Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Dentist

করোনা ঠেকাতে দাঁত ও মুখের এই সব যত্নও নিতে হবে  

ডেন্টাল সার্জন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, "ওরাল হাইজিন অর্থাৎ মুখের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে কিছুটা প্রতিহত করা যায়।”

ছবি: শাটারস্টক

ছবি: শাটারস্টক

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়  
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ১৯:৫১
Share: Save:

পৃথিবী জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ভাইরাস কোভিড-১৯ তো বটেই, এ ছাড়াও অনেক ধরনের করোনভাইরাসের প্রথম ও প্রধান আশ্রয়স্থল আমাদের মুখের ভিতরভাগ। আর এই কারণেই মুখে চাপা দিয়ে হাঁচি-কাশির অভ্যাস আয়ত্ত করা কিংবা কথা বলার সময় দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়। করোনা অতিমারির আগে বেশির ভাগ মানুষই বিষয়টা গ্রাহ্য করতেন না। কোভিড-১৯ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, কাফ এটিকেট ও হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনা ছড়িয়ে পড়া আটকানোর কোনও রাস্তা নেই। বলছিলেন ম্যাক্সিলো ফেসিয়াল সার্জন উদয় মুখোপাধ্যায়।

উদয় জানালেন, "বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, মুখের ভিতরে থাকা লালাগ্রন্থিতে কোভিড-১৯ ভাইরাস চুপচাপ বসে থাকে। সেই সময়টাতে আক্রান্তের কোনও রকম উপসর্গই থাকে না, অর্থাৎ অ্যাসিম্পটোম্যাটিক অবস্থায় থাকেন। এই অবস্থায় হাঁচি, কাশি, কথা বলার সময় ড্রপলেটের মাধ্যমে অসুখ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুব বেশি।"

ডেন্টাল সার্জন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, "ওরাল হাইজিন অর্থাৎ মুখের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে কিছুটা প্রতিহত করা যায়। লকডাউন চলাকালীন এবং পরবর্তী পর্যায়ে নিতান্ত দরকার না হলে ডেন্টাল চেম্বারে যাওয়া ঠিক নয়। অনেক সময় উপসর্গহীন রোগীর কাছ থেকে চিকিৎসকের নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।" তাই কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ে দন্তচিকিৎসকদের পিপিই পরে রোগী দেখা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকদের অভিমত, অনেক সময় দাঁত বা চোয়ালের আপৎকালীন সমস্যাতে অস্ত্রোপচারের দরকার হতে পারে। তবে এই পরিস্থিতিতে নিতান্ত দরকার হলে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়ে তারপর সার্জারি করা যেতে পারে। এই সময় মুখগহ্বরের বিশেষ যত্ন নেওয়াও উচিত।

শুভঙ্করবাবু জানালেন এমনই কিছু উপায়। দেখে নিন ঠিক কিভাবে দাঁত ও মুখের যত্ন নিতে হবে।

১) নিয়ম করে দু'বার ব্রাশ করা উচিত। ১৫ দিন পর পর ব্রাশ বদলে নিতে পারলে ভাল হয়।

২) বাড়ির বাইরে গেলে ফেরার পর গরম জলে নুন দিয়ে গার্গল করে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া দিনে ৩ / ৪ বার নুন-জলে কুলকুচি করলে ভাল হয়।

৩) দাঁতে কিছু আটকে গেলে ফ্লস দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

৪) দিনে দু'বার মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলে ভাল হয়। দরকার হলে ডেন্টাল সার্জনকে ফোন করে মাউথ ওয়াশের নাম জেনে নিতে পারেন।

৫) অনেক সময় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ হিসেবে মুখের ভিতরে, জিভে বা ঠোঁটে আলসার হতে পারে। তবে মুখে আলসার মানেই কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ভেবে আতঙ্কিত হবেন না। ভয় না পেয়ে ছবি তুলে চিকিৎসককে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিন। তাতেও চিকিৎসা সহজ হবে।

৬) জিভের স্বাদ চলে যাওয়া ও গন্ধের বোধ কমে যাওয়ার সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের যোগ রয়েছে বলে কথা শোনা যায়। এই নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না, কিন্তু টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।

৭) মুখে বা দাঁতে হাত কিংবা টুথপিক দিয়ে অযথা খোঁচাখুচি করবেন না।

৮) দাঁত দিয়ে নখ কাটবেন না। বাচ্চাদেরও এই বিষয়ে সচেতন করতে হবে।

৯) চকোলেট, চিপস, বেশি চিনি বা মিষ্টি দেওয়া স্টিকি খাবার খাবেন না। পেয়ারা, লেবু, কলা, আপেল জাতীয় ফল খাওয়া বাড়ালে মুখগহ্বরের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে। রোজ পর্যাপ্ত শাকসব্জি ও ফাইবারযুক্ত খাবার খান।

১০) যে কোনও খাবার খাওয়ার পর ভাল করে কুলকুচি করে নিন।

১১) মুখগহ্বরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখুন এবং যখন-তখন মুখে বা দাঁতে হাত দেবেন না।

১২) পান, খয়ের, তামাক, গুটখা খাবেন না।

১৩) যেখানে সেখানে থুতু ও চিবনো চিকলেট ফেলবেন না ।

১৪) ব্রাশ রাখুন পরিষ্কার জায়গায়। সবার ব্রাশ একসঙ্গে না রেখে আলাদা আলাদা রাখুন। ব্রাশে ক্যাপ লাগিয়ে রাখতে পারলে ভাল হয়। দাঁত মাজার আগে ভাল করে ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।

১৫) অন্যদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে না খাওয়াই ভাল। বিশেষ করে অফিসে এখনই এক টিফিনবাক্স থেকে খাবার শেয়ার করবেন না।

১৬) খাবার আগে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ও মুখ ধুয়ে নিতে হবে।

১৭) মাস্ক পরে বেরলে বাড়ি ফিরে সাবান দিয়ে অবশ্যই কেচে নেবেন। ডিসপোসেবল মাস্ক হলে তা ফেলে দেবেন।

১৮) দাঁত বা মাড়িতে কোনও রকম সমস্যা হলে ফেলে না রেখে টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dentist COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE