ফ্যাট মাত্রই তা খারাপ নয়। ছবি: শাটারস্টক।
আমরা যেমন ভাবি, ফ্যাট মানেই খারাপ, তা কিন্তু নয়৷ ভাল ফ্যাটও আছে৷ যেমন, মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা ‘মুফা’ ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা ‘পুফা’৷ চর্বিহীন খাবার খেতে গিয়ে তাদের বাদ দিয়ে দিলে বিপদ৷ চিকিৎসকদের মতে, স্যাচুরেটেড ফ্যাটও পুরোপুরি বাদ দেওয়ার দরকার নেই৷ খাবারের মোট ক্যালোরির ১০ শতাংশের মতো স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে এলে তাতে কোনও ক্ষতি হয় না৷ বরং শরীর ভাল রাখতে ছাড়তে হয় ট্রান্স ফ্যাট৷ সেই হল যত নষ্টের গোড়া!
মন্দ ফ্যাট , ট্রান্স ফ্যাট
ট্রান্স ফ্যাট বেশি খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল বাড়ে, কমে ভাল কোলেস্টেরল এইচডিএল৷ ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে আশঙ্কা বাড়ে ডায়াবিটিসের৷ খারাপ হতে শুরু করে হার্ট৷ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দিনে যত ক্যালোরি খাওয়া হয়, তার দু’শতাংশও যদি ট্রান্স ফ্যাট থেকে আসে, হৃদরোগের আশঙ্কা প্রায় ২৩ শতাংশ বেড়ে যায়৷ বাড়ে অন্য বিপদও৷
রেড মিট, মাঠা বা মাখনযুক্ত দুধ ও সেই দুধে বানানো খাবারে এই মন্দ ফ্যাট থাকে সামান্য পরিমাণে, তাতে খুব একটা ক্ষতি হয় না৷ ক্ষতি করে ‘পার্শিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল’ বা বনস্পতি৷ এ দিকে বনস্পতি দিয়ে বানানো খাবার বেশি দিন টাটকা থাকে বলে আমরা সচরাচর যে সব খাবার কিনে খাই, যেমন, বিস্কুট, পেস্ট্রি, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি, তাতে এই মন্দ ফ্যাটের পরিমাণ খুব বেশি থাকে৷
আরও পড়ুন: জল পরিশুদ্ধ থেকে ওবেসিটি রুখে দেওয়া, এই বোতলের জাদুই এমন!
বিস্কুট বা কুকিজ এড়িয়ে চলুন।
মন্দ ফ্যাট এড়াতে কী করবেন?
প্রধাণত, বনস্পতি বর্জন করুন৷ প্যাকেটজাত খাবার কেনার আগে দেখে নিন তাতে ট্রান্স ফ্যাট আছে কি না বা থাকলে কতটা আছে৷
‘আমেরিকান ডায়েটারি অ্যাসোসিয়েশন’-এর মতে, দিনে দু’গ্রামের বেশি ট্রান্স ফ্যাট খাওয়া ঠিক নয়৷ তবে আমেরিকান হিসাবে খাবারে ০.৫ গ্রামের কম ট্রান্স ফ্যাট থাকলে লেভেলে শূন্য গ্রামই লেখা হয়৷ কাজেই, লেভেল পড়ে সব ঠিক আছে মনে হলেও কার্যক্ষেত্রে হয়তো দেখা যায় বিন্দু বিন্দু করে যোগ হয়ে পৌঁছে গিয়েছেন বিপদসীমার ওপারে৷ কাজেই কয়েকটি খাবারও এড়িয়ে চলুন৷ যেমন—
বিস্কুট বা কুকিজ, ক্র্যাকার, মাইক্রোওয়েভ, পপকর্ণ, চিপ্স, ক্যান্ডি ইত্যাদি৷ স্টিক মার্জারিন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রায়েড চিকেন, চিকেন নাগেট, ফিস ফ্রাই, ফিস ফিঙ্গার ইত্যাদি৷ প্রি–মিক্স প্রোডাক্ট যেমন, কেক মিক্স, প্যানকেক, চকোলেট মিল্ক৷
‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’ মন্দের ভাল
হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ভয়ে কিছু দিন আগেও স্যাচুরেটেড ফ্যাট ব্রাত্য ছিল৷ সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, ঘাস খায় এমন পশুর মাংস বা দুধ ও সেই দুধে বানানো দই–ঘি–মাখন এবং দেশি মুরগি খেলেও এই ফ্যাট মেলে। মোট ক্যালোরির ১০ শতাংশের কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে এলে শরীরের উপকারই হয়৷
‘অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যাঁরা স্যাচুরেটেড ফ্যাট খান আর যাঁরা খান না, তাঁদের হৃদরোগের শিকার হওয়ার হার মোটামুটি এক৷ তবে স্যাচুরেটেড ফ্যাটে আসক্ত হয়ে পড়লেও সমস্যা। এতে হৃদরোগের আশঙ্কা না বাড়লেও, স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বদলে ওই পরিমাণ ভাল ফ্যাট খেলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে।
‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশন’-এর গবেষকদের মতে, লো–ক্যালোরি সুষম খাবারের সঙ্গে মাত্রা রেখে ফুল ফ্যাট দুধ–দই ইত্যাদি খেলে শরীরে চর্বি কম জমে৷ অল্প করে মাখন খেলেও লো–ক্যালোরি পুষ্টিকর ডায়েট বজায় রেখে চলা সহজ হয়৷
আরও পড়ুন: এই সব লক্ষণ দেখলেই সাবধান, অজান্তে ডায়াবিটিস দানা বাঁধেনি তো?
গরু–মোষের দুধ এবং এই দুধে বানানো ঘি, মাখন, চিজ, ইয়োগার্ট যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর৷
স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোনটা, কতটা, কী ভাবে
প্রক্রিয়াজাত মাংস, যেমন হ্যাম–সসেজ–বেকন, প্যাকেটজাত খাবার, রেস্তঁরার খাবারে থাকে ক্ষতিকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট। তাই এ সব না খাওয়াই ভাল৷ দেশি মুরগির মাংস–ডিম, মাছ, মটর, রাজমা, ছোলা ইত্যাদিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে৷ খেতে পারেন৷ তবে ভাজা করে নয়৷ রোস্ট, গ্রিল, সেদ্ধ বা সতে করে৷ রেড মিট খেতে চাইলে অর্গানিক পশুর মাংস খান৷ এতে ক্ষতি কম, উপকার বেশি৷ দুধ খেতেই হবে এমন কথা নেই৷ বরং বড়দের ক্ষেত্রে দুধ হজম করা কঠিন। তবে যদি খান, ফুল ফ্যাট দুধ খাবেন৷ গৃহপালিত গরু–মোষের দুধ এবং এই দুধে বানানো ঘি, মাখন, চিজ, ইয়োগার্ট যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর৷ স্ন্যাক্স হিসেবে কর্ন বা পটেটো চিপ্স একেবারেই খাবেন না। এতে কেবল স্যাচুরেটেডল ফ্যাট আছে এমনই নয়, অতিরিক্ত চিনিও থাকে, যা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy