পরীক্ষা জমে থাকা খাবার ক্ষইয়ে দিতে পারে দাঁত। নিজস্ব চিত্র।
ফাস্ট ফুডের কল্যাণে মুখ চলছে দেদার। দিনে-রাতের যে কোনও সময়ে চকলেটের আবেদনও অগ্রাহ্য করা কঠিন। আর এ হেন খাদ্যাভ্যাসে ক্ষতি হচ্ছে দাঁতের। পিৎজ়া, বার্গারের মতো চিটচিটে কার্বোহাইড্রেট দাঁতের ফাঁকে আটকে থেকে বাড়াচ্ছে দাঁতের ক্ষয়রোগ। সেই সঙ্গে খাবারে অতিরিক্ত চিনিও দাঁতের বিপদ ডেকে আনে।
এখানেই শেষ নয়। অত্যধিক ঠান্ডা পানীয় এবং অ্যালকোহলের অ্যাসিডে দাঁতের উপরের স্তর ‘এনামেল’ ক্ষয়ে যায়। দাঁতের এর পরের পর্যায় হল ডেন্টিন, যা অপেক্ষাকৃত নরম। তাই ডেন্টিনকে ঘায়েল করে দাঁতের মূল অংশ পাল্প-এ পৌঁছনো শত্রুপক্ষের পক্ষে অনেকটাই সহজ হয়। এই পাল্প-এ থাকে দাঁতের রক্ত এবং নার্ভ। ফলে সেখানে শত্রু হানা দিলেই শুরু হয় অসহ্য যন্ত্রণা। দন্ত চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকলে মুখের ভিতরে থাকা মাইক্রো অর্গানিজ়ম জেগে ওঠে। মাইক্রো অর্গানিজ়ম সেই খাবার খেয়ে অ্যাসিড তৈরি করে, যা আস্তে আস্তে ক্ষইয়ে দেয় দাঁত।
দাঁতের উপরে এই ধ্বংসলীলা বিশেষত চলে রাতে। কারণ, মস্তিষ্ক ঘুমিয়ে থাকার কারণে মুখ পরিষ্কার করার লালা সে সময়ে নিঃসরণ হয় না। ফলে নিশ্চিন্তে কার্যসিদ্ধি করে ওই মাইক্রো অর্গানিজ়ম। ফলে ফাস্টফুড, ঠান্ডা পানীয় এবং অ্যালকোহল নিয়মিত খেয়ে থাকেন যাঁরা, তাঁদের দাঁতের এনামেল দ্রুত উঠে যায়।
দাঁতের ক্ষতি করতে ওস্তাদ অত্যধিক ধূমপানও। একটানা সিগারেট খেলে দাঁতের উপরে একটি নরম স্তর তৈরি হয়। চিকিৎসকেরা যাকে ‘প্লাক’ বলেন। খাবার টানতে চুম্বকের মতো কাজ করে এই ‘প্লাক’। দাঁতের মসৃণ স্তর সরিয়ে দিয়ে এটি একটি রুক্ষ আবরণ তৈরি করে, যেখানে মাইক্রো অর্গানিজ়মের কাজ আরও দ্রুত হয়।ফলে একইসঙ্গে ক্ষতি হয় মাড়ি এবং দাঁতের।
সমাধান কী? দাঁত বাঁচাতে ফাস্ট ফুড, ঠান্ডা পানীয় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা এবং দাঁত পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন দন্ত চিকিৎসকেরা। দাঁতের শল্য চিকিৎসক সৌমেন ভাওয়াল বলছেন, ‘‘যদি নিতান্তই এই জাতীয় খাবার বর্জন না করেন, সে ক্ষেত্রে খাবার খেয়েই মুখ পরিষ্কার করুন। রাতে খাওয়ার পরে অবশ্যই দাঁত মাজুন। তবে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার ব্রাশ করেও বার করা যায় না। তখন নাইলনের সুতোর মতো এক ধরনের জিনিস, যাকে ফ্লস বলে, তা দিয়েই পরিষ্কার করে নেওয়া যায়। তাতে ফাঁকের খাবার সহজে বেরিয়ে আসে।’’ হ্যান্ডল লাগানো বিশেষ ফ্লস ও ওয়াটার ফ্লসও বাজারে এসে গিয়েছে, যা দিয়ে দ্রুত এবং সহজেই দাঁত পরিষ্কার করা সম্ভব। ফলে দাঁতের ফাঁকে আটকানো খাবারে মাইক্রো অর্গানিজ়মের তৎপরতাও আটকানো সম্ভব হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy