Advertisement
০৫ মে ২০২৪
heart

আচমকা হার্ট অ্যাটাক? প্রাণ বাঁচাতে কী করতে হবে জানেন?

যখন তখন হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে হার্ট কমজোরি থাকলে। সেই সময় যতটা দ্রুত সম্ভব হার্ট চালু করে দিলে আচমকা মৃত্যু ঠেকিয়ে দেওয়া যায়।

হঠাৎ হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। ছবি: শাটারস্টক।

হঠাৎ হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। ছবি: শাটারস্টক।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ১২:৫৩
Share: Save:

দ্রুতগতিতে বল পায়ে তিরগতিতে দৌড়চ্ছিলেন তরুণ ফুটবলার, গো-ও-ও-ল! সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠল, কিন্তু গোল দেওয়ার পরেই খেলোয়াড় আছড়ে পড়ে গেলেন মাঠে। যখন ডাক্তার এলেন তখন সব শেষ। কিংবা চেনা কোনও মানুষ বাজার সেরে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় পড়ে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন চিরকালের মতো।

হঠাৎ হৃদস্পন্দন থেমে গিয়ে আচমকা মৃত্যুর খবর প্রায়শই শোনা যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ‘সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ’। পথঘাটেই হোক বা বাড়ি কিংবা অফিসে যখন তখন হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে হার্ট কমজোরি থাকলে। সেই সময় যতটা দ্রুত সম্ভব হার্ট চালু করে দিলে আচমকা মৃত্যু ঠেকিয়ে দেওয়া যায়।

চিকিৎসকদের মতে, কাউকে আচমকা অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখলে প্রথমে দেখে নিতে হবে তার শ্বাসপ্রক্রিয়া চলছে কি না। যদি দেখা যায় অচেতন মানুষটির শ্বাস বন্ধ এবং নাড়ির গতিও ক্ষীণ, তখন দ্রুত বিশেষ পদ্ধতিতে হার্ট মাসাজ করলে প্রায় ৭০- ৭৫ শতাংশ মানুষকে সে যাত্রায় বাঁচানো যায় বলে দাবি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রবিন চক্রবর্তীর। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে আপনি-আমিও এই হৃদস্পন্দন চালু করার কাজটি করতে পারি। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ‘কার্ডিও পালমোনারি রিসাটিটেশন’ বা ‘সিপিআর’।

আরও পড়ুন: এই ভুলগুলোর জন্যই আক্রান্ত হতে পারেন মারণ রোগে! সাবধান!

সিপিআর বাঁচাতে পারে মরণাপন্নের প্রাণ।

সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ইলেকট্রোকার্ডিওলজি’-র ৪৭ তম জাতীয় সম্মেলনে (ISECON 2019) এই কথাই বললেন চিকিৎসক রবিন চক্রবর্তী । তাঁর মতে, ‘‘অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যা থাকলে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ঝুঁকি খুব বাড়ে। অথচ সঠিক চিকিৎসা করালে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় সহজেই।’’ এ প্রসঙ্গে বেঙ্গালুরুর খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জয়প্রকাশ জানালেন যে, ‘‘আমাদের হার্ট নির্দিষ্ট ছন্দে না চললে আচমকা মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। সাধারণ ভাবে আমরা যাকে হার্ট অ্যাটাক বলেই আমরা জানি। কিন্তু হার্টের স্পন্দনের গোলমাল তার থেকে আলাদা, ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ‘অ্যারিদমিয়া’। হার্টের ইলেকট্রিকাল ইমপাল্‌সের গোলমাল হলেই হৃদস্পন্দনের ছন্দ বেড়ে অথবা কমে যায়। এরই ফলশ্রুতি সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ।’’

কখনও পথে পড়ে গিয়ে, কখনও বা ঘুমের মধ্যে আবার কখনও খেলার মাঠেও হার্ট থেমে যেতে পারে। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বিশ্বের প্রতি ১৮ জন পূর্নবয়স্ক মানুষের মধ্যে ১ জনের হার্টের ছন্দ অনিয়মিত। এমনকি অনেকে জানেনই না যে তাঁর সমস্যা আছে। শরীর ও মনের অতিরিক্ত স্ট্রেস এই অ্যারিদমিয়ার সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। এর চরম পর্যায়ে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ঝুঁকি বাড়ে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত সিপিআর শুরু করলে একজন নন মেডিক্যাল মানুষও অনায়াসে আচমকা মৃত্যু রুখে দিতে পারেন।

চিকিৎসকদের মতে, হাঁটতে চলতে হাঁফিয়ে উঠলে একটা ইসিজি করিয়ে দেখে নেওয়া দরকার হৃদস্পন্দনের সমস্যা আছে কি না। ট্রাফিক পুলিস, ড্রাইভার, এয়ারপোর্টের কর্মীদের সিপিআর ট্রেনিং থাকলে অনেক আচমকা মৃত্যুই এড়ানো যায়। স্লিপ অ্যাপনিয়ার (নাক ডাকার সমস্যা) সঙ্গে অ্যারিদমিয়া থাকলে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। আর এই কারনেই হার্টের চিকিৎসায় ইলেকট্রোফিজিওলজির গুরুত্ব বাড়ছে। আমাদের দেশের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ হার্টের রিদম ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। এদের সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ঝুঁকি খুব বেশি।

আরও পড়ুন: অতিরিক্ত ওজন, সঙ্গে হাঁটুর ব্যথা? অল্প পরিশ্রমের এ সব ব্যায়ামেই বাজিমাত!

প্রশিক্ষণ ছাড়া সিপিআর পদ্ধতি প্রয়োগ নয়।

কী করতে হবে সিপিআর-এর ক্ষেত্রে

অসেতন হওয়ার ৫-৬ মিনিটের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া কার্যকর করা প্রয়োজন। রোগীকে চিত করে শুইয়ে মাথাটা সামান্য পিছনে হেলিয়ে দিন, থুতনি যেন উপরের দিকে থাকে। এর পর রোগীর মুখের ভিতর লালা বা কফ আটকে আছে কি না দেখতে হবে। জিভটাও খেয়াল করে দেখুন কোনও ভাবে উল্টে আছে কি না। তেমন হলে কফ বা লালা আঙুল দিয়ে বার করে শ্বাস চলাচলের পথ মসৃণ করবেন। জিভও সোজা করে দিন। তার পর আক্রান্তকে কার্ডিয়াক মাসাজ ও মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং দিতে হবে। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকলে এই পদ্ধতি

কার্ডিয়াক মাসাজ

ব্যক্তির এক পাশে এসে বুক বরাবর বসুন। এ বার এক হাতের তালুকে বুকের মাঝ বরাবর রাখুন। তার উপর অপর হাত রেখে দুই হাতের আঙুল দিয়ে দুই হাতকে আঁকড়ে রাখতে হবে। এ বার হাতের কনুই ভাঁজ না করে সোজাভাবে বুকের ওপর চাপ দিতে হবে। প্রতি মিনিটে ১০০-১২০টি চাপ প্রয়োগ করা হয়। এ ভাবে প্রতি তিরিশটি চাপ দেওয়ার পর আক্রান্তকে মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং সিস্টেমে নিয়ে যেতে হবে। তবে এই পুরো মাসাজটিই আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে তবেই প্রয়োজ করতে হবে। প্রশিক্ষণ না নিয়ে করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE