থেঁতো না কি কুচি বা গোটা কোয়া? জানেন কি, রসুন কাটার উপর ভিত্তি করেই রান্নার স্বাদ পাল্টে পাল্টে যায়?

রান্নার স্বাদে রসুনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কখনও ঝাঁঝালো, কখনও হালকা মিষ্টি, আবার কখনও কড়াও হতে পারে। কিন্তু কী ভাবে একই রসুন এমন ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ তৈরি করে? রহস্য লুকিয়ে কেবল কাটার পদ্ধতিতে। শুনে অবাক লাগলেও এটি রন্ধনপ্রণালীর গুণ। তবে এ ঠিক রান্নার সময়ে নয়, তার আগের ধাপের উপর নির্ভরশীল।

রসুনের কোয়ার ভেতরে এমন এক ধরনের উপাদান থাকে, যা তখনই সক্রিয় হয় যখন কোষ ভেঙে যায়। তা হল অ্যালিসিন। রসুনের অনন্য স্বাদ আসে এই অ্যালিসিন নামক যৌগ থেকেই। সালফারযুক্ত যৌগটি রসুনের সুগন্ধ এবং তীব্র স্বাদের কারণ। রসুন কাটা, থেঁতো করা বা বাটা হলে রসুন থেকে অ্যালিনেজ় নামে এক এনজ়াইম নিঃসৃত হয়। এই এনজ়াইম অ্যালিসিন তৈরি করার জন্য অন্য একটি যৌগ, অ্যালিনের সঙ্গে মিলিত হয়। রসুনকে নিয়ে যত বেশি কাটাছেঁড়া করা হবে, তত বেশি অ্যালিসিন নিঃসৃত হবে। ফলে আরও স্পষ্ট স্বাদ তৈরি হবে। তাই আপনি রসুনকে ঠিক কী ভাবে ব্যবহার করছেন, সেটির উপর নির্ভর করছে খাওয়ার সময়ে কোন স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে।

রসুন যত বেশি কাটা বা থেঁতো করা হয়, তার ভেতরের কোশ তত বেশি ভাঙে। কোশ যত বেশি ভাঙবে, তত বেশি ঝাঁজ তৈরি হবে। আবার কোয়া আস্ত রাখলে বা হালকা ফালি করলে সেই ঝাঁজ অনেক কমে যায়। আর তাই রান্নার ধরন অনুযায়ী রসুনের স্বাদ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে কাটার ধরনগুলি জেনে নেওয়া জরুরি।

রসুন কাটার ধরন অনুযায়ী স্বাদের পার্থক্য

১. আস্ত রসুনের কোয়া ব্যবহার করলে

রসুন যদি একেবারে আস্ত অবস্থায় রান্নায় দেওয়া হয়, অর্থাৎ না কেটে, না থেঁতো করে, তাহলে তার ঝাঁজ প্রায় থাকেই না। রান্নায় শুধু হালকা সুবাস ও মৃদু মিষ্টি স্বাদ যোগ করে।

২. ফালি করে কাটলে

রসুনের কোয়া পাতলা করে ফালি করলে তার স্বাদ খানিকটা ঝাঁঝালো হয়, তবে তা বেশ মৃদু। এটি এমন রান্নায় ভাল মানায় যেখানে অতিরিক্ত ঝাঁজের প্রয়োজন নেই।

৩. কুচি করে কাটলে

ছোট ছোট কুচি করলে রসুনের কোষ বেশি ভাঙে, ফলে ঝাঁজও অনেকখানি বেড়ে যায়। এমন ভাবে কাটা রসুন মশলাদার তরকারি, ভাজাভুজি বা কষানো রান্নায় ব্যবহার করলে চমৎকার স্বাদ আসে।

৪. থেঁতো করলে বা বেটে নিলে

রসুন থেঁতো করলে বা বেটে নিলে সবচেয়ে বেশি ঝাঁজ ও তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়, কারণ এতে রসুনের কোশ পুরোপুরি ভেঙে যায়। এ ভাবে ব্যবহার করা রসুন ঝাল, মশলাদার রান্নায় সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে।

একই রসুন, কিন্তু কাটার ধরন অনুযায়ী তার স্বাদ একেবারেই ভিন্ন। রান্না কেবল উপকরণ নয়, উপস্থাপনও। রসুনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় না।