দু’টি মানুষ ঠিক করলেন, জীবনটা একসঙ্গে কাটাবেন। আইনি কাগজে সই-সাবুদ করে কিংবা সামাজিক প্রথা মেনে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কের সুতো জুড়লেন। তার পরে একসঙ্গে এক ছাদের তলায় শুরু হল তাঁদের সংসার। যে সংসারে কর্তব্য, পরষ্পরের প্রতি দায়িত্ববোধ-সহ নানা পূর্বনির্ধারিত নিয়ম-নীতি জুড়ে দেওয়া রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের দম্পতিদের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম অনেক সময়েই খাটে না। অনেকেই পরস্পরের সুবিধা বুঝে এবং দু’পক্ষের সম্মতিতে বদলে নিচ্ছেন দাম্পত্যের ধরন। তেমনই পাঁচ ধরনের সম্পর্কের কথা জেনে নেওয়া যাক।
বাস্তববাদী
এই ধরনের সম্পর্কের লক্ষ্য আবেগে ভেসে যাওয়া নয়। বরং এমন সম্পর্ক বাস্তবতার মাটি ছুঁয়ে থাকে। পরস্পরের প্রতি সম্মান, পারস্পরিক লক্ষ্যপূরণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া এবং স্থিতিশীলতা এই সম্পর্কের ভিত। এই ধরনের সম্পর্কে রোম্যান্টিসিজ়ম বা যৌন আকর্ষণের জায়গা নেই। এমন সম্পর্ক তাঁরাই বেছে নেন, যাঁদের কাছে সঙ্গ জরুরি। এঁরা পরস্পরের সঙ্গে দীর্ঘ জীবন কাটানোর জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ থাকেন। একই সঙ্গে আর্থিক নির্ভরতা, একসঙ্গে সন্তানকে বড় করার মতো দায়িত্বও পালন করেন।
পরীক্ষামূলক
দামি যে কোনও জিনিস কেনার আগে আমরা দেখে-শুনে-বুঝে নিই। এই সম্পর্কের মূল কথাও তাই। পাকাপাকি ভাবে সম্পর্কে যাওয়ার আগে দেখে নেওয়া, সঙ্গীর সঙ্গে থাকা যায় কি না। এই ধরনের বিয়েতে দম্পতিরা ২ থেকে ৫ বছর সম্পর্ক বুঝে নেওয়ার চুক্তি করেন। কেউ খাতায় কলমে, কেউ মুখেই। নির্দিষ্ট সময় পরেও যদি মনে হয়, দু’জনে একসঙ্গে থাকবেন, তখন চুক্তির মেয়াদ বাড়ে। স্বাধীনমনস্কেরা এই ধরনের সম্পর্ক পছন্দ করেন। কারণ, এই ধরনের সম্পর্কে আজীবন একসঙ্গে থাকার চাপ থাকে না।
দূরে-জুড়ে
এই দাম্পত্যে পরস্পরের সঙ্গে মানসিক ভাবে জুড়ে থেকেও আলাদা থাকেন দু’টি মানুষ। এঁদের মধ্যে আবেগ, ভালবাসা, রোম্যান্টিসিজ়ম, আকর্ষণ— কোনও কিছুর অভাব না থাকলেও এঁরা নিজেদের জন্য একটি ব্যক্তিগত ঘেরাটোপ চান। যেখানে তাঁরা নিজের মতো থাকতে পারবেন। এতে একসঙ্গে থাকার নানা জটিলতা এড়িয়ে সম্পর্কের বাঁধন অটুট রাখেন দু’জন।
সন্তানের জন্য
এমন অনেক দম্পতি আছেন, যাঁরা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কে জোড়েন সন্তানকে মানুষ করবেন বলেই। তাঁদের কাছে একসঙ্গে সন্তানকে গড়ে তোলা, তাকে নিয়ে জীবনে এগিয়ে চলাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রোম্যান্টিসিজ়ম সেখানে গৌণ। এই ধরনের সম্পর্কে একই ধরনের মূল্যবোধ, বন্ধুত্ব, পরস্পরকে বোঝার পরিণত মনস্কতা কাজ করে। যার সাহায্যে সন্তানের জন্য সুস্থ পরিবেশ তৈরি করেন দু’জন মানুষ।
ডিজিটাল
এক জন হুগলি তো অন্য জন হনুলুলু। দূরত্ব যেখানে অতিক্রম করা সহজ নয়, সেখানে অবতারণা ডিজিটাল প্রেমের। বছরের পর বছর পরস্পরের সঙ্গে দেখা, কথা, রাগ, অনুরাগ— সবই ডিজিটাল পর্দায়। এই ধরনের বিয়েতে অনেক সময়ে কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে ভিডিয়ো কল চালু করে দেন দম্পতি। তার পরে ভিডিয়ো কল চালু রেখেই চলতে থাকে তাঁদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। অতিমারির পর এই ধরনের সম্পর্ক আরও বেড়েছে। এই সম্পর্কেও দু’টি মানুষ পরস্পরের সঙ্গে আবেগে জুড়ে থাকেন।
অর্থাৎ আধুনিক দম্পতিরা চান বাঁধন ছাড়া বাঁধন। যে ধরনের সম্পর্কের মূল কথাই হল, জুড়ে নয়, দূরে থেকেও পাশে থাকা সম্ভব। পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধতা বা দায়িত্ববোধের কোনও বাঁধা ছক থাকতে পারে না।