বিপদ পড়লে মাথা ঠান্ডা রাখা কিংবা জরুরি পরিস্থিতিতে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারা অবশ্যই বড় গুণ। কিন্তু মুশকিল হল, সকলের সেই ক্ষমতা থাকে না। অনেকেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আবার কেউ কেউ কোনটা করা দরকার আর কোনটা নয়, তা বুঝেই উঠতে পারেন না।
মনোবিদ থেকে মনশ্চিকিৎসকেরা বলেন, স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, কে কতটা আত্মবিশ্বাসী হবে, তার অনেকটাই লুকিয়ে থাকে বেড়ে ওঠার উপরে। ছোটবেলা থেকেই ক্রমাগত মারধর, সমালোচনা, তিরস্কারের মুখে পড়তে হলে কমে যেতে পারে আত্মবিশ্বাস। আবার দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসেই শিশুর মনে তৈরি হতে পারে নিজের প্রতি আস্থা, স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।
কাজ এবং দায়িত্ব: শিশুর উপযোগী কাজ দিয়েই তাকে দায়িত্বশীল করে তোলা যায়। আর নিজের কাজ নিজে করার ক্ষমতা ছোটদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। নিজের খেলনা গুছিয়ে রাখা, নিজে সময়মতো দাঁত মাজা, একটু বড় হলে নিজের বইখাতা গোছানো— এমন ছোট ছোট দায়িত্ব সন্তানকে দেওয়া হলে সে ধীরে ধীরে নিজের কাজ নিজে করা শিখবে। সাধারণ পদক্ষেপই তাকে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
সমাধান করে দেওয়া নয়: সমস্যায় পড়লে শিশুকে উৎসাহিত করা যায় সমাধান খোঁজার। ইরেজ়ার হারিয়ে গিয়েছে, পেনসিল ভেঙে গিয়েছে কিংবা খেলনা গাড়িটি আর চলছে না— এ ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা নিজেরাই তার পরিবর্ত ব্যবস্থা করে দেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই কাজ না করে দেখা যেতে পারে, শিশু কী করছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা যায়, এখন কী করা উচিত। এর ফলে শিশুও সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবতে শিখবে।
কাজের দায়ভার নিজেকেই নিতে হয়: জিনিস ভেঙে ফেলল, ঘরে কাগজ কুচি ছড়াল শিশু, এ্মন ক্ষেত্রে প্রথম ধাপটি হয়ে দাঁড়ায় বকুনি। তবে মনোবিদদের পরামর্শ, না বকে শিশুকেই ভুল শোধরানোর দায়িত্ব দেওয়া দরকার। কুচনো কাগজ তাকে দিয়ে পরিষ্কার করানো যেতে পারে। হোমওয়ার্কে ভুল করলে, না বকে ভুল অংশটি মুছে দিয়ে আবার তা করানো যায়। এতে শিশু বুঝবে, কাজ করতে গেলে ভুল হয়, পরে তা শুধরে নেওয়া যায়। এবং নিজের কাজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়।
নিজের পছন্দ ব্যক্ত করা: শিশু বড় হতে শুরু করলে নিজের জামা নিজেকে পছন্দ করতে দিন। কোনটি পরে সে বেরোতে চায়, সে ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা যায়। খুব ছোট পদক্ষেপ। তবে এ ভাবে শিশু সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে।
অভিব্যক্তি প্রকাশ: শিশুকে মন খুলে কথা বলতে দেওয়া, তার কথা শোনা জরুরি। নিজের পছন্দ-অপছন্দগুলি সে বলতে পারলে তার মধ্যেও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। ভুল কাজের ক্রমাগত সমালোচনার বদলে ভাল কাজের প্রশংসা শিশুদের বিকাশে সাহায্য করে। তাদের মনোবল বৃদ্ধি করে।