খাওয়াদাওয়া না কমালে রোগা হওয়া যাবে না—এই ধারণা হয়তো এবার বদলাতে চলেছে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে ক্যালোরি মেপে খাবার না খেয়েও রোগা হওয়া সম্ভব। যদি শরীরের বিশেষ একটি উপাদানকে ঠিক মতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আমেরিকার বিজ্ঞানীরা সেই বিশেষ উপাদানের নাম এবং মেদ ঝরাতে তার ভূমিকা আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, অ্যামিনো অ্যাসিড সিস্টিন নামে প্রোটিনের একটি উপাদান এ ব্যাপারে ‘বড় ভূমিকা’ পালন করে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শরীরে অ্যামিনো অ্যাসিড সিস্টিনের মাত্রা কমলে হোয়াইট ফ্যাট ব্রাউন ফ্যাটে বদলে যায়। তাতে লাভ কী? আমেরিকার পেনিংটন বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস অ্যান ডিজ়িজ় গবেষণাগারের অধিকর্তা ক্রিস্টিয়ান স্ট্যাডলার বলছেন, ‘‘হোয়াইট ফ্যাট মেদ জমিয়ে রাখে। অন্য দিকে ব্রাউন ফ্যাটের কাজ হল শরীরে থাকা মেদ ভেঙে কাজের শক্তি তৈরি করা। তাই হোয়াইট ফ্যাটকে যদি ব্রাউন ফ্যাটে বদলানো যায়, তবে ফ্যাট ভাঙবে দ্রুত। শরীরে বাড়তি মেদ না জমলে ওজনও বাড়বে না।’’
আমেরিকার ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিন, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন, পেনিংটন বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার এবং জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিনের মতো সংস্থা এক সঙ্গে মিলে এ ব্যাপারে একটি গবেষণা করেছিল। সেই গবেষণা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে নেচার পত্রিকায়। সেখানে গবেষকদলের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ওজন কমানোর ব্যাপারে যে অ্যামিনো অ্যাসি়ড সিস্টিনের কথা বলা হচ্ছে, সেটি প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু তাকে প্রোটিন থেকে সরানো গেলে বা বলা ভাল শরীরে তার উপস্থিতির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই বিপাকের হার বাড়বে। জমে থাকা ফ্যাট ভাঙবে আপনা হতেই। ওজন কমা অতি সহজ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুন:
শুধু কথার কথা নয়। এই পরীক্ষা প্রায় এক বছর ধরে গবেষকেরা চালিয়েছেন মানুষ এবং কিছু প্রাণীর উপর। তার পরেই ওই ফলাফলে উপনীত হয়েছেন তাঁরা। তবে এই পরীক্ষার কিছু সীমাবদ্ধতাও মাথায় রাখা জরুরি। বিজ্ঞান বলছে, প্রোটিনের যে অ্যামিনো অ্যাসিড সিস্টিনকে সরানোর কথা বলছেন গবেষকেরা, তা শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। শুধু তা-ই নয়, সেটি একটি জোরালো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট-ও। যা শরীরকে নানা জটিল রোগের কবল থেকে দূরে রাখে। তাই গবেষকেরা যে অ্যামিনো অ্যাসিড সিস্টিনকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলছেন, তা শরীরের কোনও রকম ক্ষতি না করে কী ভাবে সম্ভব, তা এখনও পরীক্ষা সাপেক্ষ।