ঝাল বলে ভয়? রোজের সবজে বা লাল কাঁচালঙ্কা তার কাছে কিছুই নয়। এ লঙ্কায় কামড় বসালে স্বাদকোরকে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধতে দেরি হবে না। আলুভাতে দিয়ে যেমন একটা গোটা কাঁচালঙ্কা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন, ‘ভূত জোলোকিয়ার’-র সঙ্গে তেমন করতে যাবেন না যেন! তাহলেই গলা-বুকে আগুন জ্বলবে। পৃথিবীর অন্যতম ঝাল কাঁচালঙ্কা ভূত জোলোকিয়া উত্তর-পূর্ব ভারতে বেশ জনপ্রিয়। নাগাল্যান্ড নিবাসী এই লঙ্কার নাম শুনলেই পিলে চমকে ওঠে অনেকের। কেউ বলেন ‘রাজা মরিচ’, অর্থাৎ লঙ্কাদের রাজা আবার কেউ বলেন ‘ভূত মরিচ’। থ্যাবড়ানো লঙ্কার চেহারা দেখতে নাকি অনেকটা ভূতের মুখের মতোই।
কিছু দিন আগে পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল লঙ্কা বলে স্বীকৃত ছিল। এখন ঝাল লঙ্কাদের তালিকায় পাঁচ নম্বরে নাম রয়েছে ভূত জোলোকিয়ার। এ লঙ্কা কেবল ঝাল নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এতে আছে ভিটামিন এ, বি-সিক্স, সি’ আছে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি, মজবুত দাঁত ও শক্ত হাড়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ভিটামিন সি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যে কোনও ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। আর আছে অল্প প্রোটিন, বেশ কিছুটা কার্বোহাইড্রেট।
আরও পড়ুন:
ভূত জোলোকিয়ার নাম জায়গাভেদে এক একরকম। নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজ়োরামে এর নামা ‘নাগা মরিচ’। ভূত জোলোকিয়ার আরও একটি গুরুত্ব রয়েছে। আত্মরক্ষার কাজেও এই লঙ্কার গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। ২০০৯ সালে দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন (ডিআরডিও) জানিয়েছিল ভূত জোলোকিয়া স্প্রে জঙ্গি তাড়াতেও কাজে আসবে। এই লঙ্কাগুঁড়ো দিয়ে তৈরি স্প্রে কারও চোখে বা মুখে লাগলেই যে ভয়ঙ্কর জ্বালা শুরু হবে তা বলার নয়। চোখে গেলে দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে। নাকে গেলে হাঁচি থামতেই চাইবে না। প্রদাহ শুরু হবে শ্বাসনালিতে।
ভূত জোলোকিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
ভুত জোলোকিয়া বাড়িতে ফলাবেন কী ভাবে?
আস্ত লঙ্কা খুব সাবধানে গ্লাভস পরে ধরে তার ভিতর থেকে বীজগুলি বার করে নিতে হবে। ধীরে ধীরে বীজগুলি বার করতে হবে যাতে সেগুলি হাতের চাপে ভেঙে না যায়।
বীজগুলি এক বাটি জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে ২-৩ দিন। এতে বীজগুলি নরম হবে।
এর পর টবের মাটিতে বীজগুলি পুঁতে দিতে হবে। উপরে আরও কিছুটা মাটি দিয়ে, অল্প অল্প করে জল দিতে হবে।
পৃথিবীর অন্যতম ঝাল লঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত।
টবে কেমন মাটি দিচ্ছেন, তা দেখে নেবেন। বীজরোপণের আগে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। এর জন্য বাগানের মাটির সঙ্গে মেশাতে হবে এক বছরের পুরনো গোবর সার বা পাতা পচা সার। গাছে মাসে এক বার দিতে হবে জৈব সার। ভার্মিকম্পোস্ট, গোবর সার, পাতা পচা সার, ফল, আনাজপাতির শুকনো খোসা ইত্যাদি মিশিয়ে জৈব সার তৈরি করে নিতে হবে।
গাছ একটু বড় হলে তাতে নিয়ম করে জল দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন গাছের গোড়ায় যেন জল জমে না থাকে।
রোজ ৪ ঘণ্টা রোদে রাখতে হবে গাছকে। তবে চড়া রোদে না রাখাই ভাল। জৈব কীটনাশক ব্যবহার করলে গাছ ভাল থাকবে।