Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Life style news

হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন, জেনে নিন

গত চার বছরে হাঁপানির ওষুধের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন, অর্থাৎ দেড় থেকে দু’কোটি ভারতবাসী হাঁপানিতে আক্রান্ত। বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে যখন অ্যাজমার প্রকোপ কমছে, তখন আমাদের দেশে রোগাক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। একটু সতর্ক হলেই অ্যাজমার আক্রমণ প্রতিরোধ করে ভাল থাকা যায়। এই রোগের ট্রিগার ফ্যাক্টর সম্পর্কে সজাগ থাকতে অনুরোধ করলেন চেস্ট ফিজিশিয়ান রাজা ধর।বংশগত এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন নয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ১৯:২৯
Share: Save:

হাঁপানি বাড়ছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে একই সঙ্গে বেড়েছে রোগ সম্পর্কে সচেতনতাও। এই অসুখের চিকিৎসায় ইনহেলারের ভূমিকার কথা রোগীদের বোঝাতে বিশেষ বেগ পেতে হয় না। একটা সময় অ্যাজমার আক্রমণে ইনহেলার দেওয়া কতটা জরুরি তা বোঝাতে হিমশিম খেতে হত। কিন্তু ইদানীং ইনহেলার চিকিৎসার ব্যাপারে যে ট্যাবু ছিল তা অনেকটাই কেটেছে। বংশগত এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন নয়।

ঠিক কী হয়?

নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট, কাশি, বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ, রাত্তিরে সমস্যা উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়া— এই হল সংক্ষেপে অ্যাজমা বা হাঁপানির মূল সমস্যা। আসলে ফুসফুসে বাতাস বহনকারী সরু সরু টিউবের মতো অজস্র নালী আছে। অ্যালার্জি ও অন্যান্য কারণে সূক্ষ শ্বাসনালীগুলির মাংসপেশি সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। ঠিকমতো বাতাস চলাচল করতে পারে না। শরীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। আর এর ফলে নিঃশ্বাসের কষ্ট-সহ নানা শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। মিউকাস বা কফ জমে সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে।

কী কী উপসর্গ

রোগী অনুযায়ী অসুখের লক্ষ্মণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে বারে বারে সর্দি-কাশি এই অসুখের এক অন্যতম উপসর্গ। কাশতে কাশতে চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়। বুকের মধ্যে বাঁশির মতো ‘সাঁই সাঁই’ আওয়াজ আর শ্বাসকষ্ট এই রোগের অন্যতম লক্ষ্মণ। বুকে চাপ ধরা ব্যথা ও কষ্ট হয়। রাত্তিরে কাশি ও শ্বাসকষ্ট বাড়ে, ঘুমের ব্যাঘাত হয়। খাবার খেতে অসুবিধে হয়, বমি হতে পারে। সামগ্রিক ভাবে অসুস্থ লাগে। ভাইরাল ফিভার সমেত সংক্রমণ হলে সমস্যা আরও খারাপ হতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে অবিলম্বে ইনহেলারের সাহায্যে রোগের লক্ষ্মণ কমানো দরকার।

হাঁপানির রিস্ক ফ্যাক্টর

সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে এই রোগের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করেছেন। ডাক্তারি পরিভাষায় এদের বলা হয় অ্যাজমা ট্রিগার ফ্যাক্টর।

বংশে থাকলে এই অসুখের ঝুঁকি বাড়ে।

একালের বদলে যাওয়া জীবনযাত্রা হাঁপানির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে সাবেক ভারতীয় খাবারের পরিবর্তে ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড খাওয়া ও বাসস্থানের পরিবর্তনের ফলে অ্যাজমার প্রকোপ বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

হবু মা ধূমপান করলে শিশুর হাঁপানির প্রবণতা থাকে।

ধুমপান এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। প্যাসিভ ও সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিংয়েও অ্যাজমার অ্যাটাক হতে পারে।

অ্যালার্জি এই অসুখের এক অন্যতম কারণ। ধুলো, ধোঁয়া, বাতাসে ভেসে থাকা ফুলের রেণু, পোষা পশুপাখির লোম, রান্নাঘর ও বিছানার ধুলো, তুলোর আঁশ ইত্যাদি শ্বাসনালীর প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর থেকে অ্যাজমার অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।

কাজের জায়গায় রাসায়ানিকের ধোঁয়া, ধুলো, গ্যাস ইত্যাদির প্রকোপে অ্যাজমার অ্যাটাক শুরু হতে পারে (অকুপেশনাল অ্যাজমা)।

দূষিত পরিবেশ অ্যাজমার অ্যাটাক বাড়িয়ে দেয়।

ঋতুপরিবর্তনের সময় সর্দিজ্বর হলে হাঁপানির প্রবণতা বাড়ে।

গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স বা অ্যাসিডিটি হলে অ্যাজমার কষ্ট বাড়ে।

অনেক সময় অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম করলে হাঁপানির টান ওঠার ঝুঁকি থাকে। এর ডাক্তারি নাম এক্সারসাইজ ইন্ডিউসড অ্যাজমা।

কিছু কিছু ওষুধের (আইব্রুফেন, অ্যাসপিরিন, বিটাব্লকার ইত্যাদি) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অ্যাজমার অ্যাটাক হতে পারে।

নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করুন

হাঁপানি হলে ইনহেলার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। বিশেষ ডিভাইসের সাহায্যে ইনহেলার দিলে দ্রুত রোগের উপশম হয়। অনেকে ইনহেলার ব্যবহার করতে কিন্তু কিন্তু বোধ করেন। বিশেষত বাচ্চাদের ইনহেলার দিতে অনেকেই ভয় পান। জেনে রাখুন ওষুধের থেকে ইনহেলার অনেক বেশি কার্যকর। কেননা ইনহেলারের সাহায্যে ওষুধ নিলে তা সরাসরি শ্বাসনালীতে পৌঁছে যায়। রোগী দ্রুত আরাম পায়। দুরকম ইনহেলার ব্যবহার করা হয়। রিলিভার অর্থাৎ কাশি ও শ্বাসকষ্ট দ্রুত কমানোর জন্যে ইনহেলার দেওয়া হয়। অ্যাজমার অ্যাটাক চলে যাবার পর আপাত দৃষ্টিতে অসুখটা আর নেই মনে হলেও আবার যে কোনও সময়েই ফিরে আসতে পারে। পুনরায় যাতে অ্যাটাক না হয়, তার জন্যেই প্রিভেন্টিভ ইনহেলার নেওয়া দরকার। একই সঙ্গে ট্রিগার ফ্যাক্টর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। তবে কিছু জিনিস আমরা ইচ্ছে হলেও প্রতিরোধ করতে পারিনা। যেমন ঋতু পরিবর্তনের সময় জীবাণুদের বাড়বাড়ন্ত বা পরিবেশ দূষণ। এই কারণে প্রিভেন্টিভ ইনহেলার ব্যবহার করে যাওয়া দরকার। স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনেকে ভয় পান। জেনে রাখুন, অ্যাজমার চিকিৎসায় কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। এগুলি আমাদের শরীরের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া মোটাসোটা চেহারা হাঁপানির সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই ওজন ঠিক রাখতে সঠিক ডায়েট ও নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।

নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও চিকেন পক্সের টিকা নিতেই হবে

আট থেকে আশি যে কোনও বয়সেই অ্যাজমা হতে পারে। এদের প্রত্যেকেরই উচিত বাধ্যতামূলক ভাবে নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও চিকেন পক্সের টিকা নেওয়া। কেননা, হাঁপানির সঙ্গে সঙ্গে নিউমোনিয়া বা চিকেন পক্স হলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। টিকা নেওয়া থাকলে সেই ভয় থাকে না। একটা কথা ভুললে চলবে না, হাঁপানি হল ডায়বিটিস বা হাই ব্লাডপ্রেশারের মতো অসুখ, যা সারে না কিন্তু সঠিক চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই রোগ প্রতিরোধে ট্রিগার ফ্যাক্টরগুলির থেকে দূরে থাকতে হবে। কনকনে ঠান্ডা জল বা ঠান্ডা পানীয় বর্জন করার পাশাপাশি ধূমপান বর্জন করা উচিত। একই সঙ্গে ধোঁয়া, ধুলো-সহ সব রকমের অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা দরকার। টেনশন ও স্ট্রেস হাঁপানির আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। তাই অকারণে উত্তেজিত হবেন না। মন ভাল রাখুন, ওজন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত মর্নিং ওয়াক বা সাঁতার কাটুন। শ্বাসনালী ও ফুসফুস ভাল রেখে ভাল থাকুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asthma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE