Advertisement
০৫ মে ২০২৪
BLOOD

কারণে-অকারণে রক্তক্ষরণের শিকার হতে পারেন হিমোফিলিয়ায়, জেনে নিন কী করবেন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাধারণ ভাবে সারা বিশ্বে পাঁচ হাজার নবজাতক পিছু এক জন হিমোফিলিয়া 'এ' ও কুড়ি হাজার নবজাতক পিছু এক জন হিমোফিলিয়া 'বি' রোগ নিয়েই জন্মায়।

চিকিৎসায় অবহেলা করলে এ অসুখ মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে। ছবি: শাটারস্টক।

চিকিৎসায় অবহেলা করলে এ অসুখ মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে। ছবি: শাটারস্টক।

মনীষা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ১১:২৫
Share: Save:

যে সব রোগের প্রকোপ সরাসরি মানুষের বেঁচে থাকাকেই চ্যালেঞ্জ করে বসে তার অন্যতম হিমোফিলিয়া।এই রোগে আক্রান্ত রোগীর কোনও ভাবে এক বার রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত জমাট বাঁধে না। রক্ততঞ্চনের জন্য মানবশরীরে যা যা উপাদান থাকা অত্যাবশ্যক, তার মধ্যে ফ্যাক্টর এইট বা ফ্যাক্টর নাইন অথবা উভয়ই জন্মগত ভাবে খুব কম থাকলে এই রোগ দেখা দেয়। তবে দু’টি প্রোটিনের উপস্থিতিইখুব কম, এমন সমস্যা খুবই বিরল।

ফ্যাক্টর এইট ও ফ্যাক্টর নাইন— দু’টিই আসলে বিশেষ প্রোটিন। প্রথমটির অভাব থাকলে হিমোফিলিয়া ‘এ’বা ক্লাসিক হিমোফিলিয়া আর দ্বিতীয়টির অভাব থাকলে হিমোফিলিয়া ‘বি’ বা খ্রিস্টমাস ডিজিজ বলা হয়। প্রথম ধরনের রোগটি দ্বিতীয়টির তুলনায় বেশি দেখা যায়। আর যে ক্ষেত্রে ওই দুই ধরনের প্রোটিনেরই উপস্থিতি খুব কম দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে খতিয়ে দেখা হয় মিউটেশনেকোন ধরনের প্রোটিনের মাত্রা বেশি কম। যে প্রোটিন তুলনায় কম, রোগীকে সেই প্রোটিনের জন্য নির্ধারিত সংশ্লিষ্ট অসুখের বিভাগে ফেলা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাধারণ ভাবে সারা বিশ্বে পাঁচ হাজার নবজাতক পিছু এক জন হিমোফিলিয়া 'এ' ও কুড়ি হাজার নবজাতক পিছু এক জন হিমোফিলিয়া 'বি' রোগ নিয়েই জন্মায়। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে এমন রোগীর আনুমানিক সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষাধিক। যার মধ্যে প্রায় আড়াই লক্ষ হিমোফিলিয়া 'এ'-র শিকার। এ রাজ্যে এই অসুখের দু’টি ধরন মিলে সংখ্যাটা প্রায় বাইশ-তেইশ হাজার। সম্প্রতি এই অসুখ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাহায্য নিয়ে একটি আলোচনাসভাও অনুষ্ঠিত হল খোদ কলকাতা শহরে। তাতে অংশ নিয়েছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গির দিন আসন্ন, এখনই এ সব উপায়ে রুখে দিন অসুখ

হিমোফিলিয়া প্রতিরোধের কোনও উপায় নেই। চিকিৎসাই একমাত্র উপায়।

হিমোফিলিয়া প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তনুজ সরকারের মত, রোগ মৃদু প্রকৃতির হলে শরীরের কোথাও কেটে বা ছড়ে গেলে বা সার্জারি-দাঁত তোলার পর প্রলম্বিত রক্তক্ষরণ হয়। রোগ মধ্যম প্রকৃতির হলে মল বা মূত্রের সঙ্গেও রক্তক্ষরণ হতে পারে, মহিলাদের মাসিক ঋতুচক্রের আয়ু বেড়ে যেতে পারে। রোগ চরম আকার নিলে কোনও কারণ ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকে, চামড়ার নীচে রক্তক্ষরণের বহু চিহ্ন বা কালশিটে দেখা যায়।

সুবর্ণবাবুর মতে, জেনেটিক মিউটেশানের ফলে এই ধরনের ফ্যাক্টর এইট বা নাইনের অভাব ঘটে। তাই এ রোগ প্রতিরোধের কোনও উপায় নেই। চিকিৎসাই একমাত্র উপায়। এর চিকিৎসা মূলত দু’রকম— রক্তক্ষরণ শুরু হলে যে ফ্যাক্টরটির অভাব, সেই ফ্যাক্টরটি শিরার মাধ্যমে দেওয়া (প্রতিকারমূলক) এবং রক্তক্ষরণ না হলেও নিয়মিত ব্যবধানে আগাম ফ্যাক্টর এইট বা নাইন, যেটির অভাব, সেইটি দেওয়া (প্রতিষেধক)।

আরও পড়ুন: আচমকা হার্ট অ্যাটাক? প্রাণ বাঁচাতে কী করতে হবে জানেন?

চিকিৎসকদের মতে, হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসায় রাজ্য সরকার সম্প্রতি বিশেষ উদ্যোগ নিতে চলেছে।ফ্যাক্টরগুলি অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। এত দিন যাবত এই রাজ্যে শুধুমাত্র মেডিক্যাল কলেজগুলির হেমাটোলজি বিভাগেই এই চিকিৎসা মিলত। এখন থেকে এই চিকিৎসা প্রতিটি জেলা হাসপাতালেও মিলবে। সরকারি নথি অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ডে-কেয়ার ভিত্তিতে এই চিকিৎসা শুরু করেছে দু’-একটি জেলা, যার মধ্যে আলিপুরদুয়ার অগ্রগণ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE