Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
cooking oil

তেলের দোষেই অসুখ বাড়ে, কী তেল কোন রান্নায় দিলে সুস্থ থাকবে শরীর?

কখন কোন তেল কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সম্বন্ধে ধারণা থাকে না বলেও বিপদ বাড়ে৷

রান্নার তেলে নজর রাখলে এড়ানো যায় নানা অসুখ। ছবি: আইস্টক।

রান্নার তেলে নজর রাখলে এড়ানো যায় নানা অসুখ। ছবি: আইস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ১৫:৩৯
Share: Save:

বাঙালির রান্না সচরাচর তেলে–ঝালে ভরপুর থাকে। সেদ্ধ খেলেও আমাদের তেল লাগে, স্যালাডেও লাগে। ভাজাভুজি–মাছ–মাংস হলে তো কথাই নেই৷ চিকিৎসকরা যতই দিনে ৩–৪ চামচ খাওয়ার কথা বলুন না কেন, সে লক্ষ্মণরেখা প্রায়শই পার হয়ে যায়৷ ফলত সমস্যাও বাড়ে৷

আবার শুধু যে বেশি তেল খাওয়া হয় বলে সমস্যা হয় তাও নয়, কখন কোন তেল কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সম্বন্ধে ধারণা থাকে না বলেও বিপদ বাড়ে৷

যে তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে, সেই তেলে রান্না করা খাবার খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়তে পারে৷ খারাপ হতে পারে হার্টের কলকব্জাও

আরও পড়ুন: বর্ষায় ভাইরাল ফিভারের হানা শুরু, উপসর্গ কী কী? ঠেকাবেনই বা কী ভাবে?

বাদাম তেল স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।

তেলের ভালমন্দ

মূলত তিনটি ফ্যাটি অ্যাসিড মিলে তৈরি হয় তেল৷ স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা এসএফএ, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা ‘পুফা’ (মূলত ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড মিলে তৈরি হয়) ও মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা ‘মুফা’ তাদের নাম৷ ট্রান্স ফ্যাট নামে একটি ক্ষতিকর উপাদানও কখনও কখনও মেশানো হয় তাতে৷ এ বার এদের মধ্যে কোনটা কী মাত্রায় আছে তার উপর নির্ভর করে তেলের ভাল–মন্দ৷ ১০ গ্রাম তেলের মধ্যে—

ক) ২ গ্রামের কম স্যাচুরেটেডে ফ্যাট থাকলে

খ) ট্রান্স ফ্যাট না থাকলে

গ) মুফার চেয়ে পুফা বেশ খানিকটা কম থাকলে তবেই সেই তেল হবে উঁচু জাতের৷ সেই তেলে রান্না করা খাবার খেলে রক্তে ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে, খারাপ কোলেস্টেরল কমে৷ দুইয়ের প্রভাবে ভাল থাকে হার্ট৷

আর এক বিচার্য বিষয় হল ওমেগা সিক্স ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাত৷ বিজ্ঞানীদের মতে এই অনুপাত ২ : ১ থেকে ৪ : ১–এর মধ্যে হওয়া উচিত৷ সানফ্লাওয়ার তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট খুব কম থাকে৷ ওমেগা সিক্স ও ওমেগা থ্রি–র অনুপাত থাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে৷ ভিটামিন ই–ও থাকে প্রচুর৷ কাজেই হার্টের রোগীরা অনায়াসে এই তেলে রান্না করা খাবার খেতে পারেন৷ ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ’-এর মত অনুযায়ী, সেই তেলই হল আদর্শ তেল যাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মুফা, পুফার অনুপাত হবে যথাক্রমে ২.৭–৩% : ৩.৩–৪% : ২.৭–৩%–এর মধ্যে৷ রাইস ব্র্যান অয়েলও খুবই উপকারি৷ এতে গামা ওরাইজেনোল নামে যে রাসায়নিক আছে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে তার ভূমিকা বিরাট৷ অলিভ অয়েলের তো তুলনাই নেই৷ এক্সট্রা ভার্জিন ভ্যারাইটি খাওয়া খুবই ভাল৷ তবে স্মোক পয়েন্ট কম বলে বাঙালি রান্নায় এর খুব একটা ব্যবহার নেই৷ তেলের উপকার পূর্ণ মাত্রায় পেতে গেলে দিনের এক একটা পদ এক একটা তেলে রান্না করা ভাল৷ কিংবা ১৫ দিন-এক মাস এক ধরনের তেল ব্যবহার করে পরের পর্বে অন্য তেল ব্যবহার করতে পারেন৷ কোন তেল কত তাপ সহ্য করতে পারে অর্থাৎ কত তাপমাত্রায় জ্বলে গিয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি করতে শুরু করে— যাকে বলে ‘স্মোক পয়েন্ট’, সেটা দেখেও ভাল–মন্দ বিচার করা হয়৷

আরও পড়ুন: বর্ষায় জামাকাপড় শুকোতে সমস্যা? পোশাকে ছত্রাক হানা? রইল উপায়

স্যালাড বা সতে-য় ব্যবহার করুন অলিভ অয়েল।

কোন তেল কী ভাবে

ভাল করে ভাজাভুজি করে রান্না করতে গেলে এমন তেলে করা উচিত যা উচ্চ তাপে ভেঙে গিয়ে খারাপ রাসায়নিক তৈরি করতে না পারে৷ যেমন, বাদাম, সর্ষে, ক্যানোলা, সানফ্লাওয়ার, সয়াবিন, রাইস ব্র্যান বা তিল তেল৷ অলিভ অয়েলের স্মোক পয়েন্ট বেশ কম৷ সে কারণে সাধারণ ঝাল–ঝোল বা ভাজাভুজিতে ব্যবহার না করে শাক–সব্জি–মাছ, স্টিম বা সতে করার জন্য বা স্যালাড বানানোর সময় ব্যবহার করা ভাল৷ সব রকম ফ্যাটি অ্যাসিডের গুণ পেতে তেল মিলিয়ে–মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত৷ যেমন সর্ষে, রাইস ব্র্যান ও অলিভ অয়েল বা সয়াবিন, রাইস ব্র্যান ও সানফ্লাওয়ার অয়েল।

ভাজাভুজির পর বেঁচে যাওয়া তেল পরে আর ব্যবহার করবেন না৷ এতে প্রচুর ক্ষতি হয় শরীরের৷ যার মধ্যে অন্যতম হল ক্যানসার৷ কাজেই রাস্তার চপ–কাটলেট যে এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE