Advertisement
১১ মে ২০২৪
Anuttama Banerjee

কোনও ঘটনা বিশেষ ভাবে আঘাত দিয়েছে? তার থেকে বেরিয়ে আসবেন কী ভাবে? পথ দেখালেন মনোবিদ

‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক এই পর্বের বিষয় ‘ট্রমা হয়’। জীবনের নানা আঘাত-বেদনা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিলেন মনোবিদ।

অপ্রীতিকর ঘটনার স্মৃতি অনেক সময়ে ভুলতে চেয়েও ভোলা যায় না।

অপ্রীতিকর ঘটনার স্মৃতি অনেক সময়ে ভুলতে চেয়েও ভোলা যায় না। ছবি সৌজন্যঃ সনৎ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:১২
Share: Save:

‘ট্রমা’ শব্দটির আয়তন ছোট হলেও, এর অভিঘাত ঠিক ততটাই বড়। জীবনে নানা রকম ঘটনা ঘটে। কোনওটি খুব আনন্দের, কোনওটির স্মৃতি আবার বিপন্নতার, বিভীষিকার। ঘটনা ঘটে যায়। কিন্তু তার রেশ থেকে যায় মনে। ভয় তৈরি হয়। সে পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করাও সহজ নয়। এই ভয়, আশঙ্কা থেকে মানুষের জীবনে একটা ক্ষণিকের পরিবর্তন আসে। অপ্রীতিকর ঘটনার স্মৃতি অনেক সময়ে ভুলতে চেয়েও ভোলা যায় না। মনে গেঁথে থাকে। বার বার দুঃস্বপ্নের মতো তা ফিরে ফিরে আসে। আর এই ‘ট্রমা’ মানুষকে ধীরে ধীরে আরও খাদের দিকে ঠেলে দেয়। অসহায়তা কাজ করে।

জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু সেই ঘটনার স্মৃতি মুছে ফেলার কি সত্যিই কোনও পথ নেই? ‘ট্রমা’ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে মনের সঙ্গে ঠিক কতটা লড়াই করা প্রয়োজন? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পর্বের বিষয় ‘ট্রমা হয়! কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বছর বাইশের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘‘ছোট বয়স থেকে বিভিন্ন কারণে পরিবারের সঙ্গে অনেক ঘুরেছি। সে কারণে বহু পথ দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছি। দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে সেখানে পৌঁছে তার ভয়াবহতাও দেখেছি। কাছের মানুষকে আট বছর বয়সে পথ দুর্ঘটনাতেই হারাই। ১২ বছর বয়স থেকে গাড়ি করে দীর্ঘ পথ যাত্রা করতে পারি না। যত সময় যাচ্ছে, চোখের সামনে দেখা সেই দুর্ঘটনার দৃশ্য শুধু ভেঙেচুরে এক হয়ে যাচ্ছে।’’

একই ঘটনার রেশ ধরে আরও একটি চিঠি এসেছে। দেবলীনা লিখছেন, ‘‘২০১৯ সালে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। পিছন থেকে একটি গাড়ি এসে আমার স্কুটারে ধাক্কা মারে। পড়ে যাই। আমার ডান পা ঢুকে যায় চলন্ত চাকার মধ্যে। উনিশটা সেলাই পড়ে। তিন মাস বিছানায় শোয়া। তার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলেও ওই ট্রমা থেকে যায়। এখন রাস্তায় কাউকে সাইকেল বা স্কুটার চালাতে দেখলে আমার ভয় হয়।’’

জীবনের কোনও একটি সময়ে এমন কোনও ঘটনা ঘটে, যা পরে গিয়ে ট্রমায় পরিণত হয়। যে ঘটনার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কোনও এক সময়ে ভয়ঙ্কর একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। একটা ভয়াবহ, বিভীষিকাময় ঘটনা বেশির ভাগ সময়ে অকস্মাৎ আসে। মন আগে থেকে তার কোনও প্রস্তুতি পায়নি। সবই ঠিক ছিল। হঠাৎ এমন কিছু হয়ে গেল, যে তার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে যেতে হয়। এই আকস্মিকতার ফলে যতটা আবেগ সেই সময়ে মনের মধ্যে হয়, তার সবটা বাইরে আসতে পারে না। মনের মধ্যেই থেকে যায়। মন ভিতর থেকে অসাড় হয়ে যায়।

এর থেকে কি মুক্তি নেই? এ প্রসঙ্গে অনুত্তমা বলেন, ‘‘আকস্মিক যে দুর্ঘটনার ঘটে গিয়েছে জীবনে, সেই স্মৃতির পুনরাবৃত্তি ঘটে। এই পুনরাবৃত্তি আসলে ট্রমার নিজস্ব একটি ধরন। ‘পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস’ এই শব্দটির সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। আসল ঘটনা ঘটে গিয়েছে। কিন্তু সেই ঘটনার যে ভয়াবহতা, তা মনে রয়ে গিয়েছে। সেই যন্ত্রণা ফিরে ফিরে আসছে। কারণ ঘটনার সময়ে আমার গোটা বিষয়টির সঙ্গে বোঝাপড়া হয়নি। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি আমার ট্রমার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হয়, তা হলে কিছু বিশেষ আঙ্গিক সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ট্রমা মনের মধ্যে চেপে না রাখে পেশাদার কারও সঙ্গে তা ভাগ করে নিলেই ভাল। কারণ দক্ষ কোনও থেরাপিস্টের উপস্থিতিতে যদি ট্রমার মুখোমুখি হওয়া যায়, তা হলে এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anuttama Banerjee Loke Ki Bolbe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE