Advertisement
২৮ মে ২০২৪
পুজোয় শুরু অভিযান

অস্বাস্থ্যকর খাবার বেচলেই শাস্তি

পুজোর ভিড়ে ‘বাসি’ খাবার বিক্রি করলেই ‘কড়া দাওয়াই’ দেবে পুরসভা। তা সে পুজো প্যান্ডেল লাগোয়া অস্থায়ী রোল, কাটলেট, চাটের দোকান কিংবা তিন-চার-পাঁচতারা হোটেল বা রেস্তোরাঁ— যা-ই হোক না কেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৮
Share: Save:

পুজোর ভিড়ে ‘বাসি’ খাবার বিক্রি করলেই ‘কড়া দাওয়াই’ দেবে পুরসভা। তা সে পুজো প্যান্ডেল লাগোয়া অস্থায়ী রোল, কাটলেট, চাটের দোকান কিংবা তিন-চার-পাঁচতারা হোটেল বা রেস্তোরাঁ— যা-ই হোক না কেন। পুজোর ক’দিন আচমকাই হানা দেবেন পুরসভার ভেজাল দমন শাখার অফিসারেরা। বৃহস্পতিবার, পঞ্চমী থেকেই সেই হানাদারি শুরু হয়ে গিয়েছে। এ দিন দুপুরে শ্যামবাজার থেকে হেদুয়া পার্ক অবধি রাস্তার দুপাশে থাকা সব ধরনের খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁয় কয়েক ঘণ্টা ধরে অভিযান চালায় পুরসভার দল।

অভিযানে কী মিলেছে?

এ দিন বাসি খাবারের পাশাপাশি সিন্থেটিক রঙ, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর মাত্রাতিরিক্ত আজিনামোতো, ব্র্যান্ডহীন সস ব্যবহার করা খাবার বাজেয়াপ্ত করেছে ভেজাল দফতর। পুর-অভিযানে এমন অনেকের দেখা মিলেছে, যাঁরা ক্ষতিকর ওই উপকরণ মেশানোর কথা জানতে পেরে কেনা খাবারও ফেলে দিয়েছেন। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের কথায়, মানুষের সচেতনতা বাড়ানোই এ দিনের অভিযানের মূল লক্ষ্য। এ দিন বেশ কয়েক জন ক্রেতা ‘অস্বাস্থ্যকর’ খাবার ফেলে দিয়ে পুরসভার কর্মসূচিকে সাহায্য করেছেন। পয়সা দিয়ে কেনা খাবার তাঁদের সামনে এ ভাবে ফেলে দেওয়ায় বিব্রত হতে দেখা গিয়েছে অনেক দোকানদারকেও।

অতীনবাবু জানান, পুজোর দিনগুলিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হয় শহরে। রাতভর ঘুরে ঠাকুর দেখার পাশাপাশি মোগলাই, রোল, চাউমিন থেকে শুরু করে ফুচকা, তেলেভাজা, শিঙাড়া, চাটের মতো হরেক খাবার রাস্তা, ফুটপাথ এবং রেস্তোরাঁ থেকে কিনে খান তাঁরা। দোকান কম, কিন্তু খদ্দের বেশি হওয়ায় বাসি খাবারও বিক্রির প্রবণতাও দেখা দেয় অনেক অসাধু ব্যবসায়ীর। ওই সব খাবার নিম্ন মানের এবং ক্ষতিকর হওয়ায় অসুস্থও হয়ে পড়েন অনেকে। এই ধরনের খাবার বিক্রিতেই রাশ টানতে চায় পুর প্রশাসন।

অতীনবাবু বলেন, ‘‘পুজোর ক’দিন আচমকাই হানা দেওয়া হবে শহরের বড় বড় হোটেল, নানা রেস্তোরাঁর হেঁশেলে। বাসি খাবার বিক্রি করা নিষেধ তো বটেই, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক কোনও রাসায়নিক খাবারে ব্যবহার করলেও কড়া শাস্তি হবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর।’’

কেমন সেই শাস্তি?

পুরসভার ভেজাল দফতরের এক আধিকারিক জানান, ২০০৬ সালের দ্য ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট অনুসারে খাবারের গুণমান ঠিক না থাকলে তা ওই আইনের ৫০ নম্বর ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। এর জন্য দোকান-মালিককে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। আর এমন কোন বিক্রীত খাবার, যা খাওয়ার ফলে কারও মৃত্যু ঘটলে শাস্তি আরও কড়া হবে। দশ লক্ষ টাকা জরিমানার সঙ্গে সে ক্ষেত্রে ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে।

খাদ্য সুরক্ষা আইন থাকলেও কলকাতার মতো শহরে তা কতটা প্রযোজ্য, তা নিয়ে অভিযোগও রয়েছে অনেক। এ বিষয়ে পুরসভার এক আমলার বক্তব্য, বাম আমল থেকেই পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যুক্ত ছিল ভেজাল দফতর। কিন্তু তখন তেমন কোনও কাজ হয়নি। তৃণমূলের প্রথম পাঁচ বছরে ওই দু’টি দফতরকে আলাদা করে রাখা হয়। তখন আবার ভেজাল দফতরে কর্মী ছিল নিতান্তই হাতে গোনা। এ বার ফের দুই দফতর এক হওয়ায় মাঝে মাঝে ভেজাল খাবার ধরতে অভিযান পর্ব শুরু হয়েছে।’’ অতীনবাবুর কথায়, ‘‘লাগাতার ভেজাল দমন অভিযান চালাতে গেলে যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা এখনও পুরসভায় নেই। তবে পুজোর সময়ে মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই মাঠে নামাতে হয়েছে ভেজাল-দমন ইনস্পেক্টরদের।’’ এ বার থেকে নিয়মিত এই অভিযান করার পথেই এগোনো হবে বলে দাবি পুরকর্তাদের। তাতে শহরে
নিম্ন মানের খাবার বিক্রির প্রবণতা কমবে এবং আয়ও বাড়বে বলে আশাবাদী অতীনবাবুরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Punishment food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE