কবিতার ছন্দেই সারবে রোগ। —নিজস্ব চিত্র।
পছন্দের কবিতা শুনলে মন ভাল হয়। কবিতার ধরন অনুযায়ী কখনও শান্ত হয় তো কখনও চনমনে হয়ে ওঠে মন। তবে কবিতা অসুখবিসুখও সারাতে পারে, সে কথাও মানেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের মতে, তেমন ভাবে শোনাতে পারলে হতাশার রোগী ভুলে যেতে পারেন তাঁর কষ্টের কথা, ব্যথা–বেদনায় ভারাক্রান্ত মানুষ সাময়িক ভাবে হলেও চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেন৷ স্ট্রেস–টেনশনে জেরবার মানুষ খুঁজে পেতে পারেন তাঁর সমস্যার দাওয়াই। কবিতার শ্রাব্যরূপ একটি শক্তিশালী শুশ্রূষার মাধ্যম, এই তথ্য বিশ্বের সমস্ত বড় বড় দেশে নানা সমীক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে। তবে ভারতবর্ষে রোগীর শুশ্রূষার জন্য কবিতা থেরাপির প্রচলন নেই বললেই চলে।
আবৃত্তিকার শোভনসুন্দর বসু ও চিকিৎসক দেবাঞ্জন পানের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে পোয়েট্রি অ্যান্ড অ্যালায়েট আর্ট থেরাপি ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অটিস্টিক শিশু, অ্যালঝাইমার্স রোগীর কবিতা থেরাপি করানো হয়। এ বছর বইমেলায় প্রথম বার এই কবিতা থেরাপি নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। শোভনসুন্দর বসু ও দেবাঞ্জন পানের উদ্যোগে ভারতবর্ষে এই প্রথম হল কবিতা থেরাপি নিয়ে আলোচনা সভা। ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার সময় বইমেলা প্রাঙ্গণে রোগীর সেরে ওঠার ক্ষেত্রে কবিতার ভূমিকা নিয়ে চলল নানা রকম কথপোকথন। সেমিনারের আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন অলকনন্দা রায়, জোগেন চৌধুরী, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, অংশু সেন, সোমনাথ মুখোপাধ্যায় ও অদিতি বসু রায়ের মতো বিশিষ্টজনেরা।
কবিতাকেও যে থেরাপি হিসাবে কাজে লাগানো যায় সেই ভাবনা প্রথম আসে ১৮০০ সালের প্রথম দিকে পেনসিলভানিয়া হাসপাতালের চিকিৎলক বেঞ্জামিন রাশের মাথায়। তিনি তাঁর হাসপাতালে এই থেরাপি শুরু করেন। মস্তিষ্কে প্যারাইটাল লোবের প্রিজুনিয়াস ও সাপ্রা মার্জিনাল জাইরাস, এই দুই অংশ কবিতা থেরাপির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উদ্দিপীত হয়। মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। ফাংশানাল এমআরআই মাধ্যমে এই তথ্য প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৬ সালে লন্ডনের ব্যানগোর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ সাইকোলজি তাদের গবেষণায় ব্যাখ্যা দিয়ে জানায়, কবিতার প্রতি প্রেম না থাকলেও তার ছন্দ মস্তিষ্ককে কী ভাবে দ্রুত সতেজ করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অ্যালঝাইমার্সের রোগী, ক্যানসার রোগী ও অটিস্টিক শিশুদের এই থেরাপি করানো হয়। হাসপাতালে আবৃত্তিকাররা এসে আবৃত্তি শুনিয়ে রোগীদের মন ভাল করার প্রয়াস করেন।
শোভনসুন্দর বসু ও দেবাঞ্জন পানের উদ্যোগে কলকাতাতেও শুরু হয়েছে এই কবিতা থেরাপি। বিভিন্ন আলোচনা সভা, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে এই থেরাপির বিষয় আরও সচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টাতেই রয়েছেন শোভনসুন্দর দেবাঞ্জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy