Advertisement
E-Paper

এআই কি সত্যিই পারে মানুষকে কর্মহীন করে দিতে! কোন ক্ষেত্রে চাইলেও পাল্লা দিতে পারবে না?

এআই প্রযুক্তির নিত্যনতুন ক্ষমতা যত জানা যাচ্ছে, ততই বাড়ছে চিন্তা। স্বাভাবিক। কারণ, আগে যে কাজের জন্য যন্ত্রের পাশাপাশি মানুষের ভাবনা-চিন্তারও দরকার পড়তো, আর তা প্রয়োজন হচ্ছে না।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৫ ১০:০৬

ছবি : সংগৃহীত।

এআই আসার পর থেকেই চাকরির বাজারে গেল গেল রব উঠেছে। কারণ, কৃত্রিম মেধাচালিত এই প্রযুক্তি একাধারে যন্ত্রের কাজ তো করছেই, তার পাশাপাশি, মানুষের মতো মাথা খাটানোর কাজও করছে। অফিস প্রেজ়েন্টেশন, জরুরি ইমেল লেখা, নানা সমস্যার সমাধান, নানা প্রশ্নের উত্তর, সবই হাজির তার কাছে। নিজে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এমনকি, কিছু কিছু সৃষ্টিশীল কাজও করে ফেলছে অনায়াসে। বুঝতে পারছে সব ভাষা। বুঝে নিচ্ছে না বলা অনেক কথাও। যেমনটা বুঝে নেয় মানব মস্তিষ্ক!

এআই প্রযুক্তির এমন নিত্যনতুন ক্ষমতা যত জানা যাচ্ছে, ততই বাড়ছে চিন্তা। স্বাভাবিক। কারণ, আগে যে কাজের জন্য যন্ত্রের পাশাপাশি মানুষের ভাবনা-চিন্তারও দরকার পড়তো, আর তা প্রয়োজন হচ্ছে না। পরিশ্রম কমিয়ে দিচ্ছে এআই। দূরদর্শীরা তাই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, অচিরেই লাখো মানুষ চাকরি হারাতে চলেছেন এআইয়ের দৌলতে। কিন্তু সত্যিই কি এআই মানুষের চাকরি কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে? তাই যদি হবে, তবে কি জেনে শুনেই নিজের সর্বনাশ নিজেরা ডেকে আনল মানবজাতি?

এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, এআই অনেক কাজ পারে। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে এআই অনেক কিছু পারে না-ও বটে। মানুষ এআইকে কিছু ক্ষমতা যেমন দিয়েছে, তেমনই কিছু ক্ষমতা দেয়নিও। সেগুলি কী?

১। আবেগ অনুভূতিহীন এআই। সে কাজ করে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান, আবেগ, অনুভূতি যেমন মস্তিষ্ককে প্রতি মুহূর্তে বদলাতে থাকে, যার উপর নির্ভর করে অনেক সিদ্ধান্তও, এআই তা পারে না।

২। অন্তর্দৃষ্টি নেই। সে ক্ষমতা আছে মস্তিষ্কের। কোনও বিষয়কে চোখে দেখার বা কানে শোনার সঙ্গে সঙ্গে অনুমান এবং অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে আগাম সিদ্ধান্ত নেয় মস্তিষ্ক। এআই সেখানে পিছিয়ে যাবে।

৩। সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে কোনও পরিস্থিতি বা ঘটনাতে বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতাও নেই এআইয়ের।

৪। সামাজিক পরিস্থিতির বিচার বিশ্লেষণ করে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া বা সিদ্ধান্ত বদলে ফেলার যে ক্ষমতা মানুষের রয়েছে, তা-ও এআইয়ের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়।

৫। যেহেতু এআই আবেগ-অনুভূতিহীন, তাই তার মানবিকতা বোধও নেই। নেই নীতি বোধ। যেকোনও বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনেক সময়েই শুধু তথ্য যথেষ্ট হয় না। সহানুভূতি, মূল্যবোধ, নীতিবোধও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেয়। এআইয়ের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়।

৬। প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য এআই তার গোটা বিশ্বের সমস্ত সার্ভারে যে ভাবে খোঁজ খবর চালায়, তার জন্য দরকার পরে প্রচুর শক্তির। সেই শক্তির যোগান দেওয়াও চিন্তার বিষয়। মানব মস্তিষ্কের সেই চিন্তা নেই।

এই সমস্যা গুলির জন্য পেশার জগতে অধিকাংশ কাজই এআই-এর একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। কোন কোন পেশার কাজ এআইয়ের পক্ষে করা সম্ভব নয়?

১। যেকোনও সৃজনশীল পেশা যেমন, নাচ, গান, শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীতের ক্ষেত্রে মানুষের জায়গা নিতে পারবে না এআই। এ কথা ঠিক, এআইকে কবিতা লিখে দিতে বললে বা গান লিখে দিতে বললে লিখে দিতে পারবে। কিন্তু মানুষের আবেগ এই সমস্ত শিল্পে যে বাড়তি মাত্রা দেয়, যা তাকে হৃদয়স্পর্শী করে তোলে, তা এআইয়ের পক্ষে সম্ভব নয়।

২। শিক্ষকতার কাজও করতে পারবে না এআই। কারণ সে কাজ কেবল ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন তথ্য জানানো নয়। এক জন শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশেও সাহায্য করেন শিক্ষক। ছাত্র বা ছাত্রীর দুর্বলতার জায়গাটি বুঝে নিয়ে তিনি তাকে তার বোঝার মতো করে শিক্ষাদান করেন। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এআইয়ের নেই।

৩। মনোবিজ্ঞানী বা থেরাপিস্ট হতেও পারবে না এআই।

যদিও এআই সহজলভ্য হওয়ার পরে অনেকে নিজের জীবনের সমস্যার সমাধান চেয়ে তার দ্বারস্থ হয়েছে। সাধ্যমতো প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে সাহায্যও করেছে এ। কিন্তু মনোরোগ নির্মূল করার জন্য শুধু সেটুকুই যথেষ্ট নয়। সেখানে রোগীর সঙ্গে বিশ্বাস ও সহানুভূতির সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। মানুষের মনে নানা আবেগের জটিলতা বোঝার জন্য যে গভীর সংবেদনশীলতা প্রয়োজন, তা এআই-এর পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়।

৪। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এআই রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু এক জন চিকিৎসকের কাজ শুধু রোগ নির্ণয় নয়। রোগীর যত্ন নেওয়া এবং কঠিন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রোগীর প্রাণও বাঁচান তাঁরা। যা এআই পারবে না। যেমন পারবে না সেবার কাজ করতেও।

৫। এ আই- এর নিজস্ব কোনও কৌতুহল নেই। তাই সে তদন্ত, গবেষণা, সাংবাদিকতার মতো কাজও যথাযথ ভাবে করতে পারবে না। তাছাড়া এই প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই মানুষের সঙ্গে কথা বলা, তথ্য সংগ্রহ করার মতো কাজ জড়িয়ে আছে। জড়িয়ে আছে সেই তথ্যের বিচার বিশ্লেষণ এবং সমাজে বদল আনার জন্য তার উপযুক্ত এবং সৃষ্টিশীল প্রয়োগ। যা এআই- এর পক্ষে করা সম্ভব হবে না।

এমনই আরও অনেক কাজ রয়েছে, যে সমস্ত কাজে পরিস্থিতির সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সিদ্ধান্ত বদল এবং বিচার বিশ্লেষণের কাজ জড়িয়ে আছে। সেই সমস্ত কাজই এআই মস্তিষ্কের কাছে হার মানবে।

AI incapabilities AI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy