সমগ্র মানবজাতির একটি বিশেষ স্বভাব আছে। তারা যে প্রজন্মে বড় হয়েছে, সেই সময়ের সব কিছু নিয়েই তাদের প্রচ্ছন্ন গর্ব আছে। ভাবখানা এমন, ‘আমাদের সময়ে তো সব কেমন দিব্যি ছিল, অথচ এখনকার ছেলেমেয়েগুলোকে দেখো! তারা কেমন, আর তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চারপাশটাও কেমন যেন বদলে গেল’। বলাই বাহুল্য, এই বদলে যাওয়ার প্রকাশটা বেশির ভাগ সময়েই প্রশংসাসূচক নয়।
তবে আগের প্রজন্মের এই উষ্মা প্রকাশ বা দীর্ঘশ্বাস নতুন প্রজন্ম কখনও বিশেষ গায়ে মাখে না। প্রজন্মগত ভালমন্দ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলতেই পারে, তবে সময়ের সঙ্গে পৃথিবী, সমাজ, বিজ্ঞান, মানুষের দৈনন্দিন যাপন যে পাল্টাবে, সে তো জানা কথাই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরনো প্রজন্মকেও সময়ের দাবিতে নতুন কিছু বদল মানিয়ে নিতে হয়। তবেই পৃথিবী এগোয়, নতুন নতুন আবিষ্কার হয়, অফলাইন জীবন থেকে মানুষ পা রাখে অনলাইন জীবনে। এক সময়ে এই অনলাইন জগৎটাই যাপনের মূল রসদ হয়ে ওঠে।
সময় বদলাচ্ছে ঘন ঘন। এই কিছু দিন আগেও দুনিয়ার নজরের কেন্দ্রে ছিল মিলেনিয়ালরা অর্থাৎ, যাদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে। আর এখন তাদের থেকে নজর সরে কেন্দ্রে এসেছে ‘জেন জ়ি’। মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২— এই সময়ের মধ্যে যাদের জন্ম, তাদেরই ‘জেন জ়ি’ বলা হয়ে থাকে। এখন প্রত্যেক প্রজন্মেরই বেড়ে ওঠার সময়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে, যা তাদের মানসিকতায় ভাল রকম প্রভাব ফেলে।
১৯৮০-পরবর্তী বছরগুলি
আমরা যদি মিলেনিয়ালদের বড় হয়ে ওঠার বছরগুলির দিকে তাকাই, তা হলে দেখতে পাব, তারাই প্রথম, যারা প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেখেছে, যিনি কৃষ্ণাঙ্গ। এমনকি, তাদের অনেকেই তখন ভোটাধিকার প্রাপ্ত হওয়ায়, তাদের ভোটই মূলত বারাক ওবামার জয়ের কারণ। এরা দেখেছে ৯/১১-র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস হতে, আবার এরাই যখন চাকরির জগতে পা রাখছে, তত দিনে ‘রিসেশন’ বা মন্দার বাজার দেখেছে।
এক রকমের ‘ইন্টারনেট বিস্ফোরণ’ই হয়েছে বলা যায় মিলেনিয়ালদের জীবনে। ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপ পেরিয়ে, অরকুট থেকে ফেসবুক হয়ে ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, হোয়াট্সঅ্যাপ আর স্ন্যাপচ্যাটের ভারে এক রকম নুয়ে পড়তে পড়তেই খানিক সামলে নিয়েছে তারা। ছবি সহায়তা: এআই।
তার চেয়েও বড় বিষয় হল, এদের মধ্যে বেশির ভাগই বড় হয়েছে ‘ইন্টারনেট যুগের’ আগে। এরা যখন কলেজ বা চাকরির জগতে পা রাখছে, তখন এক রকমের ‘ইন্টারনেট বিস্ফোরণ’ই হয়েছে বলা যায় তাদের জীবনে। ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপ পেরিয়ে, অরকুট থেকে ফেসবুক হয়ে ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, হোয়াট্সঅ্যাপ আর স্ন্যাপচ্যাটের ভারে এক রকম নুয়ে পড়তে পড়তেই খানিক সামলে নিয়েছে তারা। এখন তাদের কর্পোরেট জীবন ল্যাপটপ, এক্সেল শিট, ডিজিটাল প্রেজ়েন্টেশন এবং নানাবিধ সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছেয়ে গিয়েছে, এ কথা মিথ্যা নয়। ক্লাসনোট, হাতচিঠি, টেলিভিশন, ল্যান্ডলাইন— সবটাই এখন নস্ট্যালজিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। দ্রুত চলতে চলতে খানিক থমকে দাঁড়ানো, ছোটবেলায় ফিরে তাকানো।
মিলেনিয়ালরা এখন তাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে। তবে যেহেতু সময় দ্রুত বদলাচ্ছে, খুব শিগগির আলোচোনার কেন্দ্র দখল করে নেবে ‘জেন জ়ি’রা। অবশ্য তা কেন, তারা তো ইতিমধ্যেই আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে! আগের প্রজন্মগুলির সঙ্গে ‘জেন জ়ি’র সবচেয়ে বড় তফাত হল, তারা বেড়েই উঠেছে ডিজিটাল যুগে। ফলে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ডিজিটাল ঘড়ি থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার খুঁটিনাটি— সবটাই তাদের মজ্জাগত। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন কলেজপড়ুয়া বা কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে চাকরির জগতে পা রেখেছে। আর এখানেই আগের প্রজন্মের সঙ্গে এক রকম মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে তারা।
স্ক্রিনের এ পার-ও পার
‘মিলেনিয়াল’ বা তাদের পূর্ববর্তী ‘জেনারেশন এক্স’-এর কথা যদি ধরা হয়, তা হলে এই মুখোমুখি হওয়াতেই ‘জেনারেশন জ়ি’র ঘোরতর আপত্তি। এক রকম মোবাইল মুখে নিয়ে বড় হওয়া এই প্রজন্মের সব কিছুর মাঝেই একটা স্ক্রিন থাকলে বুঝি ভাল হয়, এ রকম একটা হাবভাব প্রকট। অর্থাৎ, মৌখিক যোগাযোগের দফারফা। এদের মধ্যে অনেকেই সদ্য চাকরি করতে শুরু করেছে অতিমারি চলাকালীন। ফলে এদের চাকরিজীবনের শুরু ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ দিয়ে। অতিমারি শেষ হয়েছে বছর দুয়েক পেরিয়ে গিয়েছে, তবু অফিসে এসে কাজ করার কথা শুনলেই এদের গায়ে নাকি জ্বর আসে! এই জেনারেশনের মতে সবটাই যদি অনলাইনে সম্ভব হয়, তবে অফলাইন কাজের প্রয়োজন কী?
ডিজিটাল পর্দায় বন্দি জেন জ়ি জীবন। তবে এরা সাহসী। নিজেদের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা শুনতে আগ্রহী। আবার কাজের জন্য প্রমোশন প্রাপ্য মনে করলে, সেটাও জানাতে ভোলে না। ছবি সহায়তা: এআই।
এখন প্রশ্ন হল, এটা কি আদৌ কোনও সমস্যা, না কি আগের প্রজন্মেরা বরাবর অফিসে গিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত বলে তাদের এই পরিবর্তন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে? তর্কের কেন্দ্রটা ঠিক কোথায়? সময় বদলালে মানুষের ধরন-ধারণ যে বদলাবে, সে তো জানাই। মানুষ এক সময়ে যে কাজ হাতে-কলমে করত, সে কাজ এখন কয়েকটা ক্লিকেই সম্ভব। এতে জীবন তো সহজই হয়েছে। আপত্তিটা তবে কোথায়?
‘মিলেনিয়াল’, অর্থাৎ যাদের বয়স এই মুহূর্তে ২৫ থেকে ৪৫-এর মধ্যে, তারা অনেক ঝটিতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে ২০১২-র পর থেকে ডিজিটাল দুনিয়া ও প্রযুক্তির যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে, তার সঙ্গেও তাদের মানিয়ে নিতে হয়েছে। তা হলে ‘জেন জ়ি’র স্বভাব বদল, বা জীবনযাপনের নতুন ধারণা তাদের যে খুব একটা অস্বস্তিতে ফেলবে, সে তো হওয়ার কথা নয়! তবু কিছু সমস্যা রয়েই যাচ্ছে। অনেকটা হালকা মজার ছলে উড়িয়ে দেওয়া গেলেও, সবটাই যে ফেলনা, এমনটাও নয়। কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত অন্বেষা সরকারের কথায়, “এরা কখনওই গোটা বাক্য বলতে চায় না। এমন সব শব্দ ব্যবহার করে, যার মানে বুঝতে কষ্ট হয়। তবে সেই নিয়ে টিমের মধ্যে বিরক্তি কম, ঠাট্টার প্রচলনই বেশি। এখন আমরাও ‘রিজ’, ‘স্কিবিডি’-র মানে বুঝে গেছি। নতুন প্রজন্মের নতুন ভাষা। না জানলেও মুশকিল। তবে যদি সমস্যার কথা বলতে হয়, তা হলে এই প্রজন্মের কথা বলার তাগিদ কম।’’
এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ব্র্যান্ড স্টোরিটেলিং অ্যান্ড কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি লিড অরিজিৎ সেন অবশ্য একেবারে অন্য মতামত দিচ্ছেন। তাঁর টিমের ৮০ শতাংশ কর্মী ‘জেন জ়ি’। তিনি বলছেন, “বসের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে খুব’ই পারদর্শী আমার টিম। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের প্রফেশনালিজ়মের অভাব আছে। কিন্তু তার বাইরে গিয়ে ওরা আমার জামাকাপড়ের রং বেছে দেয়। আমি বেশি কালো রঙের পোশাক পরতে ভালবাসি বলে জন্মদিনে অন্য রঙের টিশার্ট কিনে দিয়ে দাবি জানায় যে, ওটাই পরে আসতে হবে। এরা নিজেদের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা শুনতেও আগ্রহী। আমরা মিলেনিয়ালরা কিন্তু বেশির ভাগ এতটা খোলা মনের ছিলাম না।’’ তিনি জানাচ্ছেন, এরা অনায়াসে নিজের বেতন নিয়ে আলোচনা করে, আবার কাজের জন্য প্রমোশন প্রাপ্য মনে করলে, সেটাও জানাতে ভোলে না। নিজেদের মধ্যে ‘জেন জ়ি ভাষা’ ব্যবহার করলেও অন্যদের সামনে সেটা করে না।
নামী এক কর্পোরেটের হিউম্যান রিসোর্স-এর মাথা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অবশ্য এক গুরুতর সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, পান থেকে চুন খসলেই, এই ‘জেন জ়ি’ চাকরি ছাড়তে মরিয়া হয়ে ওঠে। এমনকি, কোনও কিছু তাদের মনোমতো হোক বা না হোক, আট মাস থেকে বড়জোর এক বছর তাদের এক অফিসে থাকার মেয়াদ। এর ফলে যে কোনও সংস্থা তাদের চাকরিতে বহাল করার আগে দু’বার ভাবছে। আর তাদের এই স্বভাব ভবিষ্যতে বড় সমস্যা হয়ে উঠে পারে। যে প্রজন্ম আগামী কিছু বছরে দেশ ও সমাজের এক রকম হাল ধরবেই বলা যায়, তাদের ঘন ঘন মতি বদল হলে, বাকিরা তাদের কথা শুনবে কেন?
পক্ষপাতদুষ্ট না কি সচেতনতা জরুরি?
যেহেতু সময় বদলাচ্ছে, আগামী বিশ বছরে আরও কী কী যে পরিবর্তন আসতে পারে, তা এখন থেকে আন্দাজ করা মুশকিল। এ-ও ভুললে চলবে না যে, কী সময়ে ‘জেন জ়ি’রা বড় হয়েছে, বা এখনও হচ্ছে। ‘মিলেনিয়াল’রা যেমন দেখেছিল প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি, তারা দেখছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এমনকি, বিগত ১০ বছরে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মোট চার বার বদল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকার ফলে প্যালেস্তাইনে ঘটে যাওয়া গণহত্যার সরাসরি সম্প্রচার ঘটছে নিয়ত তাদের চোখের সামনে। ভাল, মন্দ, ভয়ঙ্কর সব মিশিয়ে তাদের মনে ও মস্তিষ্কে যে প্রভাব পড়ছে, তার ফল পাওয়া যাচ্ছে হাতেনাতে।
কোনও কিছুতেই থিতু হতে চায় না জেন জ়ি। সে চাকরিই হোক, বা প্রেম/ বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সব সময়ে আরও ভাল কিছুর চিন্তায় তারা মশগুল। এই সব করতে গিয়ে প্রেমটাই মাটি হয়ে যায়। ছবি সহায়তা: এআই।
এ ছাড়া, ডিজিটাল মাধ্যমে নিজের মনোমতো দুনিয়া গড়ে নেওয়ার ছাড়পত্র তো আছেই। কোনও কিছুই বেশি ব্যবহার করলে তার ভাল, খারাপ দুইয়েরই প্রভাব পড়ে। ইন্টারনেট দুনিয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। এই কিছু দিন আগে নেটফ্লিক্সের একটি ব্রিটিশ টেলিভিশন শো ‘অ্যাডোলেসেন্স’ দেখার পর সাড়া পড়ে গিয়েছিল নেট দুনিয়ায়। একটি ১৩ বছরের ছেলে, নাম জেমি মিলার, অনায়াসে তার সহপাঠিনী কেটিকে খুন করেছে। আর খুন করে ধরা পড়ার পরেও নির্বিকার ও বেশ খানিক জোরের সঙ্গে বলছে, সে কোনও ভুল করেনি। অনলাইনে যে হারে স্ত্রী-বিদ্বেষ, বিষাক্ত পুরুষতন্ত্র, বা রাগের প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা, তার এক রকম বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছিল এই সিরিজ়। এর যতটা না কাল্পনিক, তার চেয়ে সত্যি বেশি। ভুললে চলবে না, ১৩-১৪ বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা কিন্তু এই ‘জেন জ়ি’রই অন্তর্গত।
প্রেমের সম্পর্কেও হাজার রকম শব্দ রয়েছে, যা দিয়ে অভিধানের বেশ কিছু পাতা ভরিয়ে ফেলা যায়। ‘বেঞ্চিং’, ‘ব্রেডক্রাম্বিং’, ‘সিচুয়েশনশিপ’ ‘ফ্রেনেমি’ থেকে আরম্ভ করে এক লম্বা তালিকা। আর এক-এক শব্দের এমন প্যাঁচালো মানে, যে মিলেনিয়ালরাও এর সঙ্গে তাল রাখতে হিমশিম খেয়ে যাওয়ার জোগাড়। এত কাণ্ড করতে গিয়ে শেষে প্রেমটাই মাটি হয়ে যাচ্ছে না তো? মনোবিদ কৃতিকা গুপ্তের মতে, “এই প্রজন্মের মধ্যে উদ্বগের প্রবণতা অনেক বেশি। তাই কোনও কিছুতেই থিতু হতে তাদের আশঙ্কা। সে চাকরিই হোক, বা প্রেম/ বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সব সময়ে এর চেয়ে যেন আরও ভাল কিছু অপেক্ষা করে আছে, সেই চিন্তাতেই তারা মশগুল। হয়তো সে জন্যই সম্পর্কের এমন হরেক কিসিমের নাম।’’ তবে তিনি এ-ও বলতে ভুলছেন না যে, ‘‘সম্পর্কের অস্থিরতার শুরু কিন্তু মিলেনিয়াল যুগ থেকেই। আপস না করতে চাওয়ার প্রবণতা এদের থেকেই শুরু, যা জারি থেকে গিয়েছে পরবর্তী প্রজন্মেও।’’
সম্পর্কের নানা নাম থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এই প্রজন্ম যে অনেক বেশি সচেতন, তা মানছেন খুঁত ধরা মিলেনিয়ালরাও। ‘জেন জ়ি’-দের কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনকে গুরুত্ব দেওয়ার জোর দেখে ভালই লাগে তাদের। যে সব মিলেনিয়াল আগে দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে তবে ছুটি পেতেন, তাঁরাও এখন ‘জেন জি’র সঙ্গে গলা মিলিয়ে আট ঘন্টা কাজের দাবি জানাচ্ছেন, এবং আশা রাখছেন, অনেক কর্পোরেটই তা মেনে নিতে বাধ্য হবে।
চ্যাট জিপিটি ও এআই আকর্ষণ
প্রায়শই শোনা যায় যে ‘জেন জ়ি’ অনেকটাই ‘চ্যাট জিপিটি’র উপর নির্ভরশীল। এর সাহায্য ছাড়া দৈনন্দিন জীবন তাদের কাছে যেন দুর্বিষহ। পড়াশোনা থেকে থেরাপি– তাদের কাছে একমাত্র মুশকিল আসান এটিই।
লেখাপড়া থেকে সৃজনশীল কাজ, সবটাই এআই-এর মাধ্যমে হচ্ছে। 'চ্যাট জিপিটি’ এদের ‘সব পেয়েছি’র জগৎ। কিন্তু সব কিছু হাতের কাছে থাকার ফলে নিজের শেখা, বা জানার চেষ্টায় খামতি থেকে যাচ্ছে। ছবি সহায়তা: এআই।
আজ়িম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর আদিল হোসেন জানাচ্ছেন, ছাত্রদের ‘ফিল্ড ওয়ার্কের’ জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী সেটা না করে চ্যাট জিপিটি’র সাহায্য নিয়ে প্রোজেক্ট লিখে জমা দিয়ে দেয় নিঃসঙ্কোচে, অথচ লেখা দেখলেই অনায়াসে ধরে ফেলা যায়। পড়াশোনা থেকে মানসিক অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন সবই ‘চ্যাট জিপিটি’কে। যেন কোন ‘সব পেয়েছি’র জগৎ।
তার সঙ্গে এআই দোসর। লেখাপড়া থেকে সৃজনশীল কাজ, সবটাই এআই-এর মাধ্যমে হচ্ছে। কিছু দিন আগেই সমাজমাধ্যমে ‘জিবলি ট্রেন্ড’ শুরু হয়েছিল। কিছুই নয়, নিজেদের ছবি এআই টুলের সাহায্যে ‘স্টুডিয়ো জিবলি’র ছবির আদলে বদলে ফেলা। শুধু জেন জ়ি নয়, মিলেনিয়াল এবং আরও অনেকেই এই টুল ব্যবহার করে বেশ মজাই পাচ্ছিল। তবে খুশি হননি ‘জিবলি’র সৃষ্টিকর্তা হায়াও মিয়াজ়াকি। তিনি একে ‘ইনসাল্ট টু লাইফ’ বলে ব্যখ্যা করেন। বলেন, দিনের পর দিন কঠিন অধ্যবসায়ের ফলে মানুষ যা সৃষ্টি করে, তাকে অপমান করা হয় এই সব ট্রেন্ডের মাধ্যমে।
অরুণাভ সিংহ (অনুবাদক ও অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুখের ভাষা, চরিত্র, ব্যবহার— এ সবই পাল্টাবে। কারণ, প্রত্যেকটা প্রজন্মই নতুন করে জগৎকে দেখে। তাই এ সব নিয়ে মজার ছলে ‘ইনস্টাগ্রাম রিল’ হবে, ইউটিউব ভিডিয়ো হবে— এ সবই স্বাভাবিক। তবে শিক্ষক হিসেবে তিনি মনে করছেন, ছাত্রছাত্রীদের আরও মননশীল হতে হবে। সব কিছু হাতের কাছে থাকার ফলে নিজের শেখা, বা জানার চেষ্টায় খামতি থেকে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
শেষ কথা…
আসলে কোন প্রজন্মকেই বোঝা বিশেষ শক্ত নয়। যদি তাদের সময় দেওয়া যায়, তাদের প্রতি সহনশীল হওয়া যায়। যোগাযোগের ব্যর্থতা আর বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করা ‘জেন জ়ি’র কাছে খুবই সাধারণ ব্যপার। ‘মিলেনিয়াল’রা তার সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারে না, কারণ সময়টাই আলাদা হয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে পৃথিবীর দায়ভার যখন ‘জেন জ়ি’র হাতে পড়বে, তখন তারাও হয়তো সামলে নেবে ঠিকই। ভুল সকলেরই হয়। আগের প্রজন্মের সকলেই ভুল-ঠিক মিলিয়ে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বদলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হবে না। কারণ, প্রজন্মের সঙ্গে সঙ্গে সময়ও পরিবর্তনশীল।