Advertisement
E-Paper

ভোর না কি গভীর রাত, কোন সময়ে ভাল পড়াশোনা হয়? কী মত মনোবিদদের?

কেউ পড়েন রাত জেগে, কেউ আবার ভোরে উঠতেই স্বচ্ছন্দ। পড়ুয়াদের এক এক জনের অভ্যাস এক এক রকম। কিন্তু পড়াশোনার কি কোনও আদর্শ সময় হয়? সকালে উঠে পড়তে বসাই কি কাম্য?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ১০:০২
ভোরে উঠে পড়াশোনা না রাত জেগে বই পড়া—কোনটি ভাল সন্তানের জন্য?

ভোরে উঠে পড়াশোনা না রাত জেগে বই পড়া—কোনটি ভাল সন্তানের জন্য? ছবি: সংগৃহীত।

ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, চারদিক নিঃস্তব্ধ থাকতে থাকতেই পড়াশোনা করা ভাল। এমনটাই শিখিয়ে এসেছেন অভিভাবকেরা। সকালে ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতার কথা পাঠ দেওয়া হয়েছে পাঠ্য বইয়ের ছড়ায়, কবিতায়।

কিন্তু তাড়াতাড়ি শুতে যাওয়া, ভোরে দ্রুত উঠে পড়া— চিরকালীন সেই অভ্যাসই এখন পাল্টেছে। গ্রামাঞ্চলের কোথাও এখনও এমন নিয়মে জীবনযাপন চললেও, শহুরে জীবন আর সেই ছকে বাঁধা নেই। পেশায় বদল এসেছে। কর্পোরেট সেক্টর থেকে সংবাদমাধ্যম— বহু অফিসেই কাজ হচ্ছে রাতভর। অভিভাবকদের বদলে যাওয়া জীবনযাত্রার প্রভাব পড়ছে সন্তানদের জীবনেও। ফলে, ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস হারিয়ে গিয়েছে বহু বাড়িতেই। এমন অবস্থায় ভোরে উঠে না কি রাত জেগে পড়াশোনা, কোনটি পড়ুয়াদের জন্য ভাল? সত্যিই কি এত দিনের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ভোরে উঠে পড়াশোনা করাই শ্রেয়?

ভোরে ওঠার যেমন কিছু স্বাস্থ্যকর উপযোগিতা রয়েছে, রাতে পড়াশোনার নেপথ্যেও রয়েছে যুক্তি। যেমন পড়ুয়াদের অনেকেরই বক্তব্য, রাত জাগতে অসুবিধা নেই। কিন্তু ভোরে ওঠা বড্ড কষ্টকর। তা ছাড়া, ভোরে পড়াশোনার নেপথ্যে যে যুক্তি থাকে, সেটি কিন্তু রাতের জন্যও প্রযোজ্য। ভোরে কোলাহল থাকে না। এমন সময় মনও শান্ত থাকে। ফলে পড়াশোনা ভাল হয়। আবার রাতও হয় নিঃশব্দ। ফলে পড়ায় মন দেওয়া সহজ হয়।

তা হলে কি আদৌ পড়াশোনার কোনও 'আদর্শ সময়' হয়? এ নিয়ে নানা মত মনোবিদ, মনোরোগ চিকিৎসকদের। চিকিৎসক শর্মিলা সরকারের মতে, ‘‘ভোরে পড়ার অভ্যাস নিঃসন্দেহে ভাল। তবে যে পড়ুয়া রাত পর্যন্ত পড়তে স্বচ্ছন্দ, তার কাছেই সেটাই পড়াশোনার আদর্শ সময়। ঘুমের সময়, শরীর দুই-ই ঠিক থাকলে রাতে পড়াশোনায় কোনও অসুবিধা নেই।’’ পড়তে গেলে স্বাস্থ্য বজায় রাখাও জরুরি। তবে পুরনো পন্থাতেই আস্থা রাখেন মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ। তিনি বলছেন, ‘‘ঘুমোতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার ক্ষেত্রে কাজ করে শরীরের ঘড়ি। সূর্য ওঠা এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক থাকে। সূর্যোদয় শরীরকে ইঙ্গিত দেয়, এ বার ওঠার সময়। সেই কারণেই ভোরে ওঠার অভ্যাস এবং পড়াশোনা, মনঃসংযোগ এবং স্বাস্থ্য, দুইয়ের জন্যই ভাল।’’

ভোরে পড়ার উপযোগিতা

· শরীর যে ছন্দে অভ্যস্ত তা হল— সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে ঘুমোনো। মোহিত বলছেন, দিনভর স্কুল যাওয়া, গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া, খেলাধুলো আরও নানা কাজে ব্যস্ত থাকে পড়ুয়ারা। স্বাভাবিক ভাবেই যত সময় গড়ায় শরীর এবং মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তারা বিশ্রাম চায়। ঘুম হল সেই বিশ্রাম। লম্বা ঘুমের পর শরীর-মন ঝরঝরে থাকে। ফলে পড়ায় মন বসে ভাল।

· স্কুল, কলেজ বা উচ্চশিক্ষা— সবটাই কিন্তু সেই সকালে। ঘড়ি ধরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। সকালে ওঠার অভ্যাস শুধু পড়াশোনার জন্য দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলার জন্যও জরুরি।

· সময়ের কাজ সময়ে করতে হলেও ভোরে ওঠা জরুরি। এ ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কার্য সম্পাদনের জন্য যথাযথ সময় পাওয়া যায়। ভোরের রোদে গায়ে লাগাও ভাল। ভোরের শান্ত পরিবেশে একটু শরীরচর্চাও পড়াশোনায় মনঃসংযোগে সাহায্য করে।

ভোরে ওঠার অনেক উপকারিতা থাকলেও সকলের জন্যই যে সকালে উঠে পড়তে বসা আদর্শ, তা মনে করেন না শর্মিলা। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার বদল, মুঠোফোনের দৌলতে রাত-দিনের বিভাজন অনেকটাই ঘুচে গিয়েছে। ছোটদের ক্ষেত্রে সকালে উঠে পড়তে বসানোর অভ্যাস করানো গেলেও, কলেজ পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে জোর করা চলে না। মনোরোগ চিকিৎসকের মতে, তাই কেউ যদি মনে করেন, রাতেই পড়তে ভাল লাগছে বা পড়াশোনায় মন বসছে, তিনি সেটাই করবেন। তবে একই সঙ্গে কয়েকটি কথা মনে করাচ্ছেন তিনি। সেটি হল ঘুমের। স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের সমস্ত রকম কার্যকারিতার সঙ্গে ঘুমের সম্পর্ক রয়েছে। রাত জাগতে গিয়ে ঘুম কম হলে আখেরে কোনও লাভ হবে না।

ঘুম এবং স্মৃতির সম্পর্ক

"ঘুমের সময় ‘শর্ট টার্ম’ স্মৃতি ‘লং টার্মে’ রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ আমরা যা দেখছি, শুনছি এবং পড়ছি, সেটাই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করার জন্য ঘুমের দরকার হয়", বলছেন শর্মিলা। মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসে স্মৃতি শর্ট থেকে লং টার্মে রূপান্তরিত হয়। তার পর তা কর্টেক্সে রয়ে যায়। এই জটিল পন্থার সঙ্গে ঘুমের গুরুতর যোগ রয়েছে। তা ছাড়া, পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত নেওয়া এই জাতীয় মস্তিষ্কের কার্যাবলি সঠিক ভাবে সম্পাদনের জন্য ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের দরকার।

এই বিষয়ে সচেতন করছেন মোহিতও। রাত জেগে মোবাইল ঘেঁটে সময় নষ্ট করলে তার প্রভাব পড়ে মনোজগতে। রাতে ঘুমোতে দেরি হলে স্বাভাবিক ভাবেই সকালে ওঠা কষ্টকর হবে। তার চেয়ে যদি শুরু থেকেই দ্রুত ঘুমোনো এবং সকালে ওঠার অভ্যাস করা যায়, সেটাই যে কোনও বয়সের পড়ুয়াদের জন্য ভাল, মত মোহিতের।

Tips For Student Education Parenting Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy