একটা সময় ছিল যখন দোলের দিনকয়েক আগে থেকে বাড়িতে মিষ্টি বানানোর তোড়জোড় শুরু হত। এখন নেট দুনিয়ার আগ্রাসী বিপণনের ছোঁয়ায় বদলাচ্ছে এই সাবেকিয়ানাও। শুধু মাত্র দোলের জন্যই তৈরি হচ্ছে নানা মিষ্টির প্যাকেজ। গুড়ের সঙ্গে চকোলেট মিশিয়ে কড়াপাক। আবির রঙের রসগোল্লা। কিন্তু দোল বা হোলির দিনের মিষ্টির যে আভিজাত্য, তা যেন দিনে দিনেই লুপ্ত হচ্ছে। বাড়িতে মিষ্টি বানানোর ঝক্কি এখন আর কেউ নিতে চান না। অনলাইনে অর্ডার দিলেই চলে আসবে ‘দোল স্পেশাল’ মিষ্টি। কিন্তু আপনজনেদের যদি দোলের দিন নিমন্ত্রণ করে থাকেন, তা হলে বাড়িতে বানানো মিষ্টিই খাওয়ান। সহজ কিছু রেসিপি রইল
দোলের গুজিয়া
উপকরণ:
ঘি: ২৫০ গ্রাম
তেল: দু’কাপ
নারকেল: ১টি কুড়িয়ে রাখা
ময়দা: ৩ কাপ
কিশমিশ: ১০-১২টি
বাদাম: ২ চামচ টুকরো করা
খোয়া ক্ষীর: ২৫০ গ্রাম
চিনি: ২৫০ গ্রাম
এলাচ গুঁড়ো: পরিমাণ মতো

গুজিয়া। ছবি: ফ্রিপিক।
প্রণালী
সামান্য ঘি দিয়ে ময়দা মেখে নিয়ে তা ভেজা কাপড় দিয়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট রেখে দিন। পুর তৈরি করতে, মাঝারি আঁচে একটি পাত্রে ঘি গরম করুন। ওই পাত্রেই কিশমিশ এবং বাদাম ভেজে তুলে রাখুন। একটি পাত্রে নারকেল হালকা করে ভেজে নিয়ে খোয়া ক্ষীর দিয়ে পাক দিয়ে নিন। মিশ্রণটি ঝুরঝুরে হয়ে গেলে তাতে চিনি আর ভেজে রাখা ড্রাই ফ্রুট্স, এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে গ্যাস বন্ধ করে ঠান্ডা হতে দিন। অপর একটি সামান্য দল দিয়ে আরও খানিকটা ময়দা মেখে নিন। এই মিশ্রণটি গুজিয়ার চারপাশ বন্ধ করতে ব্যবহার করা হবে। মেখে রাখা ময়দা থেকে বলের মতো করে গড়ে নিন। প্রতিটি গোলা পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চি মাপের মতো করে বেলে নিন। প্রতিটির ভিতর দু’চামচ পুর দিয়ে দুই প্রান্ত আটকে দিন। হাত দিয়ে মুড়ে মুড়ে গুজিয়ার আকারে গড়ে নিন। একই ভাবে সব গুজিয়া তৈরি হয়ে এলে মাঝারি আঁচে হালকা সোনালি-বাদামি রং হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন।
রসমালাই
উপকরণ
৬০০ মিলিলিটার দুধ
৩০০ গ্রাম পনির
৮-১০টি জাফরান
১/২ চামচ এলাচ গুঁড়ো
১০-১২টি কেটে নেওয়া কাজু, পেস্তা
১ লিটার জল
৩০০ গ্রাম চিনি

রসমালাই ছবি: ফ্রিপিক।
প্রণালী
প্রথমে একটি পাত্রে জল আর চিনি ফুটিয়ে রস বানিয়ে নিন। এ বার পনির ভাল করে ঠেসে নরম মণ্ড তৈরি করে নিন। পনিরের মণ্ডকে ছোট ছোট গোলকৃতিতে বানিয়ে, চ্যাপ্টা করে দিন। ফুটন্ত সিরাপে এক এক করে দিয়ে দিন এই চ্যাপ্টা পনিরের টুকরোগুলো। মাঝারি আঁচে ১০ মিনিট রাখুন। তার পরে নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। আরেকটি পাত্রে দুধ ফুটিয়ে ঘন করে জ্বাল দিয়ে নিন। আঁচ বন্ধ করে জাফরান আর এলাচ গুঁড়ো দিয়ে ভাল করে মেশান। তার পরে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন। চিনির সিরাপ থেকে পনিরের টুকরোগুলি তুলে নিয়ে হালকা করে চাপ দিন, যাতে বাড়তি রসটি বেরিয়ে যায়। তার পরে জাফরানযুক্ত রসের মধ্যে চুবিয়ে দিন। উপর থেকে কাজুবাদাম, পেস্তা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
কেশর শ্রীখণ্ড
৩ কাপ টক দই
৪ কাপের মতো চিনি
কয়েকটি কেশর
২ চামচ দুধ
আধ চামচ এলাচ গুঁড়ো
৬-৭টি কাজু বাদাম
৭টি কাঠবাদাম

কেশর শ্রীখণ্ড ছবি: ফ্রিপিক।
প্রণালী
দুধ অল্প গরম করে কেশর ভিজিয়ে রাখুন। মিহি করে চিনি গুঁড়িয়ে নিন। এ বার দই ফেটিয়ে নিয়ে তাতে একে একে গুঁড়িয়ে রাখা চিনি, এলাচ গুঁড়ো, কেশর ও কেশর ভেজানো দুধ মিশিয়ে ভাল করে নেড়ে নিন। তাতে অর্ধেক কাজু বাদাম ও কাঠবাদামের কুচি মিশিয়ে নিন। দই এবং সমস্ত উপকরণ মিশিয়ে মিহি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এ বার একটি পাত্রে সেটি ঢেলে উপরে বেশ খানিকটা কাজু বাদাম কুচি ও কাঠবাদামের কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
কালাকাঁদ
২ লিটার দুধ
৩ চামচ লেবুর রস
২ কাপ চিনি
১ চামচ এলাচ গুঁড়ো
৬-৭টি কাঠবাদাম
সামান্য জাফরান
১ চামচ ঘি

কালাকাঁদ ছবি: ফ্রিপিক।
প্রণালী
একটি পাত্রে ২ লিটার দুধ নিয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে। এ বার ওর মধ্যে লেবুর রস ফেলে ছানা কাটিয়ে চিনি দিয়ে নেড়ে চেড়ে একটু শুকিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে এলে অল্প ঘি আর এলাচ গুঁড়ো দিয়ে নেড়ে একটা পাত্রে ঘি বুলিয়ে মিশ্রণটি ঢালতে হবে। ঠাণ্ডা হলে সন্দেশের আকারে কেটে জাফরান আর কাঠবাদাম ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
বেসনের লাড্ডু
উপকরণ
১০০ গ্রাম বেসন
২ চামচের মতো সিমাই
১ কাপ চিনি
১ কাপ ঘি
১/২ চা চামচ এলাচগুঁড়ো
৬-৭টি কাঠবাদাম (কুচনো)

বেসনের লাড্ডু ছবি: ফ্রিপিক।
প্রণালী
কড়াইতে ঘি গরম করে তাতে প্রথমে বেসনটা দিয়ে ভাল করে ভেজে নিন। সমানে নাড়তে থাকুন যাতে দলা না পাকিয়ে যায়। চিনি গুঁড়িয়ে নিয়ে তাতে দিয়ে নাড়তে থাকুন। তার পর সিমাই আর কাঠবাদাম কুচিও দিয়ে দিন। ভাল করে সব উপকরণ ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। তবে গ্যাসের আঁচ কম রাখবেন। শুকনো হয়ে এলে গ্যাস বন্ধ করে ঠান্ডা করে নিন। তার পর দুই হাতের তালুতে ঘি মাখিয়ে লাড্ডু পাকিয়ে নিন। যদি খুব ঝরেঝরে হয়ে গিয়ে লাড্ডু ভেঙে যায়, তা হলে সামান্য দুধ বা ঘি ছিটিয়ে ছিটিয়ে জমাট করে লাড্ডু বানাতে হবে।