E-Paper

চিনির মতোই মিষ্টি সে

প্রাকৃতিক উপাদান থেকে মেলে অ্যালুলোজ়, যা এখন চিনির বিকল্প।

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৫ ০৫:১৭

ছবি: সংগৃহীত।

অতিরিক্ত ওজন কিংবা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যতালিকা থেকে চিনি বাদ দিয়েছেন অনেকেই। বিকল্প হিসেবে অ্যাসপার্টেম, স্যাকারিন, স্টিভিয়ার মতো রাসায়নিক কৃত্রিম চিনি বাজারে সহজলভ্য। তবে চিকিৎসকদের মতে, সেগুলোর অধিকাংশই দীর্ঘ দিন ব্যবহার করা অস্বাস্থ্যকর। তাই খাবারে মিষ্টি স্বাদ বজায় রাখতে এখন অ্যালুলোজ়ের চাহিদা বাড়ছে।

অ্যালুলোজ় কী?

দেখতে চিনির মতো। স্বাদেও তেমন ফারাক নেই। এন্ডোক্রিনোলজিস্ট কৌশিক পণ্ডিত বলছেন, “এক চামচ চিনিতে যতটা মিষ্টত্ব থাকে, সমপরিমাণ অ্যালুলোজ়ের স্বাদও প্রায় সমান। তবে তুলনায় ক্যালরির পরিমাণ কম।” অ্যালুলোজ় মূলত ডি-সাইকোস নামে পরিচিত, এক ধরনের মোনোস্যাকারাইড। কৃত্রিম চিনির মধ্যে একমাত্র এরই প্রাকৃতিক উৎস রয়েছে। মূলত গম থেকে অ্যালুলোজ় পাওয়া যায়। তা ছাড়া ডুমুর, কাঁঠাল, কিশমিশ, মেপল সিরাপ, ব্রাউন সুগারেও অ্যালুলোজ় থাকে। এখন ভুট্টা, আখ থেকে পাওয়া ফ্রুক্টোজ়কে এনজ়াইম দিয়ে রূপান্তরিত করেও তৈরি হচ্ছে অ্যালুলোজ়।

আদৌ উপকারী?

ডা. পণ্ডিত বলছেন, “অ্যালুলোজ় গঠনগত ভাবে ফ্রুক্টোজ়ের মতো হলেও শরীর এটিকে ভাঙতে বা শোষণ করতে পারে না। চিনির তুলনায় রক্তে তা কম মেশেও এবং শরীরে ইনসুলিন ক্ষরণে তারতম্য আনে না। ফলে দীর্ঘ দিন যাবৎ চিকিৎসকের নির্দিষ্ট করে দেওয়া মাত্রায় অ্যালুলোজ় ব্যবহারে রক্তে শর্করার মাত্রার তেমন হেরফের হয় না।” ক্যালরি কম থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্যও ভাল। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে অ্যালুলোজ়।

ছবি: সংগৃহীত।

অন্যান্য বিকল্পের চেয়ে ভাল কেন?

রাসায়নিক পদ্ধতিতে যে কৃত্রিম চিনি তৈরি হয়, তার মধ্যে রয়েছে— অ্যাসপার্টেম, সুক্রোজ়, সুক্রালোজ়, স্যাকারিন, নিওটেম, স্টিভিয়া ইত্যাদি। এ ধরনের আর্টিফিশিয়াল সুগার শরীরে গিয়ে নানা যৌগে ভেঙে যায় এবং ক্ষতি করে। বাজারজাত সুগার-ফ্রি মিষ্টি, কুকিজ়, আইসক্রিম, ডায়েট পানীয় ইত্যাদিতে এই কৃত্রিম চিনি ব্যবহার হয়। দাম কম রাখতে তাতে সিলিকা-সহ নানা ক্ষতিকর উপাদানও মেশানো হয়। চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ মেয়াদে এই কৃত্রিম সুইটনার টাইপ-টু ডায়াবিটিস, কার্ডিয়োভাসকুলার রোগ, কর্কটরোগ, হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা, কিডনির সমস্যার সম্ভাবনা বাড়ায়। সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, অস্থিরতা, স্নায়ুর সমস্যাও হতে পারে। তা ছাড়া কৃত্রিম চিনিতে থাকা স্যাকারিন শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণ ঘটায় ও প্রয়োজনের বেশি খিদে ডেকে আনে। ডা. কৌশিক বলছেন, “অ্যালুলোজ় এর চেয়ে আলাদা। প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি হওয়ায় তা শরীরে গিয়ে ক্রিয়া-বিক্রিয়া বা ক্ষতি করে না।” এ চিনি সহজলভ্য নয়। এর দামও বেশি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রাসায়নিক কৃত্রিম চিনি ব্যবহারে যে ভয় তা অ্যালুলোজ়ে তেমন নেই।

ক্ষতির ভয় কতটা?

অ্যালুলোজ়ের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটির নিয়মিত ব্যবহারে গ্যাস, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। গাট হেলথেরও ক্ষতি হয়। জেনারেল ফিজ়িশিয়ান সুবীর মণ্ডল বলছেন, “কৃত্রিম চিনি নিয়ে এখনও নানা গবেষণা চলছে। নতুন কোনও বিকল্পে চট করে ভরসা না রেখে, ডায়াবেটিক রোগীদের উচিত মিষ্টি খাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা।”

ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) প্রাথমিক ভাবে অ্যালুলোজ়কে সুরক্ষিত ঘোষণা করলেও, বহু দেশে এখনও এটিকে ছাড়পত্র দেয়নি। তবে এ দেশের খোলা বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে। গুরুতর কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা এখনও অবধি প্রমাণিত না হওয়ায়, চিকিৎসকেরাও এটি ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন। তবে অ্যালুলোজ় ব্যবহারের আগে ও পরে শারীরিক প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sugar Healthy Tips

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy