Advertisement
১২ অক্টোবর ২০২৪
novel coronavirus

কী ভাবে চিকিৎসা চলছে করোনা-আক্রান্তদের?

সার্স কোভ-২ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ২০–৩০ শতাংশের সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়।

করোনা-আতঙ্কে ভুগছে গোটা বিশ্ব। ছবি: আইস্টক।

করোনা-আতঙ্কে ভুগছে গোটা বিশ্ব। ছবি: আইস্টক।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ১৪:৩৭
Share: Save:

করোনা আটকানোর দাওয়াই এসে গিয়েছে বলে অনেকেই স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন! কিন্তু বিষয়টা মোটেই তা নয়। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ বা আইসিএমআর কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষজনকে হাইড্রো অক্সি-ক্লোর-কুইন জাতীয় ওষুধ গ্রহণে সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া আক্রান্তদের শারীরিক সমস্যা কমাতে কিছু ওষুধ ব্যবহার করেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে। তবে সার্স কোভ-২ করোনা ভাইরাসের ওষুধ নিয়ে শেষ কথা বলার সময় আসতে এখনও অনেক ট্রায়াল বাকি।’’— বললেন ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ক্রিটিক্যাল কেয়ারের জেনারেল সেক্রেটারি অরিন্দম কর। করোনা আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে ওষুধ দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে (৮৫–৯০ শতাংশ) ভাইরাল ফিভার আপন নিয়মেই সেরে যায়। কিন্তু কোভিড-১৯ অসুখটা বিশ্ব অতিমারি হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে বলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে।

কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের চিকিৎসা

উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা হিসেবে জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। পূর্ণবয়স্ক মানুষকে দিনে ৪ গ্রাম পর্যন্ত প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে মাথা ব্যাথা-সহ অন্যান্য ব্যথা বেদনা ও অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই সার্স কোভ-২ করোনা ভাইরাস আক্রান্তকে নন স্টেরয়েডাল অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগ দেওয়া চলবে না।

সার্স কোভ-২ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ২০–৩০ শতাংশের সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়। তখন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। নিউমোনিয়ার সংক্রমণ আটকাতে ও এই সমস্যার মোকাবিলা করতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন: প্লাস্টিক, কাগজ, স্টিল… কোন জিনিসে কতদিন বাঁচে করোনাভাইরাস? জেনে নিন

‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর) হাইড্রো অক্সি-ক্লোর-কুইন ওষুধ কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পারে বলে সুপারিশ করেছেন। এই ওষুধ দু’টি পরীক্ষামূলক ভাবে রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। ফ্রান্সে মাত্র ৩০ জন রোগীকে হাইড্রো অক্সি-ক্লোর-কুইন দিয়ে চিকিৎসা করে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এই নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা হওয়া দরকার।

সার্স কোভ-২ করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় এইচআইভিতে ব্যবহৃত কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধও ব্যবহার করা হচ্ছে। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত করোনা আক্রান্তদের উপর অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রয়োগ নিয়ে একটা স্টাডি হয়েছে। সে রকম উল্লেখযোগ্য কোনও ফল পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি জয়পুরের একজন চিকিৎসক পরীক্ষামূলক ভাবে দু’-একজন রোগীকে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়ায় তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এর কার্যকারিতা নিয়ে এখনও যথেষ্ট সংশয় আছে। আক্রান্তকে ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আইভিআইজি) দেওয়া হয়।

আক্রান্তের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার পাশাপাশি সঙ্কটজনক পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রতি দিন ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬ ও ভিটামিন ই দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকি আছে এমন মানুষদের ক্লোরোকুইন বা হা হাইড্রো অক্সি-ক্লোরো-কুইন গ্রহণের কথা বলা হলেও এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

এ ছাড়া পুলড প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসা করেও উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়া যায়। যাঁরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠেছেন, তাঁদের শরীরে এই রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। সে রকম ভলেন্টিয়ারের রক্ত থেকে প্লাজমা নিয়ে সার্স কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস আক্রান্তকে দেওয়া হলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে ও মৃত্যু ঠেকানো যাবে বলে বিজ্ঞানিরা আশাবাদী। তবে এই চিকিৎসা ব্যাপক ভাবে চালু হতে ৬–৮ মাস বা তারও বেশি সময় লাগবে।

আরও পড়ুন: মাস্ক প্রয়োজনীয় নয়, বরং এর থেকে বাড়়ছে বিপদ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

কী সচেতনতা?

এই কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসকে আটকে দেওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) পৃথিবীর সব দেশের মানুষকে রোগ আটাকানোর ব্যাপারে সচেতন হতে নির্দেশ দিয়েছে। আমাদের দেশে কোভিড-১৯ আটকাতে আরও ১৫–২০ দিন বা তারও বেশি সময় লকডাউন প্রয়োজন বলে ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ক্রিটিকাল কেয়ার মনে করে। ইতিমধ্যে অসুখটা ছড়িয়ে পড়েছে বলে ‘হু’-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ক্রিটিকাল কেয়ার’ (আইএসসিসি) ও ‘আইসিএমআর’ যৌথ ভাবে আর একটি আরও উন্নত মানের চিকিৎসা গাইডলাইন তৈরি করছে। রোগ ছড়ানোর ধরণ দেখে ও ঘনজনবসতির কারণে আমাদের রাজ্যে রোগটি দ্রুত স্টেজ থ্রি-তে পৌঁছে যাওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। তাই রোগ আটকাতে বাড়িতেই থাকুন।

করোনাভাইরাস আটকাতে এখনই সচেতন না হলে, সব নিয়ম না মানলে ব্যাপক ভাবে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে যে কোনও ওষুধ মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE