Advertisement
E-Paper

পেটে ব্যথা, ঋতুস্রাবের সমস্যা, জরায়ুতে ফাইব্রয়েড নয় তো?

ফাইব্রয়েড থাকলেই যে নানা উপসর্গ দেখা যাবে তা নয়। অনেকের ক্ষেত্রেই তা চুপচাপ বসে থাকে সামান্য অসম্ভব ব্যথা ও রক্তপাত-সহ ঋতুস্রাব ছাড়া কোনও লক্ষণই থাকে না

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:১৭
ঋতুস্রাবের আগে হরমোনের প্রভাবে অস্বাভাবিক এন্ডোমেট্রিয়াম টিসুগুলি ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। ছবি: শাটারস্টক

ঋতুস্রাবের আগে হরমোনের প্রভাবে অস্বাভাবিক এন্ডোমেট্রিয়াম টিসুগুলি ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। ছবি: শাটারস্টক

নভেল করোনা ভাইরাসকে নিয়েই আমাদের নিউ নর্মাল জীবন যাপন চলছে। কোভিড-১৯ এর কারণে আর্থিক টানাপড়েনের পাশাপাশি সবথেকে বেশি সমস্যা হচ্ছে অন্যান্য অসুখ নিয়ে। নিতান্ত দায় না পড়লে কেউ আর ডাক্তারের কাছে যেতে চাইছেন না। এর ফলে অন্য অসুখের সঙ্গে সঙ্গে নানা স্ত্রী রোগ অবহেলিত হয়ে উপসর্গ ও ভোগান্তি বেড়ে যাচ্ছে।

স্ত্রী রোগের মধ্যে বেশি দেখা যায় ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড। তবে ফাইব্রয়েড থাকলেই যে সমস্যা থাকবে তা নয়, অনেকের অসুবিধা থাকে আবার অনেকের কোনও সমস্যাই থাকে না, বললেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। অসম্ভব যন্ত্রণা ও ঋতুস্রাব, পেটে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, সন্তান ধারণের সমস্যা এরকম কয়েকটি উপসর্গ থাকলে ট্র্যান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে ফাইব্রয়েড সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয় বলে জানানলেন অভিনিবেশ বাবু।

সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, সন্তানধারণ করতে পারার বয়সে (অর্থাৎ ১৫–৪৫ বছর বয়সে) মেয়েদের ২০–৪০ শতাংশের মধ্যে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড বা টিউমার থাকে। তবে ফাইব্রয়েড থাকলেই যে নানা উপসর্গ দেখা যাবে তা নয়। অনেকের ক্ষেত্রেই তা চুপচাপ বসে থাকে সামান্য অসম্ভব ব্যথা ও রক্তপাত-সহ ঋতুস্রাব ছাড়া কোনও লক্ষণই থাকে না, এই ফাইব্রয়েডের ডাক্তারি নাম লিওমায়োমাস। অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় জানালেন একটা ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে ফাইব্রয়েড থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই নগণ্য।

আরও পড়ুন: সব সময় শাসন নয়, ‘স্পেস’ দিন শিশুদেরও

ফাইব্রয়েড সবসময়ই বিনাইন অর্থাৎ ক্যানসার নয়। জেনে রাখুন ফাইব্রয়েড কখনই ক্যানসারে পরিবর্তিত হয় না। খুব ছোট মটর দানার আকৃতি থেকে শুরু করে টেনিস বলের মত বড়সড় আকারের ফাইব্রয়েড বা টিউমার হতে পারে। অনেক সময় ফাইব্রয়েডের পাশাপাশি গর্ভে ভ্রূণ আসতে পারে। যদি ফাইব্রয়েড ডিম্বাণু নিঃসরণ বা ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের পথে কোনও বাধা না হয়ে দাঁড়ায় তবে স্বাভাবিক ভাবে অন্তঃসত্ত্বা হতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

ভ্রূণের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফাইব্রয়েডও আকারে বড় হতে শুরু করে। হরমোনের প্রভাবে ফাইব্রয়েডের আকার বাড়ে। অনেকসময় গর্ভস্থ শিশুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফাইব্রয়েড আকারে বাড়তে শুরু করে। এরকম হলে হবু মায়ের নিয়মিত চেক আপ করা দরকার। ইউএসজি করে গর্ভস্থ ভ্রূণ ও ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধি নজর রাখা দরকার। কোনও রকম সমস্যা হলে বা বেড়ে ওঠা ফাইব্রয়েডের কারণে ভ্রূণের অসুবিধা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়। সন্তানের স্বার্থে নির্ধারিত সময়ের আগেই সিজারিয়ান সেকশন করে বাচ্চাকে বের করে আনা হয়। ছোট ফাইব্রয়েডের ক্ষেত্রে অবশ্য খুব একটা অসুবিধা হয় না। নির্ধারিত সময়েই বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ফাইব্রয়েড থাকলে সন্তান ধারণে অসুবিধা হতে পারে।

আরও পড়ুন:‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?​

জরায়ুতে ফাইব্রয়েড হলেই যে চিকিৎসা করাতে হয় তা নয়। যদি খুব বেশি উপসর্গ থাকে বা সন্তানধারণের পথে বাধা সৃষ্টি করে তখন একান্ত দরকার হলে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করা হয়। বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধের জন্যেই এই সার্জারির সাহায্য নেওয়া হয়। অত্যন্ত বড় আর কষ্টদায়ক টিউমার হলে এবং রোগীর বয়স মেনোপজের কাছাকাছি এলে ও তিনি সন্তানবতী হলে রোগী ও তাঁর পরিজনদের সম্মতি নিয়ে তবেই হিস্টেরেক্টমি করা হয়। তবে অনেক সময় এই ফাইব্রয়েড চুপচাপ বসে থাকে, বিশেষ কোনও উপসর্গও থাকে না।

ঋতুনিবৃত্তি বা মেনোপজের সময় যত এগিয়ে আসে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা তত কমতে শুরু করে। আর এর ফলেই ফাইব্রয়েডের আকার কমতে শুরু করে। তবে সব ক্ষেত্রে এই ঘটনা নাও ঘটতে পারে। আকারে বড় এবং হেভি ব্লিডিং, পেটে ব্যথা, বার বার শৌচাগারে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, কোমর ও পায়ের ব্যথা কিংবা বন্ধ্যা্ত্বের মত উপসর্গ দেখা গেলে চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে সঠিক চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া উচিত বলে পরামর্শ দিলেন অভিনিবেশ বাবু।

আরও পড়ুন:কোষ্ঠকাঠিন্য ও অর্শে ভুগছেন? রেহাই পেতে এই সব মানতেই হবে​

জরায়ুর ফাইব্রয়েডের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে কয়েকটি ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ থাকলে অসুখের ঝুঁকি বেশি। বাড়িতে মা, মাসি, দিদি-সহ অন্যদের এই সমস্যা থাকলে রোগের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন মাসিক ঋতুচক্রের সময় জরায়ুর লাইনিং অর্থাৎ আবরণকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে ফাইব্রয়েড তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, এছাড়া ছোট ফাইব্রয়েড বেড়ে উঠতে সাহায্য করে এই সব স্ত্রী হরমোন। এই কারণেই সন্তান ধারণের বয়সে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়ে। মেনোপজের সময় থেকে এগুলি শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে কেমোথেরাপি বন্ধ? ফল হতে পারে বিপজ্জনক

সমীক্ষায় এও জানা গিয়েছে যে অল্প বয়সে মেনার্কি হলে, ওজন বেড়ে গেলে, ভিটামিন ডি ঘটিত অভাব হলে, রেড মিট খেলে ও মদ্যপান করলে জরায়ুর ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে অল্প বয়স থেকেই নিয়মিত শরীরচর্চা ও সঠিক ডায়েট করে ওজন ঠিক রাখুন। ঋতু সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Uterus Period Pain Menstruation Tumor Cancer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy