এসেছিলেন জাপানি এনসেফ্যালাইটিস নিয়ন্ত্রণে সরকারি পদক্ষেপের কথা জানাতে। বলে গেলেন স্বাস্থ্যকর উপায়ে শুয়োর চাষ এবং শুয়োর হটাও অভিযানের এ দিক-সে দিক নানা কথা।
উত্তরবঙ্গে মারণ রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪০০ মানুষ। এ দিকে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কম। কী ভাবে আক্রান্তদের জীবন বাঁচবে, রোগ নির্ণয়ের পরিকাঠামো বাড়বে কি না, জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ কমাতে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে কি না সে সব ব্যাপারে তেমন কোনও দিক-নির্দেশ পাওয়া গেল না মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। তবে শুক্রবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানাতে ভোলেননি যে, শুয়োর প্রতিপালকদের কথাও সরকার ভাববে। প্রয়োজনে বিকল্প আয়ের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্পের ব্যবস্থা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “লোক নেই। যা ম্যানপাওয়ার দরকার, তা হাতে নেই। এই লোক দিয়েই প্রশাসন চালানো, সাইবার ক্রাইমের তদন্ত করা, পুজো-ঈদ সামলানো, চোর-ডাকাত ধরার পর এখন শুয়োর ধরতে নামাতে হচ্ছে।” তবে সব শুয়োরই তাঁর চোখে এক রকম, তা নয়। তাঁর মতে, গ্রাম-শহরের শুয়োরে ফারাক রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “গ্রামের দিকে যে শুয়োর থাকে, তারা বেশ ভাল। কী সুন্দর মাঠে-ঘাটে চরে বেড়ায়। কিন্তু শহরের দিকে কিছু এলাকায় অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শুয়োর থাকে। মানুষে-শুয়োরে এক সঙ্গে বসবাস করে। তাদের নিয়েই সমস্যা!”
কী সেই সমস্যা, তারও ব্যাখ্যা এ দিন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, “মশা ওই সব শুয়োরের চামড়ায় কামড়াচ্ছে, তার পর উড়ে গিয়ে মানুষকে কামড়ালেই জ্বর হচ্ছে।”
কিন্তু শুয়োর চাষ করতে না দিলে যে সামাজিক সমস্যা হতে পারে, সে সম্পর্কেও মমতা ওয়াকিবহাল। তাঁর বক্তব্য, “পুষতে তো বারণ করতে পারি না। মাংস খেতেও নিষেধ করতে পারি না। তাতে আবার ভুল বোঝাবুঝি হবে। কিন্তু যা অস্বাস্থ্যকর অবস্থা, তাতে মানুষকে একটু সতর্ক হতে হবে।” শুয়োর চাষ যে অনেকেরই জীবিকা, সে কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই তো গ্রামে কী সুন্দর গোয়ালে গরু রাখা হয়। সেখানে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু শহরাঞ্চলে নোংরা পরিবেশে খাটালে গরু থাকে। সেখান থেকেও নানা রোগব্যাধি ছড়ায়। সেই কারণেই খাটাল তুলে দেওয়া হয়েছে। শুয়োরের ক্ষেত্রেও কিছু একটা করতে হবে।”
কী করবে সরকার? মুখ্যমন্ত্রী জানান, আপাতত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শুয়োর পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। সেই সঙ্গে শুরু হবে শুয়োর হটাও অভিযান। গোটা রাজ্যে এই অভিযান চলবে। সরকার প্রয়োজন হলে টাকা দিয়ে গরিব মানুষের শুয়োর কিনে নেবে। বিকল্প পুনর্বাসন প্রকল্প করা হবে।
কিন্তু শুয়োর হটাও অভিযানটা ঠিক কী? হাজার হাজার শুয়োর সংগ্রহ করে সরকার কী করবে? তাদের মেরে ফেলা হবে, নাকি আলাদা করে কোথাও রাখা হবে? মুখ্যমন্ত্রী জানান, সে সব এখনও ঠিক হয়নি। প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের সঙ্গে বসে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
শুয়োর হটাও অভিযানের কথা শুনে গোড়ায় বেশ খানিকটা অবাক হয়েছিলেন প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই ঘোষণা করেছেন, জানতে পারার পরই তাঁর প্রতিক্রিয়া বদলে যায়। বলেন, “এই সবে বর্ধমান থেকে দফতরে এসেছি। কিছুই বলতে পারব না। সরকার যেমন চাইবে, তেমনই হবে।” দফতরের সচিব রাজেশ সিংহের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
প্রাণিসম্পদ দফতরের বিশেষজ্ঞরা কিন্তু জানিয়েছেন, জাপানি এনসেফ্যালাইটিস নিয়ন্ত্রণে শুয়োর হটাও অভিযানের গুরুত্ব নেই।
কারণ, শুয়োর শুধুই ‘মাল্টিপ্লায়ার হোস্ট’। অর্থাৎ তার শরীরে এসে এই রোগের জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। কিন্তু সেই জীবাণু মানুষের শরীরে আসে মশা মারফত। কাজেই মশা নিয়ন্ত্রণটাই আসল। মশা মারতে গাম্বুশিয়া মাছ বা পাতিহাঁসের চাষ বাড়ানো দরকার। তারা ওই মশার লার্ভা খেয়ে ফেলে। তাই সরকার শুয়োর কিনে নিলে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস নিয়ন্ত্রণের শিকড়ে পৌঁছনো যাবে না বলেই সরকারি পশু বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy