—প্রতীকী ছবি।
চোখ লাল হওয়া মানেই কনজাংটিভাইটিস বা ‘জয় বাংলা’ নয়। সুতরাং, আন্দাজে চিকিৎসা করলে হারাতে হতে পারে দৃষ্টিশক্তি। এমনটাই বলছেন চিকিৎসকেরা।
তাঁরা জানাচ্ছেন, কনজাংটিভাইটিস বা ‘জয় বাংলা’ হলে দু’টি চোখই লাল হবে। কিন্তু, একটি চোখ লাল হওয়া এবং চোখে ব্যথা থাকলে বুঝতে হবে, সমস্যা গুরুতর। তা হতে পারে বন্ধ কোণ গ্লকোমা (ন্যারো অ্যাঙ্গল গ্লকোমা), আইরাইটিস (চোখে বাত) কিংবা শিশুদের অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণ, এমনই মত ডাক্তারদের। প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে কনজাংটিভাইটিস ও জয় বাংলার উপসর্গে জেরবার শিশু থেকে বয়স্কেরা। এরই মধ্যে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েড কিনে খাওয়া ও ড্রপ নেওয়ার প্রবণতায় বিপদের আশঙ্কা করছিলেন চক্ষু চিকিৎসকেরা। সেই আশঙ্কাকেই আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এই তিনটি রোগের লক্ষণ।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এক চোখ টকটকে লাল হলে, চোখে অসহ্য যন্ত্রণা, পেটে যন্ত্রণা এবং বমি হলে তা ‘বন্ধ কোণ গ্লকোমা’র লক্ষণ। এই রোগীদের দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, কনজাংটিভাইটিস মনে করে আন্দাজে চিকিৎসায় তাঁরা চিরকালের মতো দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আইরাইটিসে এক চোখ লাল হলেও বন্ধ কোণ গ্লকোমার থেকে এর উপসর্গ খানিকটা আলাদা। এ ক্ষেত্রে চোখে হালকা বা মাঝারি ব্যথা থাকে। চোখের মণি ঘোরাতে ব্যথা লাগে। মণির পাশে সূর্যের ছটার মতো লাল হয়ে থাকে। এর চিকিৎসা আলাদা। সেই সঙ্গে মণি বড় করার চিকিৎসাও চলে, না হলে আইরাইটিস সারবে না। এ সব না করে কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসা হলে পরবর্তীকালে ছানি পড়ে দৃষ্টি কমে যেতে পারে রোগীর।
বাচ্চাদের দু’চোখ লাল হয়ে চুলকানোর সমস্যা হয় অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিসে। এ ক্ষেত্রে কনজাংটিভাইটিস ভেবে অ্যান্টিবায়োটিক যুক্ত চোখের ড্রপ দিলে হিতে বিপরীত হবে।
সম্প্রতি আন্দাজে চিকিৎসা করে দৃষ্টি হারাতে বসেছেন মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা, বছর কুড়ির এক তরুণী। কর্নিয়ায় ঘা হয়েছিল তাঁর। চোখ লাল দেখেই কনজাংটিভাইটিস মনে করে ওষুধের দোকান তাঁকে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড মেশানো ওষুধ দিয়ে দেয়। সেটি ব্যবহারের পরে দৃষ্টির সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান রোগিণী। ডাক্তার পরীক্ষা করে তাঁকে জানান, কর্নিয়ায় ঘায়ের চিকিৎসায় দোকানের দেওয়া স্টেরয়েড বিষের কাজ করেছে। চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলছেন, ‘‘পেপটিক আলসারের রোগীকে তেল-মশলা-ঝাল খেতে বললে যেমন হয়, এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তেমনই হয়েছে। পাঁচ দিন ভুল ওষুধ চলার পরেও মেয়েটির চোখের ঘা রয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে চোখে পুঁজ জমেছিল। ঘা শুকোলেও দাগ থেকে যাবে, ভাল মতো দৃষ্টি ফিরবে না। পরবর্তী কালে কর্নিয়া গ্রাফটিংয়ের মতো জটিল চিকিৎসার পথে যেতে হবে ওই তরুণীকে।’’
চিকিৎসক সিদ্ধার্থ ঘোষ বলছেন, ‘‘এক চোখ লাল দিয়েই শুরু হয় কনজাংটিভাইটিস। জল গড়ালে বা পিচুটি পড়লে বুঝতে হবে কোনও সংক্রমণ। তবুও চিকিৎসককে দেখিয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত। প্রায় একই রকমের উপসর্গে চোখের ভুল চিকিৎসায় সারা জীবনের মতো দৃষ্টি চলে যেতে পারে। আবার, গ্লকোমা বা আইরাইটিসের চিকিৎসায় দেরিও বিপদ ডাকবে।’’ জ্যোতির্ময় জানাচ্ছেন, কনজাংটিভাইটিস যদি ভাইরাসঘটিত হয়, তা হলেও স্টেরয়েডের ব্যবহার কর্নিয়ায় ছাপ ফেলে যায়। এতেও দৃষ্টি ক্ষীণ হতে পারে। তাই রোগ বুঝে, মেপে ওষুধ দিতে হবে। যেটা পারবেন একমাত্র চিকিৎসকেরাই।
সুতরাং, চোখের যে কোনও সমস্যায় খরচ বাঁচানোর চিন্তা না করে ডাক্তার দেখালে বাঁচবে অমূল্য দৃষ্টি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy