Advertisement
E-Paper

টানাপড়েন ঘরে-বাইরে, অসহায় বার্ধক্য

সমাজতত্ত্বের শিক্ষক প্রশান্ত রায় অবশ্য কোনও প্রজন্মকেই এক তরফা দায়ী করতে রাজি নন। তিনি মনে করেন, বিশ্ব জুড়ে বেড়ে চলা অর্থনৈতিক সমস্যা সর্বত্রই সামাজিক স্থিতি রক্ষার ক্ষেত্রে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:৫০
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

কখনও জামাইয়ের হাতে খুন বৃদ্ধা, কখনও ছেলের বিরুদ্ধে ঠকিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার মামলা। গত কয়েক দিনে পরপর খবরের শিরোনামে এমন নানা ঘটনা। তারই মধ্যে সাম্প্রতিকতম সংযোজন ছেলে-বৌয়ের সংসারে আর্থিক অনটন থেকে ‘মুক্তি’ পেতে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ দম্পতির গঙ্গায় ঝাঁপ।

প্রতিটি ঘটনারই রয়েছে আলাদা প্রেক্ষিত। এক-একটি সমস্যার এক-এক রকম ব্যাখ্যা। তবু প্রশ্ন উঠছেই বয়স্কদের সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে। বয়স্কদের ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই আগে অভিযোগের তির যায় পরিবারের কম বয়সি সদস্যদের দিকে। যেমনটা ঘটছে নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা পীযুষ মজুমদারের মৃত্যুর ক্ষেত্রেও।
কিন্তু সমস্যাটা কি ততই সহজ?

সমাজতত্ত্বের শিক্ষক প্রশান্ত রায় অবশ্য কোনও প্রজন্মকেই এক তরফা দায়ী করতে রাজি নন। তিনি মনে করেন, বিশ্ব জুড়ে বেড়ে চলা অর্থনৈতিক সমস্যা সর্বত্রই সামাজিক স্থিতি রক্ষার ক্ষেত্রে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তার সঙ্গেই চার দিকে বাড়ছে নানা প্রলোভনের হাতছানি। ফলে জীবনযাপন আরও আরও ভাল করতে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন সকলে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে চাপ, চাকরির অভাব, সব মিলে জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। বাড়ছে খরচও। যা সামলাতে না পেরে সেই বাবা-মায়েদেরও দ্বারস্থ হচ্ছেন তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু বাবা-মায়েরাই বা পাবেন কোথায়? চাহিদা যত, সেই অনুযায়ী জোগানের উপায় নেই যে, মনে করাচ্ছেন মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সকলে মিলে যে কষ্টের সময়টা একে-অপরের পাশে দাঁড়িয়ে কাটানো যায়, তা হলেই অসুবিধা কিছুটা কমে। কিন্তু প্রচণ্ড অনটনে এ ধরনের মানবতা বোধ লোপ পায়। সম্ভবত সেটাই হয়েছে পর্ণশ্রীর বৃদ্ধার খুন কিংবা গঙ্গায় নরেন্দ্রপুরের দম্পতির ঝাঁপের ঘটনাতেও।’’

বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের উপরেই কেন পড়ছে কোপ? প্রশান্তবাবু মনে করান, যে যত শক্ত হোন না কেন, বয়সের সঙ্গে কিছুটা মনের জোর কমে যায়। তার সঙ্গে যদি থাকে আর্থিক কষ্ট, তবে তো কথাই নেই। সামাজিক স্থিতি যত নড়বড়ে হচ্ছে, ততই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সকলে।

‘‘কার পক্ষ নেব এখানে? আমাদের সমাজটা এত জটিল, সমস্যাগুলোও তত জটিল,’’ বলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বৃদ্ধ দম্পতি অসহায় অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু পুত্রবধূর কি সব দায়িত্ব একার নেওয়ার কথা? তাঁরও নিশ্চই এতটা ভার বহন করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।’’

কিন্তু আগেও তো ব্যবস্থা এমনই ছিল। বাবা-মাকে বৃদ্ধ বয়সে সযত্নে রাখা ভারতীয় সংস্কৃতিতে দায়িত্ব বলেই ধরা হয়ে থাকে। তবে কি এ দেশে কমছে বাবা-মায়েদের সম্মান?

প্রশান্তবাবু মনে করান, আগে এক-এক জন দম্পতির একাধিক সন্তান থাকতেন। ফলে এক জন না দেখলেও অন্য জন দেখতেন। অনেক সময়ে চার-পাঁচ জনে মিলেও বাবা-মাকে দেখতেন। তাতে সন্তানদের উপরেও কম চাপ পড়ত আর বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও জানতেন যাওয়ার বহু জায়গা আছে। এখন দু’তরফের উপরেই চাপ বেশি। এক জন-দু’জন সন্তান। তাঁদের মধ্যে যাঁরা খুব দায়িত্বশীল, তাঁদেরও কখনও মনে হতেই পারে বাবা-মায়ের যত্ন নিতে গিয়ে নিজেদের জীবন উপভোগ করা হচ্ছে না। আবার বাবা-মায়েরাও সন্তানদের অসুবিধে দেখে নিজেদের বোঝা ভাবতে শুরু করেন।

সমস্যাটা বদলাতে থাকা পারিবারিক ও সামাজিক গঠনের পাশাপাশি সরকারি বন্দোবস্তেরও, মনে করালেন শীর্ষেন্দুবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আয়কর দিচ্ছেন সকলে, অথচ কাউকে দেখার কোনও দায়িত্ব নেয় না এ দেশের সরকার। যে কোনও সভ্য দেশে চিকিৎসা, থাকা-খাওয়ার মতো নাগরিকদের ন্যূনতম প্রয়োজনগুলো তো দেখে সরকার। এখানে তো বয়স্কদের চিকিৎসার খরচ জোগাতেই সঙ্কটে পড়তে হয়।’’ আর্থিক কষ্ট যত বাড়বে, তত বিকৃ়ত হবে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক। তবে সাহিত্যিকের একটাই ভরসা, ‘‘এখনও ঘটনাগুলো ততটা বাড়েনি। তাই এমন কিছু ঘটলে এখনও খবরের শিরোনামে আসে!’’

elderly people social problems Health Old Age Crisis Crisis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy