি মহাপুরুষদের শংসাপত্র অবধি আদায় করে ফেলেছে পাঁউরুটি। শোনা যায়, বেলুড় মঠে স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দও নিজে পাঁউরুটি তৈরির নিরীক্ষায় মজেছিলেন। তার পরে সেই পাঁউরুটির গুণমান যাচাই করাতে বাগবাজারে ‘মেমসাহেব’ নিবেদিতার বাড়িতে তা চেখে দেখার জন্য পাঠান স্বামীজি। পরে ফারপোজ বা গ্রেট ইস্টার্নের সুবাদে দেশের অন্যতম কুলীন পাঁউরুটির শহরও এই কলকাতা। এ বার সেই পরম্পরাতেই একটি নতুন মাত্রা যোগ হতে চলেছে।

বিশ্বায়নের যুগে বেশ কিছু নামী-দামি বিদেশি পাঁউরুটিরও এখন কলকাতায় দেখা মেলে ঠিকই, কিন্তু পাঁউরুটি এমন একটি বস্তু যা নিজেরা তৈরি না করলে টাটকা স্বাদটি অধরা থাকবেই। সেই খামতি দূর করতে এ বার খাঁটি ‘রোমান ব্রেড’ তৈরিতে শামিল হচ্ছে শহরের একটি নামী পাঁউরুটি নির্মাতা সংস্থা। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত ছোবলে পুড়ে খাক ইতালির পম্পেই শহরের সঙ্গে নাকি জড়িয়ে আছে কলকাতার এই নতুন পাঁউরুটি-নিরীক্ষা। পোশাকি নাম ‘পম্পেই ব্রেড’ বা ‘পানিস কোয়াদ্রাতাস’। ৭৯ খ্রিষ্টাব্দের পম্পেইয়ে সেই পাঁউরুটির ফসিল উদ্ধার হয়েছে। গোটা বিশ্বের পাঁউরুটি-প্রেমিকদের মধ্যে বহুল চর্চিত, পম্পেই রুটির চেহারা-চরিত্র নিয়ে গবেষণা। ওই সংস্থার দাবি, সেই পম্পেই পাঁউরুটির আদলটিকে তারা রপ্ত করে ফেলেছে। তাদের বিপণিতে ৪০০ গ্রামের আধারে মিলবে এই নয়া পাঁউরুটি। আটা, ময়দা, গমের ভুসির সঙ্গে হজমের জন্য সহায়ক ফাইবারের মিশেলে তৈরি পাঁউরুটি যথেষ্ট ‘স্বাস্থ্যকর’ বলেও দাবি নির্মাতাদের।

সাহিত্যিক শঙ্করের অভিজ্ঞতা, সেই ১৯৬০-এর দশকেও ফারপোর পাঁউরুটির টানে লম্বা লাইন ধর্মতলা চত্বরে উপচে পড়ত। বৌবাজারের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পাড়ায় জনে জনে মনপসন্দ পাঁউরুটির সন্ধানে প্রকাণ্ড আভেনের বন্দোবস্ত আছে। তবে ইউরোপের আদলে ছোট-ছোট কিন্তু উঁচু জাতের বেকারি এখনও খুব বেশি চালু হয়নি কলকাতায়। পম্পেইয়ের রুটি নিয়ে নিরীক্ষা কলকাতার পাঁউরুটি-আবেগ উস্কে দেবে বলেই আশা শঙ্করের। বেকারি-কনফেকশনারি বিশেষজ্ঞ শেফ শন কেনওয়ার্দি অবশ্য মনে করেন, এখনও শুধু কলকাতা নয়, গোটা ভারতেই বিশ্বমানের পাঁউরুটি কিছুটা অধরা। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁউরুটির বৈচিত্র ও গুণমান— দু’দিকেই খানিক কমতি কলকাতা। বাইরেটা মুচমুচে ভিতরটা নরম, এমন সেরা পাঁউরুটি বলতে এখনও ফ্রান্স, পর্তুগালের কথা মনে পড়ে।’’ সে দিক দিয়ে পাঁউরুটি নিয়ে নতুন নতুন নিরীক্ষা কলকাতার রসিকজনের জন্য সুখবর বলেই আশায় বিশেষজ্ঞেরা।

Bakery Pompei Bread History Bread
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy