E-Paper

আবহাওয়া সেই খেয়ালি, অসুখে নাজেহাল মানুষ

কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের একাধিক জায়গাতেই এ বার তেমন জাঁকিয়ে শীত পড়েনি। পারদের ওঠা-নামা ছিল কার্যত নিত্যসঙ্গী। এ বার ক্যালেন্ডারে মাঘ পেরিয়ে ফাল্গুন মাস পড়লেও শীত যেন পুরোপুরি পিছু ছাড়তে নারাজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৩৮

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা অব্যাহত! ভোরে, গভীর রাতে শীত-শীত ভাব থাকছে। বেলা বাড়তেই চড়ছে পারদ। ভরদুপুরে রীতিমতো গরম লাগছে মানুষজনের। ঠান্ডা-গরমের এই টানাপড়েনে আতান্তরে সকলেই। প্রতি বাড়িতেই কাশি, সর্দি, জ্বরে ভুগছেন অনেকে। জীবাণু সংক্রমণে রীতিমতো কাহিলও হয়ে পড়ছেন লোকজন। ঋতু বদলের এই সময়ে ভাইরাসবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধির কথা মানছেন চিকিৎসকেরাও। অসুখ থেকে বাঁচতে একাধিক সতর্কতার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।

কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের একাধিক জায়গাতেই এ বার তেমন জাঁকিয়ে শীত পড়েনি। পারদের ওঠা-নামা ছিল কার্যত নিত্যসঙ্গী। এ বার ক্যালেন্ডারে মাঘ পেরিয়ে ফাল্গুন মাস পড়লেও শীত যেন পুরোপুরি পিছু ছাড়তে নারাজ। আবহাওয়া দফতরের তথ্যে চোখ রাখলেও সেই নাছোড়বান্দা মেজাজের ছবিই দেখা যাচ্ছে। যেমন, বৃহস্পতিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার তা এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ১৭.৫ ডিগ্রিতে! সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃহস্পতিবারের (৩০ ডিগ্রি) তুলনায় এ দিন প্রায় ৩ ডিগ্রি নেমেছে। এ দিন গাঙ্গেয় বঙ্গের বেশির ভাগ জায়গাতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে। বীরভূমের শ্রীনিকেতনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ফাল্গুনেও ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে! উত্তরবঙ্গে এখনও শীতের আমেজ আছে।

আবহবিদেরা বলছেন, উত্তুরে বাতাস ঢুকে পড়াতেই পারদের পতন হয়েছে। তবে এই পতন নেহাতই সাময়িক। আজ, শনিবার থেকেই ফের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। তার ফলে ফের আবহাওয়ার বদল হবে। ক্রমাগত এই বদলে অস্বস্তিও বাড়বে। প্রসঙ্গত, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা বাড়বে বলে বারবারই সতর্ক করেছেন পরিবেশবিদেরা। সেই পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন জীবাণু সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলেও একাধিক বার জানিয়েছেন তাঁরা। আমজনতার অনেকেরই অভিজ্ঞতা, আবহাওয়ার এই বিচিত্র তারতম্যের ফলে সব বয়সিদেরই জ্বর-কাশিতে নাজেহাল অবস্থা। জ্বর কমলেও কাশি থেকে যাচ্ছে।

চিকিৎসকেরা জানান, এমনিতেই আবহাওয়ার তারতম্যের ফলে যে কোনও ধরনের জীবাণুর (ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া) বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়। অন্য দিকে, আবহাওয়ার এই খামখেয়ালি আচরণের কারণেই শরীরের স্থানীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও (লোকাল ইমিউনিটি) কমতে শুরু করে। তাতে নাক-মুখ দিয়ে সহজেই শরীরে জীবাণু প্রবেশ করে সংক্রমণ তৈরি করে। কিন্তু সেটিকে প্রতিরোধ করতে পারে না শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। মাইক্রোবায়োলজিস্ট ভাস্করনারায়ণ চৌধুরী বলছেন, “আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে স্থানীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল ভাবে কাজ না করায় শরীরে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বহু রোগীর ক্ষেত্রেই ভাইরাল প্যানেল পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কোনও রকমের প্যাথোজেন মিলছে না। তবে সেই সংখ্যাটি ১০ থেকে ২০ শতাংশ।”

ভাস্করনারায়ণ জানাচ্ছেন, শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়ার পরেও যে কোনও ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। তাতে শুধুই শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ নয়, মিলছে পেটের সমস্যায় আক্রান্তও। তিনি বলেন, “হিউম্যান রাইনো ভাইরাসের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা, আরএসভি-তে আক্রান্তও মিলছে।” সংক্রমণ কমার পরে জ্বর থাকছে না ঠিকই, কিন্তু কাশির প্রকোপ এক-দেড় মাস ধরেও ভোগাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে কাশির নেপথ্যে কারণ হিসেবে ওই চিকিৎসক বলছেন, “সংক্রমণ তৈরি হলে শরীরে কোনও না কোনও অংশে প্রদাহ তৈরি হয়। তাতে যে ক্ষত হয়, সেটি পূরণ হওয়ার সময়েই সমস্যাটি তৈরি হয়। যেমন, ভাইরাস বা অ্যালার্জির সংক্রমণের কারণে শ্বাসনালিতে প্রদাহের কারণে যে ক্ষত তৈরি হয়, তা সেরে ওঠার সময়ে নানা অস্বস্তি তৈরি হয়। কাশির সমস্যাও দীর্ঘস্থায়ী হয়।”

ভাল থাকতে

মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

হাত ভাল করে ধুতে হবে।

হাঁচি-কাশিতে আক্রান্তের থেকে দুরত্বে থাকতে হবে।

বাইরে গরম থেকে আচমকা এসি ঘরে ঢোকা যাবে না।

পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে। যাতে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি না হয়।

শরীর আর্দ্র থাকলে সংক্রমণে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Weather Change Illness cough and cold

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy