Advertisement
E-Paper

হৃদরোগের বিষয়ে জানা-অজানা কথা

হার্ট অ্যাটাক অতি পরিচিত দু’টি শব্দ। শুনলেই ভয় লাগে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের বদলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই পেতে পারেন সুস্থ দীর্ঘ জীবন। জানালেন রামপুরহাট হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত কার্ডিওলজিস্ট চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।সাধারনভাবে হার্টের অসুখ থাকলে বুকে অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয়। সেই সঙ্গে ঘাম এবং শরীর খারাপ লাগে। ক্রমাগত শরীর খারাপ করতে থাকলে হার্টের অসুখ হতে পারে। হার্টের করোনারি আর্টারি বা ধমনী ব্লকেজ থাকলে মানুষের শরীরে নানা সমস্যা হয়। অনেকসময় এই সমস্যাগুলি নিঃশব্দে দানা বাঁধে।

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৮
মুরারইয়ে শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখছেন চিকিৎসক অঞ্জন ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

মুরারইয়ে শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখছেন চিকিৎসক অঞ্জন ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

প্রশ্ন: কী কী ধরনের হার্টের অসুখ হতে পারে?

উত্তর: প্রধানত হৃদসংবহন তন্ত্র, মস্তিষ্ক, বুক ও প্রান্তিক ধমনীর সম্পর্কিত রোগকে হৃদরোগ বলা হয়। হৃদরোগ জন্মগত হতে পারে। আবার বড় হওয়ার পরেও হতে পারে। হার্টের যে স্বাভাবিক গতি সেটা কম বা বেশি হলেই মানুষ সাধারণত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। এটি যে কোনও বয়সেই হতে পারে।

প্রশ্ন: কোন রোগগুলোকে হার্টের রোগ বলা হয়?

উত্তর: সাধারণ ভাবে হার্ট সংক্রান্ত কোনও অসুখকেই হৃদরোগ বলা হয়ে থাকে। যেমন করোনারি হৃদরোগ, কার্ডিও মায়োপ্যাথি, উচ্চ রক্ত চাপ জনিত হৃদরোগ, হার্ট ফেইলিওর, হৃদপিণ্ডের ডান পাশ অচল হয়ে যাওয়া, শ্বাস প্রশ্বাস ব্যহত হয়ে যাওয়া, ভালভুলার ডিজিস ইত্যাদি হার্টের অসুখের মধ্যে পড়ে।

প্রশ্ন: হার্টের কি কি সমস্যা আছে?

উত্তর: হৃদপিণ্ডের মাঝে করোনারি আর্টারি নামে দুটি ছোট ছোট ধমনী থাকে। এরাই হৃদপিণ্ডকে সচল রাখতে সাহায্য করে বা হৃদপিণ্ডকে পুষ্টির জোগান দেয়। কোনও কারণে এই করোনারি আর্টারি যদি ব্লক হয়ে যায় তাহলে যে এলাকায় ওই আর্টারি বা ধমনী রক্তের পুষ্টি পৌঁছে দেয় সে জায়গার হৃদপেশি কাজ করে না। তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। এই সমস্যা যে কোনও সময় হতে পারে। কাজ করতে করতে, ঘুমের ঘোরে সকালে-রাতে হতে পারে। হঠাৎ ভারী কোনও কাজ করলে, বাইরে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় থাকলেও এই রোগ হতে পারে।

প্রশ্ন: হার্টের অসুখ আছে বুঝব কি করে?

উত্তর: সাধারনভাবে হার্টের অসুখ থাকলে বুকে অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয়। সেই সঙ্গে ঘাম এবং শরীর খারাপ লাগে। ক্রমাগত শরীর খারাপ করতে থাকলে হার্টের অসুখ হতে পারে। হার্টের করোনারি আর্টারি বা ধমনী ব্লকেজ থাকলে মানুষের শরীরে নানা সমস্যা হয়। অনেকসময় এই সমস্যাগুলি নিঃশব্দে দানা বাঁধে।

প্রশ্ন: রোগীর কোন কোন লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে?

উত্তর: বুকে ব্যথা, ঘাম, নিঃশ্বাসে কষ্ট, মাথা ধরা এই সব লক্ষণ দেখলে বোঝা যায় রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। হাতে -পায়ে ঝিনঝিনও ধরতে পারে। মূলত রক্তে এল ডি এল (খারাপ) কোলেস্ট্রেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং এইচ ডি এলের (ভালো)মাত্রা কমে গেলে মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয়।

প্রশ্ন: হার্ট অ্যাটাক হলে প্রাথমিক পদক্ষেপ কি?

উত্তর: প্রথমত আক্রান্ত ব্যক্তিকে একদম বিশ্রাম নিতে হবে। দ্বিতীয়ত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। তৃতীয়ত নিয়মিত ই সি জি পরীক্ষা, ব্লাড সুগারের পরীক্ষা এবং ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করাতে হবে।

প্রশ্ন: হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের ব্যপারে কি করতে পারি?

উত্তর: দিনে অন্তত এক মাইল হাঁটতে হবে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করতে হবে। মদ্যপান বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত রক্তের সিরাম, লিপিড পরীক্ষা করাতে হবে। অত্যধিক পরিশ্রমও করা যাবে না। ব্লাড সুগার এবং প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

প্রশ্ন: এখন তো কথায় কথায় শুনি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্ট করে স্টেণ্ট বসাতে হবে। দরকার না থাকলেও স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। কখন আঞ্জিওপ্লাস্ট করতে হবে?

উত্তর: করোনারি আর্টারির মধ্যে রক্ত সঞ্চালন ঠিক আছে কিনা দেখবার জন্য অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করা হয়। অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করে যদি দেখা যায় এক বা ততোধিক করনারি আর্টারি ব্লক রয়েছে তখন স্টেন বসানো হয়।

প্রশ্ন: অ্যাঞ্জিওপ্লাস্ট বিষয়টা কি?

উত্তর: সমস্ত শরীরে জালের মতো ছড়িয়ে আছে রক্তনালী। এটাই রক্ত চলাচলের মসৃণ রাস্তা। এর মধ্যে বিশুদ্ধ রক্ত যাতায়াতের রাস্তাকে ধমনী বলা হয়। আর দূষিত রক্ত যাতায়াতের রাস্তাকে শিরা বলে। বিভিন্ন কারণে রক্তনালীতে চর্বি জমলে রক্ত যাতায়াতের পথ বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন কোনও কাটা ছেড়া না করে রক্তনালীর ব্লক দূর করার নাম অ্যাঞ্জিওপ্লাস্ট। স্টেন বা রিং বসিয়ে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্ট করা হয়।

প্রশ্ন: আচ্ছা হার্ট অ্যাটাক হলে বাইপাস করা হয় না?

উত্তর: যদি তিনটে করোনারি আর্টারিতে ব্লকেজ থাকে তাহলে সাধারণত বাইপাস করা হয়।

প্রশ্ন: ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা কখন?

উত্তর: যখন দেখা যায় রোগীর কোনও বড় সমস্যা নেই এবং করোনারি আর্টারিতে ব্লকেজ নেই তখন ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করা হয়।

প্রশ্ন: কম বয়সে বাইপাস করলে তো বছর পনেরো পরে আবার ব্লক হয়ে যায়?

উত্তর: বাইপাস করা হলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দশ পনেরো বছর পরে আবার পরীক্ষা করানো দরকার। বাইপাস করলেও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থেকেই যায়।

প্রশ্ন: অপারেশনের পর সমস্যা যাতে ঘুরে না আসে, তার জন্য কি করব?

উত্তর: অপারেশনের পর যাতে আবার সমস্যা না হয় তার জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। ব্লাড প্রেসার এবং সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সবকিছুর পাশাপাশি প্রতিদিন হাঁটতে হবে।

প্রশ্ন: খাওয়ার ব্যপারেও তো অনেক বিধি নিষেধ রয়েছে?

উত্তর: সাধারণভাবে তেল, ঘি এবং চর্বিজাতীয় জিনিস না খাওয়াই ভাল। মশলাদার খাবারও কম খেতে হবে। সুগার থাকলে মিষ্টি জাতীয় জিনিস বর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে অত্যধিক নুনও খাওয়া যাবে না।

প্রশ্ন: হৃদরোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয় এমন মানুষেরা কিভাবে হৃদযন্ত্রের যত্ন নিতে পারেন?

উত্তর: নিয়ম মেনে সাধারণ খাওয়া দাওয়া করতে হবে। নিয়মিত হাঁট তে হবে। এছাড়া মদ্যপান, ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে। ব্লাড সুগার এবং ব্লাড প্রেসার থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রশ্ন: মাঝে মাঝে শোনা যায় সুস্থ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?

উত্তর: সত্যিই বিষয়টা খারাপ। কিন্তু এটা হতে পারে। অনেক সময় কারণ জানা যায় না। তবুও মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়।

প্রশ্ন: মানুষ কি উত্তরাধিকার সূত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে?

উত্তর: না এটি বংশগত রোগ নয়। সাধারণত উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয় না। এটি জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন: হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে কেন? এর থেকে উত্তরনের উপায় কি?

উত্তর: অনিয়ম খাওয়া দাওয়া, রাত জাগা, অত্যধিক চিন্তা, শরীর নিয়ে সচেতনতার অভাবে অনেক সময় হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। এগুলি এড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

প্রশ্ন: নিম্ন রক্তচাপে যারা ভোগেন তাঁরা কি হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন?

উত্তর: উচ্চ রক্তচাপ যাঁদের তাঁরা হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হন। তবে নিম্ন রক্তচাপ যাঁদের তাঁরাও হৃদরোগের শিকার হতে পারেন।

প্রশ্ন: হৃদযন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে খারাপ খাবার কোনটি?

উত্তর: সাধারণত শাকসব্জী এবং ফল হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখে। আর তৈলাক্ত খাবার হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে। এছাড়া খাবারে পরিমিত লবণ খেতে হবে।

প্রশ্ন: হৃদরোগের ব্যথা এবং এবং গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার মধ্যে পার্থক্য করা যায় কিভাবে?

উত্তর: হৃদরোগের ব্যথার সঙ্গে প্রেসার কম থাকবে, ঘাম হবে, বুকে ব্যথা হবে। এবং হৃদরোগের ব্যথা ওষুধ খেলে চট করে সেরে যায় না। অন্যদিকে গ্যাসট্রিকের ব্যথা পেটের উপরে দিকে হয় এবং হার্টে চাপ সৃষ্টি করে। গ্যাস, অম্বল, বমি হয়। ওষুধ খেলে চট জলদি কমে যায়। তবে সাধারণ ব্যক্তিরা সবসময় এ পার্থক্য করতে পারেন না। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন: মাঝে মাঝে মানুষকে অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে থাকতে হয়। এতে কি হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হয়। যদি হয় এক্ষেত্রে কি করা যেতে পারে?

উত্তর: রাত জাগা শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। অফিসে থাকলে ঠিক মতো বিশ্রাম নেওয়া যায় না। এর থেকে অনেকরকম অসুখই হতে পারে। সম্ভব হলে এটি এড়ানো উচিত।

Health Medical Heart Disease
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy