E-Paper

‘ফোন-আসক্তি রুখতে মডেল হোক মা-বাবাই’

দুপুরে বাচ্চাকে খাওয়ানো থেকে তার কান্নাকাটি থামাতে সহজ ‘ওষুধ’ মুঠোফোন। এ ঘটনা শুধু কোনও এক দেশেরও নয়। সে কারণে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি, নরওয়ে-সহ ইউরোপের বহু দেশে বহু বিধিনিষেধ জারি হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৫

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

মা তাঁর নিজের কাজে ব্যস্ত। একরত্তি বারবার ‘বিরক্ত’ করছে। খুদেকে শান্ত করতে নিজের মোবাইল ফোনটি ধরিয়ে দিলেন মা।

এমন ঘটনা প্রায় ঘরে ঘরে। দুপুরে বাচ্চাকে খাওয়ানো থেকে তার কান্নাকাটি থামাতে সহজ ‘ওষুধ’ মুঠোফোন। এ ঘটনা শুধু কোনও এক দেশেরও নয়। সে কারণে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি, নরওয়ে-সহ ইউরোপের বহু দেশে বহু বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। আর অস্ট্রেলিয়ায় গত কাল থেকে ১৬ বছর বয়সের নীচে টিকটক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, আমাদের দেশেও কি এমন কোনও সরকারি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে?

ভারতে ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুকে কিশোর-কিশোরী ইনফ্লুয়েন্সারের ছড়াছড়ি। রিলস-ভিডিয়োয় দশ বছর বয়সি ছেলেমেয়ে ‘ডেটিং’-এ যাচ্ছে। সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া বালিকা ইনস্টা-পোস্টে আপত্তিকর ভঙ্গিমায় বুঝিয়ে দিচ্ছে এবং বলছেও, ‘‘বড়রা ভাবে কিছু জানি না, সব জানি।’’ শুধু এ সবই নয়, সমাজমাধ্যমের অন্ধকারে নানাবিধ ফাঁদ পাতা রয়েছে। অপরাধমূলক ঘটনার হারক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপিকা হিয়া সেনের বক্তব্য, কোনও নির্দিষ্ট বয়স দিয়ে বিষয়টিকে বাঁধা কতটা কার্যকর, সে নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দেশে ভোট দেওয়ার অধিকার মিললেও ছেলেদের বিয়ের বয়স হয় না। এ-ও সে রকম। এই বয়স বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’’ সমাজমাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা প্রকৃতপক্ষে কতটা সম্ভব, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। হিয়ার কথায়, ‘‘এ দেশে তো ছোটদের অনেকেরই নিজস্ব মোবাইল ফোন নেই। তারা বাড়ির বড়দের ফোন ব্যবহার করে। শহরের দিকে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, কিন্তু গ্রাম-মফস্সলে এটাই চেনা দৃশ্য।’’ তাঁর বক্তব্য, মা-বাবার তত্ত্বাবধানই জরুরি।

মনোবিদ উশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ বিষয়ে সহমত। তাঁরও বক্তব্য, সমাজমাধ্যম থেকে ছোটদের পুরোপুরি সরিয়ে রাখা একপ্রকার অসম্ভব। কিন্তু সমাজমাধ্যমের প্রতি আসক্তি, অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় তথ্য মাথায় বোঝাই করা, অর্ধেক ও বিভ্রান্তিকর তথ্য জানা— এ সব সত্যিই ক্ষতি করছে ছোটদের। মনোযোগ কমছে। দিনরাত ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে ঘাড়ে-মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। বাচ্চাদের মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার খুব বেড়ে গিয়েছে। উশ্রীর পরামর্শ, ‘‘বাচ্চাকে ফোন দেখতে বারণ করলে, কেন নিষেধ করছেন, তা বুঝিয়ে বলুন। কথা বলা খুব জরুরি। বাচ্চারা কী দেখছে, তাতে নজর রাখুন।’’ বড়দেরও মোবাইল ব্যবহারে সংযত হতে বলছেন তিনি। উশ্রী বলেন, ‘‘বহু সময় বাচ্চারা ক্ষোভের সঙ্গে বলে, মা-বাবা ফোন দেখছে, আমি দেখলেই রাগারাগি। মা-বাবাই কিন্তু মডেল সন্তানের কাছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

parenthood Parenting Tips

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy