‘লোকে কী বলবে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই সপ্তাহের বিষয় ‘ভীষণ অবাধ্য’ আলোচনায় অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘লোকে কী বলবে’-তে জোর দেওয়া হয়েছিল ‘র্যাগিং’ বিষয়টির উপর। এ সপ্তাহেও একই বিষয়ের অন্য দিক তুলে ধরা হয়েছে নতুন একটি পর্বে। সন্তান অবাধ্য। এর দায় কি এড়িয়ে যেতে পারেন অভিভাবকেরা? ভালবাসার নামে ছোট থেকে সন্তানের সমস্ত জেদকে প্রশ্রয় দেওয়ার ফলই কি বড় বয়সের অবাধ্যতা? গত সপ্তাহের মতোই এই পর্বে অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় একা নন, সঙ্গে ছিলেন মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব।
পর্ব শুরু করলেন মনোবিদ। ‘লোকে কী বলবে’-র এক জন দর্শক লিখেছেন, “আমার ভাই ভীষণ অবাধ্য। মোটেই পড়াশোনা করতে চায় না। সারা ক্ষণ শুধু গেম। বাড়ির কারও কোনও কথা শোনে না।” দ্বিতীয় চিঠিতেও প্রায় সেই একই রকম সমস্যা। তিনি লিখেছেন, “সমস্যাটি আমার বোনকে নিয়ে। ওর কিছু চাই মানে তখনই তা হাতের কাছে নিয়ে আসতে হবে। না পেলেই কান্নাকাটি। কাঁদতে কাঁদতে শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত শুরু হয়ে যায়। অনেকটা বাধ্য হয়েই যা চাইছে, তা দিয়ে দিতে হয়।” পরের চিঠি পাঠিয়েছেন মিথি লাহিড়ি। তিনি লিখেছেন, “ভাই ভীষণ দুরন্ত। স্কুলে কারও কথা শোনে না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওকে অন্যদের থেকে আলাদা বসার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় কোনও বন্ধুও নেই।” বড়দের কথা না শোনা, তাদের অগ্রাহ্য করার এই প্রবণতা কতখানি শিশুসুলভ, আর কতখানি ভয়ের? মনোবিদ জানতে চাইলেন চিকিৎসকের কাছে। মনোরোগ চিকিৎসক বললেন, “মানুষ তো ভীষণ নেতিবাচক। শুনতে খারাপ লাগলেও তা সত্যি। জন্মের পর মানুষ কাঁদে। ‘হ্যাঁ’ বলতে শেখার আগেই সহজে ‘না’ বলতে শেখে। এই সহজাত বিষয়গুলি মাথায় নিয়ে যদি সন্তানকে মানুষ করতে শুরু করেন, তা হলে তাদের মানসিকতা বুঝতে অনেকটা সুবিধা হয়। যতই তাড়া থাকুক না কেন, রাস্তায় ট্র্যাফিক সিগন্যালের লাল আলো জ্বলে থাকলে তখন আমি কোনও মতেই রাস্তা পেরিয়ে যাব না। সেই জ্ঞান, মূল্যবোধগুলি সন্তানের মধ্যে প্রোথিত করা প্রয়োজন। ছোটরা অভিভাবকদের এক দিনে কোনও কিছু করতে বাধ্য করতে পারে না। প্রথমে রাগ করে, তার পর হয়তো চিৎকার করে, ক্রমে তার মাত্রা বাড়তে থাকে। চোখ, মুখ লাল করে, জিনিস ছোড়াছুড়ি করতে থাকে। ফলে বড়রা ভয় পেয়ে তাকে শান্ত করতে সে যা চাইছে, হাতে দিয়ে দিচ্ছেন। তাতে শিশুটি বুঝে যাচ্ছে কত দূর পর্যন্ত এই ধরনের কার্যকলাপ করলে সে জিনিসটি কায়েম করতে পারবে। তত দূর পর্যন্ত তার অভিভাবক তাকে ছাড় দেবেন, তা শিশুটি বুঝে যাচ্ছে। তাই প্রথম থেকেই এই বিষয়ে একটু সতর্ক হতে হবে। মা-বাবা কোন বিষয়ে অনুমতি দিতে পারে, কোন বিষয়ে পারে না, ছোট থেকে তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হলে অবাধ্যতার কোনও জায়গা তৈরি হবে না। নিজে ঝামেলামুক্ত থাকতে আজ যদি সন্তানের জেদ বজায় রাখেন, তা হলে পরবর্তী কালে তা কিন্তু অন্যদের অসুবিধার কারণ হয়ে উঠবে। এই জায়গাতেই সন্তানকে মানুষ করে তোলার পথে অভিভাবকদের বড় ভূমিকা রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy