Advertisement
E-Paper

প্লাস্টিকের কৌটোয় খাবার বাড়াচ্ছে বিপদ

উৎসবের মরসুমে সাধারণত হোটেল-রেস্তরাঁতে ভিড় উপচে পড়ে। তাই এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা ভিড় এড়াতে বাড়িতে বসেই খাবারের অর্ডার দেন। এর জন্যে বর্তমানে শহরে বেশ কিছু হোম ডেলিভারি সংস্থা তৈরি হয়েছে, যারা হোটেল-রেস্তরাঁ থেকে খাবার সংগ্রহ করে তা বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২৮
অস্বাস্থ্যকর: এমন প্লাস্টিকের কৌটো করেই খাবার পৌঁছয় ক্রেতার হাতে। বুধবার, চাঁদনি চকে। নিজস্ব চিত্র

অস্বাস্থ্যকর: এমন প্লাস্টিকের কৌটো করেই খাবার পৌঁছয় ক্রেতার হাতে। বুধবার, চাঁদনি চকে। নিজস্ব চিত্র

হোটেল-রেস্তরাঁ থেকে প্লাস্টিকের কৌটোয় বাড়িতে অথবা অফিসে আসছে বিরিয়ানি থেকে চাউমিন, মাটন চাঁপ থেকে চিকেন কাবাব। সঙ্গে প্লাস্টিকের চামচ অথবা কাঁটা চামচ। পাড়ার দোকানে বা বাজারে যেখানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার না করা নিয়ে জোরদার সচেতনতার প্রচার চলছে, সেখানে হোম ডেলিভারিতে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে ছোট-বড় এই প্লাস্টিকের কৌটো। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে রীতিমতো ক্ষতিকারক বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পরিবেশকর্মী থেকে শুরু করে ফুড টেকনোলজির বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরাই জানাচ্ছেন, দেশের অন্য মেট্রো শহরগুলি খাবারের ক্ষেত্রে এই প্লাস্টিকের কৌটোর ব্যবহার নিয়ে যথেষ্ট সচেতন হলেও সে দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে মহানগর কলকাতা।

উৎসবের মরসুমে সাধারণত হোটেল-রেস্তরাঁতে ভিড় উপচে পড়ে। তাই এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা ভিড় এড়াতে বাড়িতে বসেই খাবারের অর্ডার দেন। এর জন্যে বর্তমানে শহরে বেশ কিছু হোম ডেলিভারি সংস্থা তৈরি হয়েছে, যারা হোটেল-রেস্তরাঁ থেকে খাবার সংগ্রহ করে তা বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা পৌঁছোচ্ছে এই প্লাস্টিকের কৌটোতে, যা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞেরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক উৎপল রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, বেশির ভাগ প্লাস্টিকের কৌটো যাতে খাবার নিয়ে যাওয়া হয়, তা আদৌ উপযুক্ত নয়। তাঁর কথায়, ‘‘খাবারের মধ্যে যে ফ্যাট জাতীয় পদার্থ রয়েছে অথবা খাবারে রং আনার জন্য যে মশলা বা শস দেওয়া হয়, সেগুলি প্লাস্টিকের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে এবং খাবারের গুণগত মানের পরিবর্তন ঘটায়। যা অনেক সময়েই স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।’’

শুধু খাবারের মান পরিবর্তনই নয়। দূষণের জন্যেও প্লাস্টিকের এই খাবারের কৌটোকে দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা। বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত
বলেন, ‘‘হোম ডেলিভারিতে আনা এই সব প্লাস্টিকের কৌটো বাড়িতে অন্য খাবার রাখার কাজেও ব্যবহার করা হয়। যা একেবারেই উচিত নয়। ওই কৌটো বহুবার ব্যবহারের পরে যেখানে সেখানে ফেলে দিলে পরিবেশও দূষিত হয়।’’ আর এক পরিবেশকর্মী নব দত্তের অভিযোগ, ‘‘প্লাস্টিকের গুণগত মান কী হবে, তা দেখার কোনও পরিকাঠামো
শহরে নেই। এমনকি, হোম ডেলিভারিতে যে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের চামচ- কাঁটা চামচের ব্যবহার হচ্ছে, তাও পরিবেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক।’’

প্লাস্টিকের কৌটোর এই বিপদ নিয়ে কী বলছে শহরের হোটেল-রেস্তরাঁগুলি? শহরের একটি নামী চিনা রেস্তরাঁ চেনের কর্ণধার দেবাদিত্য চৌধুরীর দাবি, ‘‘খাবার নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত, এমন মানের প্লাস্টিকের কৌটাতেই সবসময় হোম ডেলিভারির খাবার দিই আমরা। তবে কোনও দিন যদি এরকম নির্দেশিকা আসে যে, প্লাস্টিকের কৌটায় খাবার দেওয়া যাবে না, তা হলে তা আমরা বন্ধ করে দেব।’’ আর একটি নামী বিরিয়ানি দোকানের কর্ণধার মহম্মদ জামাল আহম্মদ জামাল বলেন, ‘‘এক সময় হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে কাগজের প্যাকেটে বিরিয়ানি দিতাম। আর মাংসের চাঁপ দিতাম মাটির পাত্রে। কিন্তু এখন বেশির ভাগ সময়ে প্লাস্টিকের কৌটোই ব্যবহার হয়। তবে সেই প্লাস্টিকের মান ভাল।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই ‘ভাল মানের’ প্লাস্টিক আদৌ কতটা ভাল? প্লাস্টিকের কৌটোর গুণমান নিয়ে এই বিতর্কের জেরে ইতিমধ্যেই দেশের অন্য বড় শহরগুলিতে হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্রাত্য হয়েছে এই প্লাস্টিকের কৌটো। মুম্বইয়ের তরুণী স্নেহাল ভালকর বলছেন, ‘‘কাজের চাপে রেস্তরাঁয় গিয়ে খাওয়া হয় না। তাই মাঝেমধ্যে হোম ডেলিভারিতেই খাবার নিই। বেশির ভাগ সময়ে খাবার ফয়েল প্যাকে আসে। ঝোল জাতীয় কিছু খাবার আসে পাতলা টিনের পাত্রে। প্লাস্টিকের চামচের বদলে বেশির ভাগ সময়েই এখন বাঁশ বা আখের খোসার চামচ দেওয়া হচ্ছে।’’

Food Plastic container
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy