Advertisement
০১ মে ২০২৪
Passive Smoking

বাচ্চাদের সামনে ধূমপান করার আগে ভাবুন

প্যাসিভ স্মোকিংয়ে বিশেষত বাচ্চাদের নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই সাবধানে রাখুন সন্তানকে।

An image of Breathing Problem

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ঊর্মি নাথ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:৩২
Share: Save:

ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক! তামাকজাত দ্রব্য়ের প্যাকেটে, সিনেমার পর্দায়, সার্বজনিক স্থান... সর্বত্র এই সতর্কবাণী চোখে পড়ে। গণপরিবহণে ধূমপান নিষিদ্ধ হয়েছে। বিশ্ব জুড়ে ধূমপান নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। যিনি ধূমপান করছেন ক্ষতি শুধু তাঁর নয়, সেই ধোঁয়া যাঁদের নিঃশ্বাসে ঢুকছে অর্থাৎ প্যাসিভ স্মোকিং যাঁরা করছেন, শারীরিক ক্ষতি হয় তাঁদেরও। ধূমপান করলে যে পরিমাণ শারীরিক ক্ষতি হয়, তার চেয়ে প্যাসিভ স্মোকিংয়ে কম ক্ষতি হয় ঠিকই, কিন্তু চিকিৎসকদের মতে সে ক্ষতিই যথেষ্ট। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে। কোলে বাচ্চা নিয়ে বা ঘরে বসে বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময়ে তাদের সামনেই ধূমপান করা, গাড়িতে একসঙ্গে যাওয়ার সময়ে বাচ্চাদের সামনেই ধূমপান করা, এমন দৃশ্য এখনও বিরল নয়। বাচ্চাদের সামনে ধূমপান না করার সচেতনতা এখনও সমাজের সব স্তরে গড়ে ওঠেনি। শুধু বাড়িতে নয়, পথেঘাটে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা ধূমপান করার সময়ে খেয়ালই করেন না কাছাকাছির মধ্যে কোনও বাচ্চা আছে কিনা।

বাচ্চাদের সামনে ধূমপান করলে সিগারেটের ধোঁয়া তাদের ফুসফুসে ঢুকবেই। বিশেষত এই ধোঁয়া অসুস্থ বা হাঁপানি আছে, এমন বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক। এই বিষয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি বললেন ‘‘চাইল্ডহুড ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজ়মা বা শিশুদের হাঁপানি অনেক বেড়ে গিয়েছে, বিশেষত কোভিড পরবর্তী সময়ে। এখন তো অনেক বাচ্চাই হাঁপানির জন্য পুরোদস্তুর ইনহেলারের উপরে নির্ভরশীল। ইনহেলার ব্যবহারে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে আর পাঁচটা বাচ্চার মতো স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে। কিন্তু এদের সামনে ধূমপান করলে তার ধোঁয়ায় হাঁপানির সমস্যা দ্রুত বেড়ে যায়, প্রচণ্ড কাশি শুরু হয়ে যায়, এককথায় তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ সমস্যা হয়। তাই যে সব বাচ্চার হাঁপানি আছে তাদের অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। যাতে বাচ্চাটির সামনে কেউ ধূমপান না করেন।’’ হাঁপানি ছাড়াও বেশ কিছু বাচ্চা মাঝেমধ্যেই জ্বর ও সর্দিকাশিতে ভোগে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। সুস্থ হওয়ার জন্য তাদের বারবার ওষুধ খেতে হয়। ‘‘এদেরও প্যাসিভ স্মোকিংয়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়। সাধারণত এদের সর্দিকাশি হলে এমনিতে সারতে চায় না। তার পরে সিগারেটের ধোঁয়া গেলে সেই সর্দিকাশি সারতে বেশ সময় লাগে। এছাড়াও যে বাচ্চাদের জন্মগত কিছু সমস্যা থাকে যেমন, জন্ম থেকেই হার্ট, ফুসফুস, কিডনিতে সমস্যা, চাইল্ডহুড লিউকোমিয়া হয়েছে তারা ক্রনিক ট্রিটমেন্টের মধ্যে থাকে, তাদের সামনে ধূমপান করা হলে তাদের যে চিকিৎসা চলছে তা ব্যাহত হয়,’’ জানালেন ডা. গিরি। একদম সুস্থ বাচ্চাদের প্যাসিভ স্মোকিংয়ের ক্ষতির ফল সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না। কিন্তু বড়রা যদি নিয়মিত তাদের সামনে ধূমপান করেন তা হলে তাদের পরবর্তী জীবনে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

বাচ্চাদের সামনে অভিভাবকদের ধূমপান করার প্রবণতা অনেকটাই কমেছে বলে মনে করেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ, ‘‘প্যাসিভ স্মোকিং হলে সমস্যা তো বাড়বেই, বিশেষত বাচ্চাদের। তবে আগের চেয়ে এখন অভিভাবকেরা অনেক সচেতন। বাচ্চারাও সচেতন হয়েছে। তারাই তো দেখি বাড়িতে বাবাকে ধূমপান করতে দেয় না। তবে এটাও ঠিক এই সচেতনতা সব স্তরে নেই। শুধু তামাকজাত দ্রব্যের ধোঁয়া নয়, তার চেয়েও সাঙ্ঘাতিক ধূপ-ধুনোর ধোঁয়া। বিশেষত ধূপকাঠির ধোঁয়া। অধিকাংশ বাড়িতে সকাল সন্ধে মা-ঠাকুমারা ধূপকাঠি জ্বালান। এ ছাড়া বাড়িতে মশানাশক ধূপের ধোঁয়া, দীপাবলিতে বাজির ধোঁয়া, গ্রামের দিকে বহু বাড়িতে আজও কাঠের আগুনে রান্না হয়। এ সবের ধোঁয়াও সমান ক্ষতিকারক। এতে বাচ্চাদের অ্যাজ়মা, ফুসফুসের নানা সমস্যা তৈরি হয়।’’

বাইরে থেকে ধূমপান করে এলেও বেশ কিছুক্ষণ পরে বাচ্চাদের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ মুখে নিকোটিনের গন্ধ থাকে। সবচেয়ে ভাল হয় বাচ্চাদের কাছে যাওয়ার আগে জল দিয়ে কুলকুচি করে নিন। ‘‘অনেকের নানা ধরনের গন্ধে অ্যালার্জি হয়। তাদের আবার হাঁপানি থাকলে তীব্র গন্ধে হাঁপানি বেড়ে যায়। এদের কিন্তু নিকোটিনের গন্ধেও সমস্যা হয়। তাই ধূমপান করেই বাচ্চাকে আদর করা বা তার মুখের সামনে গিয়ে কথা না বলাই ভাল,’’ সচেতন করলেন ডা. গিরি। শিশু জন্মানোর আগেও অভিভাবকদের ধূমপানের ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. অপূর্ব ঘোষ। তিনি বললেন, ‘‘গর্ভাবস্থায় মা যদি ধূমপান করেন তা হলে গর্ভের শিশুটির যথেষ্ট ক্ষতি হয়। জন্মের পরে শিশুর ওজন কম হতে পারে, ক্রনিক হার্ট বা ফুসফুসের জটিল সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের সামনে কারও ধূমপান করা উচিত নয়। কারণ এতে মা সেকেন্ডারি স্মোকার হয়ে যাচ্ছেন, তাঁর গর্ভের শিশুটির জন্মের পরে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা থেকেই যায়।’’

অভিভাবকদের জন্য

  • বাচ্চাকে কোলে নিয়ে, ঘরের মধ্যে বা গাড়িতে বাচ্চার সামনে ধূমপান করবেন না। পাবলিক প্লেসে অপরিচিত কেউ বাচ্চার সামনে ধূমপান করলে তাঁকে বাধা দিন বা সে জায়গা থেকে বাচ্চাকে নিয়ে সরে আসুন।
  • শুধু নিজের সন্তান নয়, যাঁরা ধূমপান করেন, পথে ঘাটে সর্বত্র খেয়াল রাখবেন, বাচ্চাদের সামনে কখনওই ধূমপান করবেন না।
  • যে মহিলারা নিয়মিত ধূমপান করেন, তাঁরা গর্ভধারণের আগে তাঁর এই অভ্যেসের কথা চিকিৎসককে জানিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিন। স্বামীর ক্ষেত্রেও এই একই পরামর্শ। তিনি যদি নিয়মিত ধূমপান করেন বা চেন স্মোকার হন তা হলে সন্তানের পরিকল্পনা করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শুধু সিগারেটের ধোঁয়া নয়, কারখানা, গাড়ির ধোঁয়ায় এখন পাল্লা দিয়ে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। ক’দিন আগে দিল্লিতে এতটাই দূষণ বেড়ে গিয়েছিল যে কিছু দিনের জন্য বাচ্চাদের স্কুলে ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছিল। আমাদের রাজ্যও পরিবেশ দূষণের মাপকাঠিতে পিছিয়ে নেই। কিন্তু দূষণের জন্য স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ বাতিল করে বাচ্চাদের গৃহবন্দি করে ফেলা যায় না। বরং সচেতন থাকুন। রাস্তায় বেরোনোর আগে বাচ্চাদের মাস্ক পরান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE