চার বছরের ব্যবধান। এক জন ছোট থেকেই দাপুটে। অন্য জন তুলনায় শান্ত। দুই বোনের সম্পর্কে তাই কর্তৃত্ব ফলাতে দ্বিধা বোধ করেন না প্রথম জন। দ্বিতীয় জন সেই কর্তৃত্বের চাপে বিধ্বস্ত। বলি নায়িকা কাজল এবং তনিশা মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্কের সমীকরণ খানিক এমনই ছিল ছোটবেলায়। ৫০ বছরের কাজলের মধ্যেও স্পষ্ট সেই দুরন্তপনার ছাপ দেখা যায়। কিন্তু তাঁর দৌরাত্ম্যে ভুগতে হয়েছে ছোট বোন তনিশাকে। সম্প্রতি দুজনের সম্পর্ক, ঝগড়ার পরিণতি এবং তাঁদের মাঝে মা তনুজার অংশগ্রহণ নিয়ে কথা বললেন কাজলের বোন। সন্তানদের সম্পর্কের মাঝে বাবা-মায়ের ভূমিকা যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তার নজির রেখেছে মুখোপাধ্যায় পরিবারের এই ঘটনা।
তনিশা আর কাজল ছোটবেলায় খুব ঝগড়া করতেন। সেই ঝগড়ার জল প্রায়শই মারপিট পর্যন্ত গড়িয়ে যেত। তনিশা বললেন, ‘‘কাজল আমার থেকে কেবল বয়সে বড় নয়, শারীরিক ভাবেও বড়। ফলে মায়ের আশঙ্কা ছিল, মারপিট করতে করতে কাজল না এক দিন আমায় মেরেই ফেলে! সত্যি সত্যিই মা ভয় পেতেন। কারণ, ছোটবেলায় কাজলের রাগ ছিল ভয়ঙ্কর। আর এই আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেতেই মা একটি নিয়ম তৈরি করেছিলেন।’’
আরও পড়ুন:
দুই সন্তানের ধুন্ধুমারের মধ্যেই অজান্তে দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য অভিনেত্রী তনুজা বুদ্ধি করে কৌশল বার করেছিলেন। এক দিন দুই মেয়ের এমনই মারপিটের পর্ব চলছে, তনুজা তাঁদের মাঝে চলে আসেন। তাতেও লাগাম টানা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তনুজার গায়ের উপর দিয়েই কাজল-তনিশা মারপিট করতে থাকেন। তেমন সময়ে তনুজা বলে ওঠেন, ‘‘তোমরা ঝগড়া করতে পারবে কেবল একটি শর্তে। যা-ই হয়ে যাক না কেন, একে অপরকে ছোঁবে না একেবারে।’’ তনিশার কথায়, ‘‘এখন আমি বুঝি, মায়ের এই কৌশল বেশ কার্যকর ছিল। এর ফলে আমার আর কাজলের বোঝাপড়া আগের তুলনায় ভাল হল। কারণ যখনই দুই ভাই-বোন বা দুই বোন অথবা দুই ভাইয়ের ঝগড়ার মাঝে অভিভাবকেরা চলে আসেন, সেখানে অবধারিত ভাবে কোনও এক সন্তানের পক্ষে দাঁড়ান তাঁরা। অন্য সন্তানের মনে হয়, আমি একা, সবাই অন্য দিকে। তার চেয়ে এই পদ্ধতিতে কারও মনে আঘাতও পৌঁছোল না, আবার ঝগড়ার মাত্রাও কমল।’’
তনুজার অভিভাবকত্বের এই নজির শিখে নেওয়া উচিত দুই বা তার বেশি সন্তানের বাবা-মায়েদের। কী ভাবে সন্তানদের বিবাদ থামানো উচিত, কী ভাবে কাউকে আঘাত না দিয়ে শান্তি আনা যায়, তার কার্যকর উপায় শেখা যায় তনুজার কাছ থেকেই।