আলুপ্রিয় বাঙালি মানেই আলুভাজা-প্রিয় বাঙালি। স্বাস্থ্যসচেতনতার দিকে ঝুঁকলেও ভাজা আলুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা সহজ নয় বাঙালির পক্ষে। তবে কেবল বাঙালির কাঁধে এ দায় বর্তানো উচিত নয়। গোটা পৃথিবীর একাধিক জাতির কাছেই আলুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু সেদ্ধ বা বেক করা আলুর তুলনায় ভাজা আলুর ক্ষতি বেশি। তা-ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ় পেলে সে সব মাথায় থাকে না অনেকেরই। হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ-এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যদি এক সপ্তাহে তিন বার ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ় খাওয়া হয়, তা হলে ডায়াবিটিসের ঝুঁকি ২০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ় সাধারণত ডুবো তেলে ভাজা হয়। ফলে তাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ক্যালোরি যুক্ত হয়। যার ফলে ওজন বৃদ্ধি থেকে ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স বেড়ে যায়। এ ছাড়াও, যে কোনও ভাজাভুজি শরীরে প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করতে পারে, যা ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কিন্তু বাঙালির আলুভাজা বা বিদেশের ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ়ের মতো রান্নাগুলি ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত নন? সে ক্ষেত্রে রান্নার নিয়মে বদল আনলেই কম ক্ষতিকারক হতে পারে খাবারটি। বিশেষ করে, টাইপ ২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অথবা যাঁরা রক্তে শর্করার মাত্রাকে নজরদারিতে রাখেন, তাঁদের জন্য উপকারী হবে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা না বাড়িয়ে স্টার্চযুক্ত এই সব্জি রান্না করা যায়। তার জন্য মাথায় রাখতে হবে কয়েকটি নিয়ম।
১. এয়ার ফ্রায়ার- ভাজাভুজির ক্ষেত্রে তেলের ব্যবহার কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী এয়ার ফ্রায়ার যন্ত্রটি। ভাজাও খাচ্ছেন, অথচ তেলের ক্ষতিকারক প্রভাবও টের পাচ্ছেন না। কারণ, তেলের প্রয়োজন পড়ে না এই যন্ত্রে। এয়ার ফ্রায়ারে আলু ভাজা বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ় বানালে অ্যাক্রিলামাইডের (তেলে ভাজার সময়ে বিশেষ এই রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি হয়) মাত্রা কমে যায়। প্রায়শই এই রাসায়নিকটি সেবনের ফলে শরীরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। পাশাপাশি প্যানক্রিয়াসের জন্যও সেটি ভাল নয়।
আরও পড়ুন:
২. টাটকা আলু- অনেকে ফ্রোজ়েন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ়ের প্যাকেট কিনে রাখেন বাড়িতে। কেবল প্যাকেট খুলেই তেলে ফেললে রান্নার কাজ সারা। কিন্তু খাটনি কমাতে গিয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করেন তাঁরা। কারণ, এ সব প্যাকেজজাত কাটা আলুতে ডেক্সট্রোজ়ের আস্তরণ দিয়ে রাখা হয়, যা এক ধরনের চিনি। ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। তাই সব সময়ে টাটকা, তাজা আলু দিয়েই রান্না করা উচিত। এতে ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে অনেকখানি কম।
৩. খোসা সমেত আলু- টাটকা আলুর খোসা না ছাড়িয়েও ভাজতে পারেন। তাতে বরং প্রয়োজনীয় ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের উপকারিতা যোগ হয়। হজমের গতি কমে যায় বলে পেট অনেক ক্ষণ ভর্তি থাকে। ফলে বেশি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ওজন বৃদ্ধি পায় না।
খোসা ছাড়িয়ে ভাজবেন না কি রেখে? ছবি: সংগৃহীত।
৪. কেচআপ- অনেকেই টম্যাটো কেচআপ বা সসে ডুবিয়ে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ় খেতে ভালবাসেন। কিন্তু জানেন কি, এক টেবিলচামচ কেচআপে প্রায় ৪ গ্রাম চিনি থাকে। আলুভাজার সঙ্গে টকটক স্বাদ যোগ করতে হলে অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার ছিটিয়ে দিতে পারেন। শরীরে গ্লুকোজ়ের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অ্যাপেল সাইডারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড কার্যকরী।
৫. নুনের ব্যবহার- আলুভাজার সময়ে যথাসম্ভব কম নুন দিলে ভাল। বরং হার্বস যোগ করে রান্না করুন। এতে ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য কম ক্ষতিকারক হবে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ়।