ঘুম ভেঙে চোখ খোলা থেকে শুরু দৌ়ড়। বাড়ি, অফিস, সংসার— গতিময়তার যুগে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে বাড়ছে ক্লান্তি, বাড়ছে রোগ, অবসাদ, উদ্বেগও।
মনোবিদ থেকে মনোরোগ চিকিৎসকেরা বার বার বলছেন, চঞ্চল মনকে বশে রাখতে, দুর্ভাবনা থেকে মুক্তি পেতে ধ্যানের অভ্যাস করতে। প্রাণায়াম করতে। তাঁরা অনেকেই বলছেন, অন্তত দিনের কিছুটা সময় শান্ত এবং সোজা হয়ে বসে একমনে কোনও কিছু চিন্তা করার চেষ্টা করতে। কিম্বা কিছু ক্ষণের জন্য চুপ করে বসে থাকাই রপ্ত করতে। সেই চেষ্টা করতে গেলেও যথাযথ পরিবেশের দরকার। কথাবার্তা, জো্রে শব্দ একাগ্রচিত্ত কোনও কিছু ভাবনায় ছেদ ঘটাতে পারে। মনকে শান্ত করতেও অসুবিধা তৈরি করতে পারে। তা হলে বাড়িতে কোথায় বসে ধ্যানের অভ্যাস করবেন?
আরও পড়ুন:
বাড়ি ছোট হোক বা বড়, ঘরে আসবাব থাক না থাক— চাইলেই বাড়ির এক কোণে ধ্যানাভ্যাস করা যায়, বলছেন ধ্যান নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন তাঁদেরই কেউ কেউ। বাড়ির কোনও একটি স্থানকে ধ্যানের উপযোগী করে তোলা তাই কঠিন নয়। বরং লক্ষ্য হওয়া উচিত, ধ্যানেই মনঃসংযোগ করা।
তবে কি বাড়ির যে কোনও জায়গায় ধ্যানে বসে গেলেই চলে?
ধ্যানের সময় মনও পরিপার্শ্বের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। তাই শান্ত জায়গা মন কেন্দ্রীভূত করতেও সাহায্য করে। তা ছাড়া, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে মনকে সংযত করার চেষ্টা করলে কাজটাও সহজ হতে পারে। চোখ খুলে অন্য প্রান্তে কী দেখা যাচ্ছে, সেটিও জরুরি।
ধ্যান করার জন্য বাড়ির মধ্যে আদর্শ স্থান খুঁজবেন কী ভাবে?
প্রথম শর্তই হল বাড়ির সবচেয়ে শান্ত জায়গাটি বেছে নেওয়া। রান্নাঘর, বসার ঘরের মতো জায়গার আশপাশ এড়িয়ে চলুন। বাড়িতে অন্য সদস্য থাকলে, এই জায়গাতেই শব্দ বেশি হয়।
দ্বিতীয় শর্ত হল জায়গাটি হতে হবে আলো-হাওয়া সমৃদ্ধ। ঘরের কোনও কোণ, শোয়ার ঘরে একটি প্রান্ত যেখানে রোদ এসে পড়ে তেমন স্থান বেছে নিতে পারেন। সকালেই যেহেতু ধ্যান অভ্যাস করা ভাল, তাই পূর্বমুখী জানলার কাছাকাছি স্থান বেছে নিতে পারেন। যেখানে সকালের নরম রোদ, বাইরের হাওয়া আসবে।
তৃতীয় শর্ত, আরামদায়ক কোনও স্থান। তবে খাট বা সোফা নয়। বরং ঘরের কোনও কোণ বেছে নেওয়া যায় যেখানে যোগা ম্যাট বা আসন পেতে নিতে পারেন। মাটিতে বসার অসুবিধা থাকলে চেয়ারেও বসতে পারেন।
ঘরের কোণকে কী ভাবে ধ্যান করার উপযোগী করে তুলবেন?
শোয়ার ঘর বা পড়াশোনার ঘর, যে কোনও ঘরের একটি অংশ ধ্যানাভ্যাসের জন্য বেছে নিতে পারেন। সাময়িক ভাবে কোনও কাপড়, চাদর বা অন্য কোনও কিছুর আড়ালও তৈরি করে নিতে পারেন। ঘরের বিক্ষিপ্ত জিনিসপত্রে চোখ পড়লে মন কেন্দ্রীভূত করতে অসুবিধা হতে পারে। সে জন্যই এমন আয়োজনের প্রয়োজন। ধ্যানাভ্যাসের জন্য বিভিন্ন সুরের সাহায্য নিতে পারেন। ইন্টারনেটে সার্চ করলেই এমন শব্দ, সুর পাওয়া যায়। যে সময় ধ্যান অভ্যাস করবেন বাড়ির লোকেদের বলে রাখতে পারেন, কেউ যেন চেঁচামেচি বা ডাকাডাকি না করেন।
নিঃশব্দ স্থান, সঠিক সুর, প্রাকৃতিক আলো মনোজগতে প্রভাব ফেলবে।