কেউ কিছু বলল কি বলল না, মেজাজ সপ্তমে? অন্যের কথা শেষ হওয়ার আগেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়ে গেল। রাস্তাঘাটে কম-বেশি এমন পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত আমরা সকলেই। এমনকি, নিজেদের জীবনেও এমন আচরণের ঘটনা খুঁজে পাবেন অনেকেই। এ জন্য বিড়ম্বনাতেও কম পড়তে হয় না।
অনেকেই অন্যের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেন। সামান্য কথায় কেউ রেগে যান, কেউ গভীর ভাবে আহত হন। কেউ ভাবনাচিন্তা না করে দু’কথা শুনিয়ে দেন। এর ফলে অনেক সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, সম্পর্কেরও অবনতি ঘটে। কিন্তু যত ক্ষণে সেই বোধোদয় হয়, তত ক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি এই সমস্যা নিয়ে বিড়ম্বনার কথাই জানালেন বলিউড অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা।
ক্রিকেটার বিরাট কোহলির স্ত্রী অনুষ্কা জানিয়েছেন, তাঁর নিজেরই এমন স্বভাব ছিল। কথায় কথায় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলতেন। আবেগপ্রবণ হয়ে ভুল করে ফেলতেন। তবে সম্প্রতি সচেতন ভাবেই এমন আচরণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন তিনি। এতে তাঁদের জীবনেও ইতিবাচক বদল এসেছে।
দৈনন্দিন জীবনেই অনেকেই নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। না ভেবে অপরিণামদর্শী কোনও কাজ করে ফেলেন বা রেগে গিয়ে নানা কথা বলে ফেলেন। তার ফল যে খুব একটা ভাল হয়, তা নয়। কিন্তু সমস্যা হল, কাজ করার সময় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিন্তু কেন?
আরও পড়ুন:
মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের নানা অংশ আচরণ-আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সাধারণত দেখা যায়, শিশুদের মধ্যে আবেগপ্রবণতা বেশি থাকে। অনেক সময় তাদের সম্পূর্ণ প্রশ্ন শোনার ধৈর্য থাকে না, উত্তর দিতে শুরু করে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ক পরিণত হয়। আচরণে নিয়ন্ত্রণ আসে। বিচারবোধ দিয়ে কাজ করতে শেখায় মস্তিষ্ক। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এই নিয়ন্ত্রণ বা আত্মসংযম থাকে না। তাঁরাই হঠাৎ করে কিছু বলে ফেলেন বা সামান্য কথায় বাড়তি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেন। নানা কারণে এমনটা হতে পারে।
মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলছেন, ‘‘ সাধারণত কেউ ব্যক্তিবিশেষের সংবেদনশীল জায়গায় আঘাত হানলে এমনটা হতে পারে। আবার দৈনন্দিন জীবনে নানা রকম অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যে কোনও মানুষ যান। হতাশা, রাগ, অভিমান মনে জমতে থাকে। কখনও অন্য কারও সাধারণ বা সামান্য কথাতেই মনে জমে থাকা ক্ষোভ অন্য ভাবে বেরিয়ে আসে। সামান্য কথাতেই মেজাজ চড়ে যায়।’’
মনেরও নিজস্বতা আছে। তার তল পাওয়া সব সময় সহজ হয় না। আবেগপ্রবণ আচরণ তাই বললেই বাগে আনা যায় না। কোন কথায় প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করা দরকার, কোনটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত, তা অনেক সময় হরমোনের দ্বারাও নিয়ন্ত্রিত হয়। কোন বিষয়ে কোন আচরণ করা হবে, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নিরপত্তার বোধও।
কী ভাবে নিজেকে সংযত রাখবেন?
কোনও মানুষ তাঁর আচরণ এক দিনে বদলে ফেলতে পারেন না। বরং এ জন্য সচেতন ভাবে চেষ্টা করা দরকার বলছেন মোহিত। শর্মিলার পরামর্শ দৈনন্দিন জীবনে প্রাণায়ম, ধ্যান অভ্যাস করার। এতে মন সংযত থাকে। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক সহজ হয়। ধৈর্যশক্তি, সহনশীল মনোভাব বৃদ্ধি করার চেষ্টা প্রয়োজন।
মোহিত বলছেন, ‘‘সাধারণত দেখা যায়, উদ্বেগে থাকলে দুম করে কিছু একটা বলে ফেলার বা না ভেবে কাজ করার প্রবণতা বেশি হয়। হতেই পারে, কারও কথায় রাগের কারণ আছে। কিন্তু নিজেকে বোঝাতে হবে, সব সময় চিৎকার করে কথা বললেই কাজ হয় না, বরং শান্ত থাকা দরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে, সেই মুহূর্তে জায়গাটি থেকে সরে যেতে পারেন। কারও কথায় রাগ হলে তৎক্ষণাৎ দু-চার কথা শুনিয়ে না দিয়ে, তৃতীয় ব্যক্তিকে রাগের কথাটি বলা যেতে পারে। নিজেকে যদি বোঝানো যায়, না ভেবে কথা বলার ফলাফল ভাল হয় না, তা হলেও আবেগ বশে রাখা যেতে পারে। নিরন্তর চেষ্টায় এই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’’