খাওয়া-দাওয়া আর ব্যায়াম ঠিকমতো করলেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, এত দিন তেমনই ভেবেছেন। কিন্তু জানেন কি, আপনার বাড়ির আশপাশে বায়ুদূষণের মাত্রার উপরেও নির্ভর করছে আপনি কতটা ডায়াবিটিস প্রবণ হবেন। পাশাপাশি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও খানিকটা নির্ভর করছে তার উপরে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৭ বছর ধরে দিল্লি আর চেন্নাইয়ে ১২ হাজার মানুষের উপরে সমীক্ষা চালিয়ে গবেষকেরাএই সিদ্ধান্তে এসেছেন। সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে তাঁরা জানিয়েছেন, বায়ুতে দুষণের মাত্রা বাড়লে টাইপ টু ধরনের ডায়াবিটিসের আশঙ্কা বেড়ে যায়। জুন মাসে ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত আরও একটি গবেষণাপত্রে দেখা গিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে ইউরোপের তুলনায় ভারতীয়েরা অনেক বেশি ডায়াবিটিস প্রবণ।
গবেষকেরা বলছেন, এর জন্য মূলত দায়ী বাতাসে ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম ব্যাসার্ধের ধূলিকণার উপস্থিতি। এই ধূলিকণার আকার একটি চুলের ৩০ ভাগের এক ভাগ। খালি চোখে দেখা যায় না। তবে আমাদের প্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে অনায়াসে প্রবেশ করে সে। এমনকি রক্তস্রোতেও সহজেই মিশে যায়। এর মধ্যে থাকে নাইট্রেট, কার্বন-সহ আরও নানা রকমের বিষাক্ত পদার্থ। রক্তের সঙ্গে ধমনীতে প্রবেশ করে তা রক্তচলাচলের পথে বাধা তৈরি করে। ধমনীর নমনীয়তাকে নষ্ট করে দেয়। ফল স্বরূপ উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বাড়ে। বাড়ে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, অন্তঃসত্ত্বাদের ডায়াবিটিস, হাইপোথাইরয়েডের মতো রোগ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একই কারণে শরীরে ইনসুলিন তৈরি ও তার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে টাইপ টু ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, প্রতি ঘন মিটার বায়ুতে ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম ব্যসার্ধের ধূলিকণার পরিমাণ থাকা উচিত ৫ মাইক্রোগ্রাম বা তার চেয়ে কম। যেখানে ভারতে গড়ে তার পরিমাণ ৪০ মাইক্রোগ্রাম। চেন্নাইয়ে প্রতি ঘন মিটারে তা ৩০-৪০ মাইক্রোগ্রাম। দিল্লিতে সেই মাত্রা ৮২-১০০ মাইক্রোগ্রাম, যা হু নির্ধারিত বিপদসীমার অনেকগুণ বেশি।
এই গবেষণার পুরোধায় থাকা সিদ্ধার্থ মণ্ডলের মতে, স্তূলতা, কায়িক পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গেডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার আরও একটি কারণ এখন সামনে এসেছে। বায়ুদূষণের ফলেই গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে ডায়াবিটিসে আক্রান্তের হার বাড়ছে। আর এক গবেষক ও চিকিৎসক, চেন্নাইয়ের ভি মোহনজানান, আরও গবেষণা চলছে। শরীরেকোলেস্টেরলের মাত্রা এবং ভিটামিন ডি সংশ্লেষের উপরে বায়ুদূষণের প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আগামী দিনে ভারতীয়দের মধ্যে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে ফেলা যাবে। দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকায় তার কিছু কিছু সুফল মিলছে। ২০১৬ সালের পরে দিল্লি সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুরনো ডিজ়েল গাড়িতে নিষেধাজ্ঞা, নির্মাণশিল্পে নিয়ন্ত্রণ, যান নিয়ন্ত্রণ-সহ বেশ কিছু নিয়ম চালু করেছে। তাতে বায়ু দূষণের হার ধীরে ধীরে হলেও কমছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy