ছোটরা দুরন্তপনা করবেই। তাতে অস্বাভাবিক কিছু নেই। সব সময় দুষ্টুমি, প্রচণ্ড চঞ্চল, একদণ্ড স্থির হয়ে না বসা, সব সময়ে অস্থির ভাব অনেক শিশুরই থাকে। দুষ্টুমি আর দুরন্তপনার সঙ্গে রোগের যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা বৃথা। তবে চিন্তার কারণ তখনই হবে, যখন অস্থির ভাব বা চঞ্চলতা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকবে। কোনও সময়েই মনোযোগ দিতে পারবে না শিশু। এমনকি কথা বললেও তা বুঝতে পারবে না।
সমস্যাটির নাম অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজ়অর্ডার। সংক্ষেপে ‘এডিএইচডি’। ছোটদের মনঃসংযোগের সমস্যা, সর্ব ক্ষণ অকারণ অস্থিরতার মতো লক্ষণ এই রোগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বলে মনে করা হয়। এডিএইচডি-র নাম এখন আর অজানা নয়। বলিউড তারকা আলিয়া ভট্টও জানিয়েছিলেন তাঁর শৈশবে এডিএইচডি-তে আক্রান্ত হওয়ার কথা। এই সমস্যার প্রতিকারের উপায় আছে, চিকিৎসাও আছে। তবে সমস্যাটা হল, এডিএইচডি ক্রমেই বাড়ছে। প্রাক্-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উঁচু ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যথেষ্ট পরিমাণে চোখে পড়ছে।
শিশু কি খুবই অস্থির, মনোযোগী নয়, কখন বুঝবেন তা চিন্তার? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
এই বিষয়ে ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থের শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল জানাচ্ছেন, ছোটবেলায় সব শিশুই একটু আধটু চঞ্চল হয়। ওতে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু বাবা-মায়েরা যখন দেখবেন শিশু একদম মনোযোগী নয়, কোনও কথা বললে বুঝতে পারে না, শুনতেও চায় না, সব সময়ে অস্থিরভাব কাজ করে, মনঃসংযোগের অভাব এতটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে স্কুল থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে, তখন সাবধান হতে হবে। এডিএইচডি-তে শিশুর দুরন্তপনাই একমাত্র উপসর্গ নয়, শিশুর ব্যবহারেও বদল আসতে থাকে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, শিশু কোনও কাজ একভাবে মন দিয়ে শেষ করতে পারছে না, সব সময়েই অন্যমনস্ক, একটানা কথা বলে যাচ্ছে বা একটানা দুষ্টুমি করে যাচ্ছে তখন বুঝতে হবে কিছু সমস্যা হচ্ছে। ৩-১২ বছর বয়সিদের মধ্যে এডিএইচডি-র প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
প্রতিকারের উপায় কী?
শুধুমাত্র বিদ্যালয়ে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিই যথেষ্ট নয়, বাড়ির পরিবেশটিকেও পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন। শিশুকে অকারণে চাপ দেবেন না। অন্যের সঙ্গে বার বার তুলনা টেনে কথা বলবেন না। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ-আতঙ্ক থেকেও এমন সমস্যা হতে পারে।
শিশু চঞ্চল হলে তার সমাধান মারধর বা বকাঝকা নয়, বরং ধৈর্য ধরে বোঝাতে হবে। অভিভাবকেরা নিজেরা তা না পারলে, চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
সন্তানের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং বিভিন্ন খনিজের মাত্রায় যেন ঘাটতি না হয়।
দিনভর মোবাইল, ভিডিয়ো গেমে আসক্তি শিশুর মধ্যে জেদ, হিংসাত্মক মনোভাব বৃদ্ধি করতে পারে। তাই মোবাইল বা ডিজিটাল মাধ্যম থেকে শিশুকে যতটা সম্ভব দূরে রাখাই ভাল।
এডিএইচডি-র নির্দিষ্ট চিকিৎসা রয়েছে। ওষুধ-থেরাপি রয়েছে। আর এমন মনে করার কারণ নেই যে আপনার শিশুকে এক বার ওষুধ খেলে সারা জীবন খেতে হবে। তবে অভিভাবকদের চেষ্টাই সমাধানের উপায় হতে পারে। সন্তানকে সামাজিক পরিধিতে বেশি করে মেলামেশা করতে শেখান। প্রকৃতির মাঝে বেশ খানিকটা সময় কাটালে ভাল। নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের অভ্যাস করা জরুরি। সন্তানের ঘুমোনোর এক ঘণ্টা আগে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল-সহ বাড়ির বিভিন্ন বৈদ্যুতিন যন্ত্র বন্ধ করে দিন। তা হলেই শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।