Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
kidney

প্রয়োজনে কিডনি বদলাতে হতে পারে, মানতে হবে কী কী নিয়ম?

কী ভাবে প্রস্তুতি চলবে? রইল সে সবের হালহদিশ।

সতর্ক থেকে ম্যাচিং করে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হলে ও নিয়ম মানলে সুস্থ থাকা যায় বহু বছর। ছবি: শাটারস্টক।

সতর্ক থেকে ম্যাচিং করে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হলে ও নিয়ম মানলে সুস্থ থাকা যায় বহু বছর। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:৩৮
Share: Save:

কোনও রোগ হয়ে কিডনি ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দিলে দেখা দেয় ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। তখন ডায়ালিসিস করে শরীরের দূষিত পদার্থ ও জমা জল বার করে কষ্ট কমানো যায় ঠিকই, কিন্তু কিডনির কাজ তো শুধু বর্জ্য বার করা নয়, আরও অসংখ্য কাজ করে সে৷ এ সব করতে গেলে দ্রুত সুস্থ কিডনি জোগাড় করে তা বসাতে হয়।

চিকিৎসকদের মতে, ভয়ের কিছু নেই তাতে৷ কারণ সতর্ক থেকে ম্যাচিং করে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হলে ও নিয়ম মানলে অপারেশনের পর ২০–২৫ বছর পর্যন্ত সুস্থ ভাবে বাঁচা আজকালকার দিনে কোনও বড় ব্যাপার নয়৷ কিডনি যিনি দান করছেন, তাঁরও কোনও সমস্যা হয় না।

কিন্তু কী ভাবে প্রস্তুতি চলবে? রইল সে সবের হালহদিশ।

কিডনি পাল্টানোর প্রস্তুতি

ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করা হয়৷ কিছু ক্ষেত্রে ম্যাচিং না হলেও ট্রান্সপ্লান্ট করা যায়৷ তবে ব্যাপারটা জটিল৷ খরচও বেশি। খুব কম ক্ষেত্রেই তাই তা করা হয়। টিস্যু ম্যাচিংও করা হয়৷ বাবা–মায়ের সঙ্গে ম্যাচিং হয় প্রায় ৫০ শতাংশ, ভাই–বোনের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ, একরকম দেখতে যমজ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রায় পুরোপুরি৷ তবে আজকাল ওষুধপত্রের দৌলতে টিস্যু ম্যাচিং তত ভাল না হলেও ট্রান্সপ্লান্টের ফলাফল ভাল হচ্ছে। টি সেল ক্রস ম্যাচ হয়৷ ম্যাচিং ঠিক না হলে বসানোমাত্র কিডনিকে বর্জন করে শরীর। ডায়াবিটিস, হাইপ্রেশার বা কিডনির অসুখ না থাকলে ১৮–৬০ বছর বয়সী যে কেউ কিডনি দিতে পারেন। রক্তের সম্পর্কযুক্ত আত্মীয়দের কাছ থেকে কিডনি নেওয়ার নিয়ম৷ না পাওয়া গেলে স্বামী/স্ত্রীর কাছ থেকে নেওয়া যায়৷ চলতে পারে কিডনি সোয়াপিংও।অর্থাৎ আমার পরিবারে কিডনি লাগবে কিন্তু পরিবারে কারও সঙ্গে ভাল ম্যাচিং হচ্ছে না, ও দিকে আবার একই ঘটনা ঘটছে অন্য পরিবারে— তখন তাঁদের সঙ্গে বদলাবদলি করে ট্রান্সপ্লান্ট করা যায়৷ তেমন প্রসদ্য মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে এমন মানুষের দেহ থেকেও কিডনি নেওয়া যায়। রোগীর বয়স ৭৫–এর বেশি হলে, গুরুতর হার্টের অসুখ, ক্যান্সার বা জটিল মানসিক অসুখ থাকলে ট্রান্সপ্লান্ট বিপজ্জনক৷ শরীরে জটিল সংক্রমণ থাকলে তা সারিয়ে কাজে নামা হয়।

সেরে ওঠা ও তার পরবর্তী নিয়ম

‘‘কিডনি বদলানোর ভয় ক্রমে কমছে। কিছু বাড়তি সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চললে এর পরেও কোনও ভয় তেমন থাকে না। তবে সংক্রমণ এড়াতে সাবধানতা মেনে চলতেই হয়।’’— জানালেন নেফ্রোলজিস্ট অভিজিৎ তরফদার। সাধারণত: অন্য কারও হাঁচি, কাশি, জ্বর বা পেট খারাপ হলে তার থেকে দূরে থাকতে হয় রোগীকে৷ জল ও খাবার খেতে হয় ফুটিয়ে৷ বাসন ধুতে হয় পরিষ্কার জলে৷ সারা বাড়ি— বিশেষ করে রান্নাঘর–বাথরুম পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়৷ বাইরের খাবার ও জল, চর্বিজাতীয় খাবার, ভাজা ও ডায়াবিটিস–উচ্চ রক্তচাপ থাকলে শর্করা জাতীয় খাবার, নুন ও নোনতা খাবার এবং বেশি কোলেস্টেরল আছে এমন খাবার নিষিদ্ধ৷ বারণ হয় বেদানা, আঙুরের রস, গ্রিন টি৷ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাওয়া যায় না।

প্রথম ৩ মাস সপ্তাহে এক বার ডাক্তার দেখাতে হয়। পরের ৩ মাস দু–সপ্তাহে এক বার৷ ৬ মাস থেকে এক বছর মাসে এক বার করে৷ আর এক বছর পর থেকে ৩ মাসে এক বার। যত দিন যায় ওষুধ কমতে থাকে৷ চেক আপেও অতবার আসতে হয় না।

কাশি–জ্বর হলে, ইউরিন বা খিদে কমে গেলে, বমিভাব থাকলে বা বমি হলে, রক্তচাপ বেড়ে গেলে, অপারেশনের জায়গা ফুলে গেলে বা ব্যথা হলে দ্রুত ডাক্তার দেখানো দরকার৷ পেটে বেশি চাপ পড়ে এমন কাজ ছাড়া বাকি সব করা যায়৷ জিম, সাঁতার, সাধারণ কাজকর্ম, সব৷ সহবাস ও গর্ভসঞ্চারেও অসুবিধে নেই।

আইডেন্টিকাল টুইনদের বছর খানেকের বেশি ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট খেতে হয় না৷ ইমিউনোসাপ্রেসেন্টের কিছু সমস্যা আছে৷ যেমন, ওজন–প্রেশার–সুগার বাড়া, হাড় পাতলা হওয়া, চুল ওঠা, মুখে লোম গজানো, নানা ধরনের রোগ সংক্রমণ, মুখের মধ্যে বা চামড়ায় ঘা, ইউরিন সংক্রমণ ইত্যাদি। লিম্ফোমা এবং স্কিন ক্যানসারও হয় সামান্য কিছু ক্ষেত্রে৷ তবে সাবধানে থাকলে ও নিয়মিত চেক আপ করালে সবই মোটামুটি সামলে ফেলা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kidney Health Tips Fitness Tips Kidney Transplant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE